হোলি : সেকাল থেকে একাল/বেলা দে
হোলি : সেকাল থেকে একাল
বেলা দে
যুগ এগিয়েছে অনেকটা। হয়েছে সেকাল থেকে একাল, আমাদের বাল্য-কৈশোরের ফাগুন খোলনলচে পালটে বৃন্দাবনি প্রেম হয়েছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে। রাধাকৃষ্ণ সেজে বাড়ি বাড়ি নেচে যুগলমিলন দেখিয়ে দু আনা চার আনা জোগাড় করে বালখিল্য আচরণে সবে মিলে চানাচুর মুড়ি খাওয়া, সে দিন উবে গেছে। এদিনে ছোটরাও অনেক বড়।
আমরা জেনেছি ফাগুন প্রচন্ডরকম এলোমেলো ঝোড়ো হাওয়া, পাড়ায় শিমুল গাছের আধিক্যে কোচড়ভরা শিমুল ফুল তুলে রাধাকৃষ্ণর যুগল মূর্তি সাজানো, রঙিন হয়ে থাকা কৃষ্ণচুড়া গাছের ফুল দুই বিনুনির মাথায় লাগিয়ে রংচঙে হয়ে জল আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখা আর বিদ্যাদেবীর আবাহন দিনে পলাশফুল নিয়ে মারকাট, হুল্লোড়। এদিনের মতন নিত্যকার বাজার ব্যবস্থা ছিল না, গ্রামের পড়ুয়ারা পরিচিত কারও বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে এনেছে। এখন তো পয়সা ফেললে সবই মেলে।
শৈশব থেকে আর এক ধাপ এগিয়ে হোলির বসন্ত উপভোগ করেছি দলবেঁধে দাদাদের হাতে বানানো বাঁশের পিচকারি আর বালতিভরা রঙ গুলিয়ে রাস্তায় হেঁটে যাওয়া লোকের গায়ে ছিটিয়ে আনন্দ, সেও আবার মানুষটির মুড বুঝে সবাইকে সাহস পেতাম না, বড়রা যাদের বলত মদেশিয়া অর্থাৎ চা বাগিচা কর্মীরা আমাদের রাস্তায় যাতায়াত করেছে কারণ কাদম্বিনী, কুচবিহার চা বাগান ফালাকাটার শহরের খুব কাছে হাঁটাপথ, লাউয়ের মাথা কেটে সাদা অংশে গাধা লিখে কালির ছাপ দিয়েছি নিরীহ শুক্রা মুন্ডা, চামু মুর্মুর শরীরে জড়ানো সাদা ধুতির উপর। কিছু বলত না ওরা একটু মুচকি হেসে দিত। সেইসব দিনরাত্রি কোথায় হারিয়ে গেছে বিশ্বায়নের জঞ্জালে। মানবিকতার বদলে ঢুকেছে ইগোবাজ, একে অপরকে টেক্কা দেওয়া ফন্দিবাজ, মনের মতো সঙ্গী পেলে প্রহসনবাজি, মুরোদ জাহির করার ওস্তাদি।
ডুয়ার্সের সহজ সরল পল্লিযাপনে হোলিউৎসব তখন অন্যরকম। হোলির আগেরদিন বুড়িঘর অথবা ন্যাড়াঘর পোড়ানোয় কি উৎসাহ, মনে পড়ে তার ভিতর আলুপোড়া দিয়ে মেখে খাওয়া।
ভালো করে তো বুঝিনি তখন বুড়ি হল হোলিকা নামের এক অশুভশক্তির দহন।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴