হৃদয়ে গাঁথি/রুমি নাহা মজুমদার
হৃদয়ে গাঁথি
রুমি নাহা মজুমদার
শ্রীচরণকমলযুগলেষু
রবি ঠাকুর গো! সেই কবে থেকে তোমার পুজো করে এসেছি। পঁচিশে বৈশাখ দিনটি এগিয়ে এলেই আকাশে আকাশে নীল রং আর গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়ার লাল পাপড়ি মেলা। সেই কৃষ্ণচূড়ার ফুল তোমার পায়ে না দিলে যেন পঁচিশে বৈশাখ পূর্ণতা পায় না। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই কি করে যে তোমাকে নিজের করে ভেবেছিলাম জানি না। কেউ কি শিখিয়েছিল আমায়? তাও তো মনে পড়ে না। নাকি এ জন্মান্তরের টান? সকাল থেকে সাজি ভরে তুলতাম সাদা ফুল, টগর ফুল। দাদাদের কাছে বায়না করতাম মাঠের পারে কৃষ্ণচূড়া ফুল পেড়ে দেবার জন্য। গাছগুলো তো অনেক উপরে, নাগাল যে পাইনা! এরপর শুরু হত স্নান করে মালা গাঁথার পরব। সেসব যেমন তোমার গলায় পরিয়ে দেবার জন্য , আর তার কিছু মালা নিজেদের হাতে গলায় নাচের জন্য। দুপুরের পর থেকেই পাড়ার সব কচিকাঁচা সাথী দের নিয়ে জড়ো হতাম টুম্পাদের বাড়ির বারান্দায়। বাড়ি থেকে সাদা কাপড় নিয়ে ঘেরা দিয়ে স্টেজ বানাতাম। তারপর প্রত্যেকে যার যার মায়ের লাল পার শাড়ি ,হাতে গলায় টগর ফুলের মালা পড়ে নিজেরাই নাচ, গান, কবিতা ইত্যাদি। দর্শক সব আশেপাশের বাড়ির বড়রা । আর হ্যাঁ, পায়ে আলতাও পড়তাম আর পায়ের উপর দিতাম লাল ছোটো গোল দাগ। বারান্দার কোণে চেয়ারে সাদা কাপড়ের উপর কৃষ্ণচূড়া ফুল পায়ে নিয়ে তুমি আমাদের এসব কারসাজি দেখে মনে মনে খুব হাসতে নিশ্চয়ই!
আজ আমার শরীরটা ভালো নেই। বয়স হয়েছে তো! অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো মাঝে মাঝে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। পঞ্চাশোর্ধ আমি ভেতর ঘরের আবেগকে তাই সংবরণ করি। এমনি করে আমার মত কত পঞ্চাশ পেরিয়েছে কতজনের, কত পেরোবে। এখন আর কেউ বারান্দায় নাচে না। এখন বড় বড় মঞ্চ, বড় বড় অর্গানাইজার । আমি অবশ্য ছোটবেলায় কোনও মঞ্চে নাচ করিনি। কোনদিন ডাকই পাইনি হয়তো পারিনা বলে। তবে স্কুলের অনুষ্ঠানের মঞ্চে নাচ করেছি অনেক। দিদিমণিরা শেখাতেন সেই নাচ। তবে বারান্দার সেই অনুষ্ঠান তারও আগে থেকে। সে যাক্ গে। ভেতর ঘরের ভালোবাসাটাই আসল কথা।
তুমি তো জানো কিশোর বেলায় আমার বিজ্ঞান বইয়ের নীচে থাকত তোমার রচনাবলী। আর তার থেকে ভালো ভালো কবিতা গানগুলো আমার ডাইরিতে তুলে রাখতাম। এখনো তুলে রাখি, হৃদয়ে গাঁথি। প্রতিটি ক্ষণে তো তুমি সদাই আছ।
তবে ২৫ শে বৈশাখ যেন বিশেষ উদযাপন। কত বছর এই দিন ছিলাম শিলাইদহে । আজ আমি ঘরে বসে আপন মনে গাইব গান শুধু তোমার জন্য।
পরজনমে যদি মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করি তোমার গান যেন কন্ঠে ধারণ করতে পারি এই আশিষ দিও। আমার প্রণাম নিও।
ইতি ---
তোমার একান্ত অনুগত....
রুমি নাহা মজুমদার
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴