হে সখা মম/মৌসুমী রায়
হে সখা মম
মৌসুমী রায়
হে বন্ধু হে সখা.....আমার রবি ঠাকুর।
"হৃদয়ে হৃদয় আসি মিলে যায় যেথা/হে বন্ধু আমার/সে পুণ্য তীর্থের যিনি জাগ্রত দেবতা/তারে নমস্কার "
সেই কবে কোনো এক ২৫ শে বৈশাখ ছুঁয়ে "সহজ পাঠ" "সঞ্চয়িতা" তারপর "গীতবিতানের" হাত ধরে তোমাকে হৃদয়ে ধারণ করেছি রবিঠাকুর। "সহজ পাঠের" লেখাগুলো পড়ে প্রথম তোমাকে আমার খুব কাছের বলে মনে হয়েছিল জানো। ছোটবেলাগুলো তোমার গানে কবিতায় নৃত্যনাট্যে কত আনন্দে কত অনুষ্ঠান কত রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করেছি। তারপর একটু পরিণত বয়সে যখন "গীতবিতান" কে বড় নিবিড় করে জড়িয়ে ধরলাম তখন ছোটোবেলার গাওয়া গানগুলো অন্য ভাবে অন্য রূপে এসে ধরা দিতে থাকল আমার কাছে, অন্য এক জীবন দর্শন অন্য এক বোধের জন্ম দিয়ে গেল। তোমাকে জানা বোঝা একজীবনে আমার ফুরোবে না। আমার আনন্দে, বেদনায়, সুখে, দুঃখে, ভালোবাসায় "শ্রাবণের ধারার" মতো তোমার সুরের ধারা আমার হৃদয়কে আমার সমস্ত সত্বাকে স্নিগ্ধ করে তোলে।
তোমার জীবন থেকেই আমার শেখা দুঃখকে আড়াল করে রেখে আনন্দকে কীভাবে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হয়। তুমিই শিখিয়েছ "আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে/তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে...." আমার বাবা যেদিন হঠাৎ করেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন, আমি তখন অনেক দূরের শহরে....অসহ্য কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে....হঠাৎই মনে হল কে যেন কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠল ".....ফুরায় যা তা ফুরায় শুধু চোখে, অন্ধকারের পেরিয়ে দেওয়াল, যায় চলে আলোকে"।
আমি সুখের মাঝে যেমন তোমায় পেয়েছি, দুঃখের সময় ও তোমায় পেয়েছি অনেক বেশি। তোমার গান আমার কাছে কখনও কখনও মন্ত্র হয়েও ধরা দেয়। "....তোমার যা আছে তা তোমার আছে........তোমার অন্তরে যে শক্তি আছে তারই আদেশ পেলেছ...." -এই মন্ত্র আমাকে আজও উজ্জীবিত করে তোলে। আমি প্রার্থনা করি "...তুমি যদি দুখ পরে রাখো কর স্নেহ ভরে, তুমি যদি সুখ হতে দম্ভ করহ দূর/তুমি দেহ মোরে কথা, তুমি দেহ মোরে সুর....."। তোমার সেই সুর তোমার কথা আজও আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে। তাই সংসারের হাজার কাজেও আমার মন সবসময়ই গেয়ে ওঠে ".....হে সখা মম হৃদয়ে রহ/সংসারের সব কাজে ধ্যানে জ্ঞানে হৃদয়ে রহ..।"
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴