মনে পড়ছে/অমিত কুমার দে
মনে পড়ছে
এক 'কালবেলা' যিনি লিখতে পারেন, তার আর খুব বেশি কিছু না লিখলেও কিছুই যায় আসে না। তার আগের 'উত্তরাধিকার' যদি এসে মিশে থাকে সেই নির্মাণে।
হঠাৎ করেই তাঁর চলে যাবার খবরে মূহ্যমান হয়ে রয়েছি।
ছোটবেলায় এই দুটি উপন্যাস এমন আচ্ছন্ন করেছিল যে, তাঁর স্বর্গছেঁড়ার কাছাকাছি থাকব সেই সংকল্প নিয়ে ফেলেছিলাম। এবং এখনো তাঁর ছোটবেলার ঠিকানা, আমার প্রতিদিনের সঙ্গে মেশা।
তিনি স্কটিশে পড়তেন জেনে নিজেও তাঁর পথ ধরে অনার্স পড়তে স্কটিশেই ভর্তি হয়েছিলাম। পারিবারিক ঝড়ে কলকাতায় থাকা হয়নি। তবু এক কিশোর একদা তাঁর মতোই স্কটিশে পড়তে পড়তে একটা "দৌড়" লিখে ফেলবে ভেবেছিল তো! একজন সার্থক লেখকের এটাই কত বড় প্রাপ্তি!
আমি ডুয়ার্সের এক স্কুলে সদ্য হেডমাস্টার হয়ে যোগ দিয়েছি। সেদিন বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্টের জরুরি মিটিং চলছে। হঠাৎ একজন এসে বললেন, "একটু বাইরে মাঠের দিকে আসবেন? একজন আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।" ভাবলাম কোনো বুক সেলার, বিরক্ত হলাম মনে মনে। বললাম "বাইরে কেন? ভেতরে আসতে বলুন!"
একটু জোরাজোরি করায় মাঠের দিকে বেরিয়ে দেখলাম দু তিনটি গাড়ি দাঁড়ানো। তার একটির জানালা খোলা। একজন ধোপদুরস্ত মানুষ জোড় হাতে বললেন - "অমিত, ভালো আছেন? আপনার একটা accident হয়েছিল শুনেছিলাম। তাই দেখতে চলে এলাম।"
চিনতে পারিনি তাৎক্ষণিক। উনিই আমার হতভম্ব মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন - "আমিও টুকটাক লেখালেখি করি। আমার নাম সমরেশ মজুমদার!"
দৌড়ে গিয়ে পা জড়িয়ে ধরেছিলাম। বলেছিলাম - "এই মাটিতে আপনার পা পড়ুক। তীর্থ হয়ে উঠবে আমাদের শিক্ষাঙ্গন।"
সেদিন আমার স্কুলে কতটা সময় কাটিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
আমার মতো সামান্য একজন অক্ষরকর্মীর সঙ্গে দেখা করে গেলেন একজন মহীরুহ!
মনে পড়ছে, খুব মনে পড়ছে ....
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴