হেমন্ত-তুমি-আমি/পারমিতা ভট্টাচার্য
হেমন্ত-তুমি-আমি
পারমিতা ভট্টাচার্য
এক
বিরহ, বিষাদ, এই কথাগুলো বন্ধ করো
হেমন্ত এসেছে,
একটা একটা করে হলুদ পাতা খসে পড়ছে
তোমার-আমার বিরহ-বিষাদের সমাধির ওপর
তোমার মনে নেই?
আমাদের কাছে এখন শুধু উন্মত্ত চেরিব্লসম
আর রবিঠাকুরের গীতবিতান!
দুই
জানলা খুলে দু’দণ্ড কাছে এসে বসো
তোমাকে দেখি একটু ভালো করে।
কতদিন আসোনি! অনেক দিন!
নক্ষত্রদের অবস্থান বদলে গিয়েছে
আকাশটাও ছোট হয়ে গিয়েছে -
তুমি তো এগুলো কিছুই জানো না।
চাঁপাফুলের গাছটাও শুকিয়ে গেল এই হেমন্তেই
তার নাকি মনখারাপ অসুখ হয়েছিল।
আরেকটু কাছে এসে বসো,
তোমার জন্য এখনও ঠোঁটে উষ্ণতা রেখে দিয়েছি!
তিন
আজ তোমার ফেরার বড্ড তাড়া ছিল
এত বার বললাম কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চমীর একফালি
চাঁদ উঠেছে, আরেকটু থাকো
একটু পরেই জ্যোৎস্না রসে টইটুম্বুর নিশিপদ্ম
তোমার মুখে ঢেলে দেবে অমৃত ...
আজ তোমার ফেরার বড্ড তাড়া ছিল
চার
ভালোবাসা নাকি আলোর ঠিকানা - তুমিই তো বলো
আমি তো দেখি চারদিকে বালি আর বালি
মাঝে মাঝে ক্যাকটাসের ঝোপ আর মরুদ্যানের নীল
পাঁচ
গঙ্গায় জোয়ার এসেছে দেখলেই
মনে তোমার চোখ দু’টি ভেসে ওঠে
কত কচুরিপানা, ভাঙা কাঠামো,
পচা ফুল বেলপাতা সব ভেসে আসে
অথচ তোমার চোখ! কত সযত্নে সব কিছুকে এড়িয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে লাল, নীল, হলুদ
পালতোলা নৌকো দেখে!
ছয়
কোয়ার্টারের স্থলপদ্ম গাছটির
বড্ড অভিমান হয়েছিল।
অভিমানে যমুনা যেমন কালো হয়েছে
সেভাবেই গাছটি অন্ধকারে হারিয়ে গেল
অনেক বিজ্ঞাপন দিয়েছি, খুঁজে আর পাইনি
এভাবেই তুমি-আমি হারিয়ে ফেলেছি
অনেক স্থলপদ্ম গাছকে ...
সাত
দশমীর ঘাটের ছাতিম গাছটিই ছিল
তোমার প্রথম প্রেমিকা
কুড়ি বছর পর সেই ছাতিম গাছটি হল
আমার প্রথম প্রেমিক
আসলে ওই ছাতিম গাছটির নাম
হেমন্ত কাল!
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴