সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

হৃত রাজ্য/অলক পর্না সেনগুপ্ত ব্যানার্জী

হৃত রাজ্য
অলক পর্না সেনগুপ্ত ব্যানার্জী

 একটা মাকড়সার জালের মত মাথার মধ্যে স্মৃতি গুলো জড়িয়ে যায় নৃপতির, আলাদা করতে পারে না ওর অতীত আর বর্তমান কে। মুখের সামনে মুখ এনে কে যেন কি জিজ্ঞেস করে কখনও কখনও চেনা চেনা লাগে কখনও একেবারেই অচেনা। চোখ কুঁচকে তাকিয়ে থাকে নৃপতি। দেখতে দেখতে সামনের মানুষ টাকে পার করে আরো দূরে দৃষ্টি চলে যায় কাঁঠাল গাছটার ডালে কতগুলো কাক পাকা কাঁঠাল ঠুকরে খাচ্ছে। নৃপতি ও কাঁঠাল খেতে ভালবাসত খুব এখন এরা দেয় না,  পায়খানা পেচ্ছাপের হুঁশ নেই ওর বুঝতে পারে না, অস্বস্তি হলে শরীর ছেড়ে দেয় একেবারে, যেখানে সেখানে করে ফেলে তাই  এখন নানা বাধা নিষেধ।
              এককালে চা  বাগানে কেরানির চাকরি করা নৃপতি সমাদ্দার। পাঁচিল ঘেরা চায়ের ফ্যাক্টরি, অফিস আর ছুটির পর দুকামরার ছোট্ট কোয়ার্টার এই ছিল নৃপতির নিজস্ব জগত। হঠাৎ বাগান বন্ধ হয়ে গেল। কত মিটিং, মিছিল, ধর্না কোনো ভাবেই মালিকপক্ষের সাথে রফা হল না। দেখতে দেখতে রিটায়ারমেন্টের সময় পেরিয়ে গেল। কোনো টাকাপয়সা কিছুই পাওয়া গেল না। শান্ত নৃপতি সমাদ্দারআস্তে আস্তে আরও চুপচাপ জুবুথুবু হয়ে গেল। ছেলে ততদিনে একটা কাজ জুটিয়ে নিয়েছে। বাগানের ভাঙাচোরা কোয়ার্টার দিনে দিনে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে আইবুড়ো মেয়েকে নিয়ে সেখানে আর থাকাও চলে না। তাই শহরতলির কাছে এক টুকরো জমি কেনা ছিল বহুবছর আগে সেখানেই কোনো রকম করে একটা ছাপড়া ঘর করে এসে উঠলেন নৃপতি সমাদ্দার তার পরিবার নিয়ে।  ততদিনে সংসারের রাশ ছেলের হাতে এবং সংসার নামক রাজ্যে তিনি  সিংহাসনচ্যূত। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্ৰ্যাচুইটির জন্য হন্যে হয়ে শুকতলা ক্ষয়ে যাচ্ছিল শুধু। মেয়ে এক উঠতি নেতাকে বিয়ে করে বাবা মাকে তার বিয়ের চিন্তা মুক্ত করে গেছে। হতাশা এক ঘুণপোকা মতো কুড়ে কুড়ে খেয়ে ফেলেছিল নৃপতিকে, কেউ তার খোঁজ রাখেনি। সাধ-সাধ্য-চেষ্টা এই তিনের টানাটানি চলে যেখানে দিনভর সেখানে এত খোঁজ নেওয়া হয়ে ওঠে না। 
          রোজ সকালে বারান্দার এই চেয়ার টায় বসে থাকে নৃপতি, একা একাই। সবাই ব্যস্ত, কত লোক যায় আসে।‌কেউ কেউ কুশল জিজ্ঞেস করলে হাসি হাসি মুখে ঘাড় কাত করে। কোনো কোনো দিন হঠাৎ চিনে ফেলেন কাউকে। - বুড়ো না? কেমন আছ ?
-“ভাল কাকাবাবু আপনি ?”
-“হ্যাঁ ভাল”  আচ্ছা বুড়ো আমাকে দাদা ডাকত না? এখন কাকাবাবু ডাকে কেন? ভাবতে ভাবতে প্রশ্নটা করে বসে জ্যোৎস্নাকে। জ্যোৎস্না, নৃপতি সমাদ্দারের বৌ।‌ কিন্তু বৌ ভাবলেই তো সতের বছরের লাজুক মিষ্টি একটা মেয়ের মুখ ভেসে ওঠে এমন খিটখিটে বদমেজাজি মেয়েমানুষ টাকে বৌ ভাবতে ইচ্ছে না করলেও… দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নৃপতি। কোনো স্মৃতিই ওর কাছে স্পষ্ট না আবার কখনও কখনও ক্ষনিকের জন্য ভীষন স্পষ্ট। ঝুরঝুরে নোনা ধরা চা বাগানের কোয়ার্টার তার সামনে দিয়ে সরু পায়ে চলা পথ, একটু যেতেই ফ্যাক্টরির পাঁচিল, চা পাতার গন্ধ।  এখনও মাঝে মাঝে সেই গন্ধটা পায় নৃপতি। ওর মনে হয় কাছেই আছে ফ্যাক্টরিটা, ইচ্ছে করে একটু এগিয়ে দেখতে কিন্তু কেউ ওকে বাড়ি থেকে বের হতেই দেয় না, এখন তো আবার একখানা তালা মেরে রাখে। ওই… একদিন একটু বেরিয়ে গেছিল, তাই!! রাগ হয়ে যায় নৃপতির মাঝে মাঝে চিৎকার করে, সামনে যা পায় সব ভেঙেচুরে ফেলতে ইচ্ছে করে!!! 
            সারাদিন বারান্দার চেয়ারে বসে সামনের কাঁঠাল গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকে  নৃপতি। পাখি গুলো এসে বসে, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে, ভাব ও। একটা বড় মাকড়সা বিশাল এক জাল বানিয়ে অপেক্ষায় থাকে সারাদিন, টুপ্ করে খসে পড়ে একটা মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া পাকা কাঁঠাল পাতা, নৃপতি দেখে যায়… হঠাৎ কচিৎ কখনও কাজ থেকে ফুরসত পেলে জ্যোৎস্না এসে দাঁড়ায় তেল হলুদের ছোপ লাগা রংচটা শাড়িতে যেদিন চিনতে পারে, সেদিন ভাবে কী যেন একটা বলার ছিল, কোথায় যেন যাওয়ার ছিল জ্যোৎস্নার সাথে মনে পড়ে না কিছুই মনে পড়ে না… 
-“আচ্ছা জ্যোৎস্না, তোমার সাথে কোথায় যেন যাওয়ার কথা ছিল যেন!!”
-“ চিনেছ আজ!! কি জানি বাপু কোথায় যাওয়ার ছিল, এখন তো ছেলের সংসারে খেটে খেটে মরছি!! একখানা মেয়েই তো বেশ ছিল তিনি আবার পোয়াতি হয়ে বাপের বাড়ি গিয়ে বসে আছেন”
-“পোয়াতি?? কে? কার বাচ্চা হবে?”
-“কার আর তোমার বৌমার, এখন টুকির ইস্কুলের ভাত ঘরের এত কাজ, তার ওপর তোমার জ্বালা তো আছেই!!”
-“ও”। ঘোলাটে চোখে একবার জ্যোৎস্নার দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয় নৃপতি, মনে মনে ভাবতে থাকে বৌমার মুখটা যেন কেমন?? “আচ্ছা আমাকে নিয়ে কেন জ্বালা?”
-“ কেন জ্বালা!!! মাঝে মাঝে তো ভূতে পায় তোমাকে চেঁচামেচি, ভাঙচুর কর, আচ্ছা তুমি তো বরাবর শান্ত ছিলে… সবই আমার কপাল!!...ওই যাঃ!!”
কড়াইয়ের পোড়া লেগে যাওয়ার গন্ধে রান্নাঘরে ছোটে জ্যোৎস্না।
                 একটা নতুন দিন, নৃপতির কাছে নতুন কিছু নয় অবশ্য!! গতকাল রাতের বৃষ্টির তোড়ে মাকড়সার জালটা ছিঁড়েখুঁড়ে গেছে নৃপতি তাকিয়ে মাকড়সা টাকে খোঁজে সকালের বরাদ্দ দুধমুড়ির বাটি এখনও কেউ হাতে ধরিয়ে গেল না সে খেয়াল থাকে না। 
হঠাৎ কচি গলার আর্ত চিৎকার – ঠাম্মা!!!!!!  অত বোঝে না নৃপতি, কে যেন গেটের তালা খুলে ছুটে বেরিয়ে যায়, একটু পড়েই অনেক গুলো লোক কাকে যেন চ্যাংদোলা করে নিয়ে গেল চোখ কুঁচকে একটু দেখে নৃপতি লাল সাদা চুড়ি পড়া হাতটা ওর খুব চেনা…. কোথায় দেখেছে যেন!!!!
-“দাদু…ঠাম্মার কী যেন হয়েছে, অজ্ঞান হয়ে গেছে। সবাই হসপিটালে নিয়ে গেছে” ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে এগার বছরের টুকি!! অবাক চোখে নাতনির কথা বোঝার চেষ্টা করে নৃপতি!! কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে ওর ঘরে চলে যাওয়া দেখে। কাঁঠাল গাছটার নিচে একটা পাখির বাসা ভেঙে পড়ে আছে ডিমের খোসা গুলো ছড়ানো এদিক ওদিক, পায়ে পায়ে নেমে কাছে গিয়ে ঝুঁকে দেখে, আঁশটে একটা গন্ধ!! মাকড়সা টা খুব ব্যস্ত হয়ে নিজের ঘর বানিয়ে যাচ্ছে আবার!! 
আজ গেটটা খোলা, আবার সেই কাঁচা চা পাতার গন্ধ নাকে আসে নৃপতির, ঘোলাটে চোখে গেটটা খুলে লাঠিটা ঠুক ঠুক করে সরু রাস্তাটা ধরে এগিয়ে যায় । এতক্ষণে শাঁখা পলা পড়া ওই হাতটা চিনতে পারে নৃপতি। কি হল জ্যোৎস্নার কে জানে!! যাকগে আজ তো ফ্যাক্টরি টা ও খুঁজে পাবেই!! আর বড়সাহেব কে একটু বুঝিয়ে বললেই… তারপর আর কোনো চিন্তা নেই সব ঠিক হয়ে যাবে!! পেছনের রাস্তা বিলকুল ভুলে আবছা দৃষ্টি, জড়ানো স্মৃতি আর অশক্ত পায়ে হেঁটে যায় নৃপতি সমাদ্দার।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri