১লা বোশেখের ঘটনাটা এখনও চোখে ভাসেনীতীশ বসু
১লা বোশেখের ঘটনাটা এখনও চোখে ভাসে
নীতীশ বসু
আমি তখন ধূপগুড়ি বড় মামার বাড়িতে থেকে স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ি। ১লা বোশেখের ঘটনা, আমার আজও মনে পড়লে মৃত্যু ভয়ে বুকটা কেঁপে ওঠে।
১লা বোশেখ, বাড়িতে বড়মামী শুভ নববর্ষে কচি পাঠার মাংস, পোলাও, মুগের ডাল আর বেশান দিয়ে বেগুন ভাজা ইত্যাদি আয়োজন করছে। আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। এদিকে হয়েছে কি বাবুদা ( প্রদীপ কুমার দাম), মুরারীদা ( মুরারীমোহন সরকার ), স্কুল ইন্সপেক্টরের ছেলে আমার বয়েসি ( নামটা স্মরণে আসছে না ) এবং আমি দুপুরে বামনী নদীতে স্নান করতে গেছি। নদীর পারে দাঁড়িয়ে আমি আর ওই ছেলেটি নদীতে ঝাঁপ দিলাম। বাবুদা আর মুরারীদা ডাঙায় বসে গল্প করছিল। এদিকে আমরা নদীর জলে ডুবে গেছি , জল খাচ্ছি আর মনে মনে ভাবছি এই ভাবেই জলে ডুবে মানুষ মারা যায়। ইস্ আমি আর কচি পাঁঠার মাংস, পোলাও এসব আর খেতে পারব না । মাযের সঙ্গেও আর দেখা হবে না।
বাড়িতে আসার পর রাতে শুনলাম বাবুদার মুখে ওরা নাকি ডাঙায় বসে গল্প করতে করতে হঠাৎই ওদের চোখে পড়েছিল আমরা জলে ডুবে গেছি। বাবুদা প্রথমে ভেবেছিল আমরা জলে খেলছি। মুরারীদা বাবুদাকে বলেছিল, না রে ওরা জলে ডুবে গেছে, জল খাচ্ছে শীগিরি নাম নদীতে থেকে ওদের তুলে আনতে হবে। ওরা তখন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে দুজন দুজনের চুলের মুঠি ধরে ডাঙায় তুলে আমাদের উপুড় করে শুইয়ে পিঠে চাপ দিয়ে মুখ দিয়ে পেট থেকে জল বের করতে লাগল । আমরা দুজনই প্রায় অজ্ঞানের মতো। সে সময় বাবুদা আর মুরারিদা আমাদের ধূপগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্স আমাদের পেট থেকে আরও জল বের করে দিয়ে দুজনকেই ওষুধ দিয়ে বলল এখন বাড়িতে নিয়ে যান।
আমদের বাড়ি নিয়ে এল। কুয়োর পারে দাঁড় করিয়ে আমাকে আবার চান করিয়ে দিল বড়মামী। সেদিন দুপুরে আমাকে খেতে দিল না। এরপর আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলল , রাতে তোকে খেতে দেব। আমি আর কোন কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাতে অবশ্যি আমাকে খেতে দিয়েছিল। কিন্তু আমার এখনও সে দিনের কথা মনে পড়লে ভয়ে শিউরে উঠি, মানুষ তাহলে জলে ডুবে এভাবেই মরে। সে দিন মৃত্যুর দুয়ার থেকে যে ভাবে ফিরে এসেছিলাম সেকথা আজও স্মরণীয় হয়ে আছে ।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴