হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা-২/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা/২
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
হারিয়ে যাওয়া, তো একটা পথের নাম
বাতাসের আঁচল যে পথে ভারী হয়ে ওঠে।
নিজের সাথে কথা বলাই বোধ করি কবিতা। নির্জন গ্রীষ্মের দুপুরে চেনা চৈত্রভূমিতে একটু অবকাশ আজ একেবারেই হাতের মুঠোয়। সুজলা, সুফলা জন্মভূমির প্রতিটি শস্যদানা আমাকে শক্তি জুগিয়েছে। আমাকে মানুষ করে তুলছে, সমৃদ্ধ করেছে।
আমাদের ছেলেবেলাটা কেটেছে এক অখ্যাত গ্রামে। কখনোই এই গ্রামকে গন্ডগ্রাম বা অজ পাড়াগাঁ বলবার মতো দু:সাহস দেখাতে পারব না। সেই সবুজ উপনিবেশের মধ্যে তাল, নারকেল, সুপুরি, বেল গাছের মধ্যে ছিল "স্নেহনীড়"। সেখানেই আমার বেড়ে ওঠা। পুকুরের পাড়ে ছিল বাঁশের বন। পুকুরের অন্য পাড়ে ছিল মস্ত এক বাবলা গাছ। বাড়ির উত্তর দিকে যতদূর দিগন্ত রেখা বরাবর নজর যায় পুরোটাই সবুজ ধানের খেত। গম, পাট, আলু,ভুট্টা, ফুলকপি, বাঁধা কপি এবং নানারকম শাক সবজি দিয়ে ভরানো মাঠ। যেন মা লক্ষী তাঁর ঝাঁপি খুলে সবটাই সুন্দর করে সাজিয়ে বসে আছেন। মাঠের মাঝে গিয়ে দাঁড়ালে দূরে দিগন্ত রেখা। কলাসীমা,গাইঘাটা,চাঁদপাড়া, বনগাঁ হয়ে যশোর রোড বাংলাদেশের পেট্রাপোল সীমান্ত অবধি গিয়েছে। সেই রাস্তার ধারে শতাব্দী প্রাচীণ গাছেদের কালচে সবুজ বর্ণের বাহারী পাতার হাওয়া এসে গায়ে লাগত। সেচের কাজে ডিজেল পাম্পসেট থেকে ফসলে জল দেওয়া হত। মাতাল হাওয়ায় সেই গন্ধ ভেসে আসতো। আর বাস লরির পোড়া ডিজেলের গন্ধ যেন আকাশ পাতালের ব্যবধান। কখনো মাঠ থেকে সবুজ ছোলা, মটরশুঁটি, হলুদ রঙা গাজর, কখনো বা কাঁচা মুলো সরাসরি খেত থেকে তুলে পাম্পসেটের জলে ধুয়ে কামড় লাগাতাম।
বাড়ির সামনে দিয়ে পৌনে এক কিলোমিটার হাঁটা পথে গেলে বেড়গুম বাজার। আর তার আগেই আমাদের স্কুল। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় একদম পাশাপাশি দুই ভাইএর মতো সরল মুখে একরাশ হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখনও স্কুল আমার দ্বিতীয় বাড়ির ধারণা আমার মনে জন্ম নেয় নি। তখন স্কুল ছিল ভয়ের জায়গা। যে ছাত্র যে বিষয়ে কাঁচা,তার সেই বিষয়ের দূর্বলতা দূর না করে তার জন্য তাকে (গণিত, ইংরেজি ইত্যাদি) সেই বিষয়ের হোমওয়ার্ক না করার জন্য প্রেয়ার লাইনে বা বেঞ্চের ওপর কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হতো।
প্রাথমিক স্তরে অর্থাৎ নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয় একজন মানুষের জীবনে খুব বড়ো ভূমিকা পালন করে। সেই সময় আমাদের শিক্ষক ছিলেন কানাই মাস্টারমশাই গোপাল মাস্টার মশাই। মাস্টার মশাইরা তখনও স্যার হয়ে ওঠেননি। দিদিমণিদের মধ্যে সাবিত্রী দিদিমণি, বানী দিদিমণি এবং মঞ্জু দিদিমণি দের কথা বেশ মনে আছে। টিনের বাক্স ভর্তি বই তার মধ্যে একটা বসবার আসন থাকত।
গোপাল মাস্টার মশাই গানের টিউশানি করতেন। একবার আমাদের টিনের চাল দেওয়া বাড়িটায় এসে হারমনিয়াম বাজিয়ে গান গেয়েছিলেন। গানটা ছিল, "নয়ন সরসী কেন ভরেছে জলে, কত কি রয়েছে লেখা কাজলে কাজলে।" সেই দিনটা আজও মনে পড়ে।
এবার আসি "স্নেহনীড়"-এর সবুজ উঠোনের কথায়। সেখানে একদিকে কলতলায় ছিল বড়ো এক স্থলপদ্মের গাছ। সামনে ছিল কাঁচামিঠে আম গাছ। উঠোনের বাঁ দিকে বাতাবি লেবু ভর্তি কখনো তার ফুল ভরা নুইয়ে পড়া ডাল, তার পাশে ফজলি আম গাছের গা ঘেঁষে জামরুল গাছ এবং বাড়ির পিছনে কালী মন্দির এর সামনে দীর্ঘকায় বিলুতি কুলের গাছ। তার পিছনে বিশাল আকারের হিমসাগর আর লতাবোম্বাই আম গাছ। আর ছিল উঠোন ভর্তি গোলাপ,রঙ্গন, জবা, রজনী গন্ধা, বেলফুল ও তুলসী মঞ্চের চারপাশ দিয়ে বাস্তুতলা অবধি লাইন দিয়ে সাজানো রজনীগন্ধার উন্নত শির। সাম্প্রতিক কালে উঠোনে চার চারটে কাঁঠাল গাছ ও একটা ঝাকড়ানো কাগজী লেবুর গাছ। এবার বাড়িতে গিয়ে শুনলাম বাড়ির উঠোনের থেকেই প্রায় এগারো শো টাকার লেবু কিনে নিয়ে গেছে। চার দিকেই কাঁচাকলা, পাকা কলার গাছ।
ক্লাস ফাইভে ওঠার পরে হাই স্কুলে অর্থাৎ উচ্চ বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে চলে আসলাম। প্রতিদিনই এই স্কুল বাড়িটাকে বাইরে থেকে দেখতাম। ভিতরে এসে চটের আসনের পরিবর্তে কাঠের বেঞ্চ পেয়েছিলাম।
হঠাৎই মৃত হ্রদ জলোচ্ছ্বাসে ভরে গেল। নতুন বিদ্যালয় নতুন শিক্ষক শিক্ষিকা দের পেলাম। তাদের স্নেহের সে দানের কোনো প্রতিদানই দেওয়া সম্ভব বলে মনে হয় না। প্রধান শিক্ষক ছিলেন শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। খুব রাগী স্বভাবের কিন্তু স্নেহময় তার স্নেহ অনুভব করতে গেলে ভালো ছাত্র হতে হবে, এই সত্যিটা সেই বয়সেই বুঝতে পেরেছিলাম।
একজন সম্পূর্ণ ছাত্র হয়ে ওঠার পিছনে যাঁদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে, তাদের তালিকাটা নেহাৎই কোন অংশে কম নয়। পিছনে ফিরে তাকিয়ে অতীতের দরজায় কড়া নাড়লে সর্বপ্রথম যে স্মৃতি মনকে নাড়া দেয় তা হল ছাত্রজীবন।আমরা স্কুলের পিছনের পাড়ায় থাকতাম, তাই পিছন দিক থেকে স্কুলে প্রবেশ করতাম। কিন্তু যারা বেড়গুম বাজারে বাস স্ট্যান্ড হয়ে স্কুলে আসতো বা মাস্টার মশাই, দিদিমণি যাঁরা হাবড়া, অশোকনগর কিম্বা গোবরডাঙা, মছলন্দপুর হয়ে আসতেন তারা প্রবেশপথে দেখতেন প্রকান্ড খেলার মাঠ। আর তার উল্টো দিকে পর পর দুটো স্কুল বিল্ডিং। ডান হাতে প্রাথমিক বিদ্যালয় আর বাঁহাতে উচ্চ বিদ্যালয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গা ঘেঁষে তিনটে টিচার্স কোয়ার্টার। যার দুটো পরিত্যক্ত অবস্থায় এবং একটাতে থাকতেন সাবিত্রী দিদিমণি ও তাঁর স্বামী সত্যেন বাবু। বাইরে থেকে আসতেন বাণী দিদিমণি ও মঞ্জু দিদিমণি। এনারা ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষিকা। যেবার ক্লাস ফোর পাস করে ফাইভে অর্থাৎ পাশের বিল্ডিংয়ে হাই স্কুলে উঠলাম সেবার পেয়েছিলাম গোপাল মাস্টারমশাইকে। তিনি পড়াবার পাশাপাশি আমাদের গানও শেখাতেন। বাণী দি এবং মঞ্জু দিদিমণি যতটা স্নেহময়ী এবং মাতৃসুলভ ছিলেন, সাবিত্রী দিদিমণি ছিলেন তার উল্টো। সদাই তাঁর কথায় বার্তায় ছিল ঝাঁঝ। তাঁর কাঁচা কঞ্চির ভয় এবং তার কঞ্চির মৃদু আঘাত কারো পিঠে পড়েনি এমন ঘটনা বিরল। আমার একজন সহপাঠি তাঁর হাত থেকে কঞ্চি কেঁড়ে নিয়ে স্কুল ত্যাগ করেছিল। পরে তার সাথে আর কখনো স্কুলে দেখা হয়নি। সে তাঁর বাড়ির গরুর জন্য ঘাস কাটতো। ধান ক্ষেতে ছিপ ফেলে মাছ ধরত। পড়াশোনা না করবার আক্ষেপ কখনোই তাঁর মুখে শুনিনি। সে মাঝে মাঝে সাবিত্রী দিদিমণির কোয়ার্টারের পাশ দিয়ে ঘুরে বেড়াতো। কেন সাবিত্রী দিদিমণি সবাইকে মারতেন, বকতেন বা এত রাগী ছিলেন, এবিষয়ে আমার প্রতিবেশী এবং স্কুল ছুট সহপাঠী তার অনুভব ব্যক্ত করেছিল। তার সেই অনুভব কখনো অন্য পরিসরে লিখতে চেষ্টা করব।
তারুন্যে এবং কৈশোরে সব বন্ধুরা যখন আড্ডা মারতাম তখন কোনো কোনো বন্ধু অকপটে একথা স্বীকার করেছে যে প্রায় সবাই বাণী দি র পড়ানো বিষয়গুলো ভালো বুঝতে পারত। তাঁর পড়াবার ধরনই ছিল আলাদা। বেড়গুম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেই সব সোনালী অতীত আলো আঁধারীর কোলাজ আমাকে সম্পূর্ণ মানুষ করে গড়ে তুলেছে। সেই অখ্যাত গন্ডগ্রামের মানুষ হয়ে আমার বিশ্বাস সেই সব শ্রেণী কক্ষের মধ্যে যে দিদিমণি, মাষ্টারমশাইদের স্নেহ ভালোবাসা না পেলে হয়তো জীবনের চলার পথ এতটা মসৃণ হত না।
হাইস্কুলে এসে যে সকল শিক্ষক শিক্ষিকার সান্নিধ্যে এসেছিলাম তাঁরা ছিলেন প্রধানশিক্ষক শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সহ শিক্ষকরা ছিলেন কার্তিক মন্ডল (যিনি আমাদের শরীর শিক্ষা, পিটি,প্যারেড ও করাতেন), অমিত বসু, অলোকানন্দ হালদার, গৌর মোহন রায়, কণিকা ঘোষ ও দিবা ভট্টাচার্য।
দিবা ভট্টাচার্য সম্পর্কে আমার পিসি ছিলেন। আমাদের সংস্কৃত পড়াতেন। তার পড়ানোর ধরন একেবারেই আলাদা ছিল। খুব ভালো করে বোঝাতেন। সবাই দিদিমণি বললেও আমি দিবাপিসিই বলতাম। তার স্নেহ কখনোই মুখে প্রকাশ করতেন না। সেটা ভিতরে ভিতরে ফল্গুধারার মতো প্রবাহিত হতো সেটা প্রতি মুহূর্তে অনুভব করতাম। কখনো জ্বর হলে বা শরীর খারাপ হলে ইংরেজি দিদিমণি কণিকা ঘোষকে সাথে নিয়ে ফল, হরলিক্স নিয়ে বাড়িতে চলে আসতেন। তিনি পরীক্ষায় আমাকে মেপে নম্বর দিতেন। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষায় আমি সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলাম।
দিবা ভট্টাচার্য অত্যন্ত সুন্দরী ছিলেন। চশমার আড়ালে তার উজ্জ্বল বুদ্ধিদিপ্ত চোখ আমাদের সংস্কৃত শিক্ষার প্রতি উৎসাহ যোগাতো।আমার পিসি বলে নয়, তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্নেহময়ী। একজন আদর্শ শিক্ষিকার যাবতীয় গুণাবলী সব তার মধ্যে বিরাজমান ছিল। অত্যন্ত ভদ্র এবং রুচিসম্মত ছিল তাঁর ব্যাবহার। পড়ানোর পাশাপাশি তিনি ছাত্রীদের শেখাতেন আধুনিকতা। সেই যাপন শিক্ষা আজ ক'জন শিক্ষিকা দিয়ে থাকেন সে বিষয়ে আমার মনে প্রশ্ন আজও রয়ে গেছে।
খুবই সাধারণ ভাবে বিদ্যালয়ে আসতেন অমিত বসু। সব বিষয়েই ছিল তার অগাধ জ্ঞান। গোবরডাঙা যমুনা নদীর ব্রীজের আগেই থাকতেন। কোনো কোনো দিন সাইকেল নিয়েই স্কুলে চলে আসতেন। প্রথম প্রথম কথা বলতে ভয় হতো। তিনি নিজের জীবনের কথা কখনো কখনো বলতেন। আর সবাই যখন বাসে করে স্কুলে আসতেন, তিনি কেন সাইকেল নিয়ে আসছেন জানতে চেয়েছিলাম। তিনি বলতেন প্রদীপ জ্বালবার আগে সলতে পাকানো বড়ো জরুরি। সাইকেল নিয়ে আসবার পথে তিনি সলতে পাকাতেন। রীতিমতো হোম ওয়ার্ক করে আসতেন এবং গোটা রাস্তাটা তিনি ভাবতেন ক্লাসে কোন কোন বিষয় কিভাবে পড়াবেন।
অংকের মাষ্টারমশাই ছিলেন গৌর রায়। অত্যন্ত কড়া ভাষায় কথা বলতেন। তিনি গ্রামেই থাকতেন। তাঁকে আমরা কেউই খুশি করতে পারিনি। কোন সহপাঠী কখনো চল্লিশ নম্বরের বেশি পায়নি, যেখানে আমরা ইংরেজি, জীবনবিজ্ঞান, ভুগোল ইত্যাদি বিষয়ে নব্বই এর ঘরে নম্বর পেতাম।
যার কথা না বললে স্মৃতিচারণ অসম্পূর্ণ থাকবে তিনি কণিকা ঘোষ। সব থেকে উল্লেখযোগ্য ছিল তার ভাষার সৌন্দর্য্য। তিনি বকা দিলেও সেটা ছিল সুন্দর। উঁচু ক্লাসে উঠে সে আমাদের বন্ধুসুলভ আচরণ করতেন। তার পড়ানোর পদ্ধতি অনুসরণ করলে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন আসতে পারে। কলেজ জীবনে অধ্যাপক নিত্যানন্দ স্যার পড়াতেন মুদালিয়া কমিশণ। অমায়িক ছিল তার ব্যবহার। তার কথা কখনোই ভুলতে পারব না। কণিকাদি মুদালিয়া কমিশনে উল্লিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করতেন, সেকথা বড়ো হয়ে বুঝতে পেরেছি।
কর্মসুত্রে দিল্লিতে এবং উত্তর বঙ্গে থাকলেও বছরে দু'একবার গ্রামের বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি ও কোলকাতা বাংলা একাডেমিতে কবিতা পাঠ করতে যাই। প্রতিবারই স্কুলের সামনে দাঁড়াই, স্কুলের ছবি তুলি আর আমার মেজদা অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় ( যিনিও বেড়গুম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তনী) তাঁর সাথে স্কুলের খবরাখবর নিই।মেজদা অনেক মাষ্টারমশাই বা দিদিমণিদের সাথে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে কণিকা ঘোষ, যিনি বিদ্যালয়ের সব থেকে জনপ্রিয় শিক্ষিকা ছিলেন তাঁর বিষয়ে খোঁজ খবর রাখেন। মাষ্টারমশাইদের মধ্যে দু'এক জন চলে গেছেন না ফেরার দেশে। বাকি শিক্ষকরা সবাই নতুন, তাঁদের সবাই স্যার। সেই স্যারেদের ভিড়ে আমাদের প্রিয় মাষ্টারমশাইরা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
বিদ্যালয়ে তিনজন অশিক্ষক কর্মচারী ছিলেন। তারা হলেন, অজিত ঘোষ, গৌরাঙ্গ রায় এবং অন্নপূর্ণা দি । তাদের সবাই আমাদের খুবই ভালোবাসতেন। অজিত ঘোষ নিয়মিত মদ্যপান করতো। তার চোখ সব সময় লাল থাকত। তার কারনেই এই মদ শব্দটা কি এবং কতটা ক্ষতিকর তা শিখেছিলাম।
মাত্র হাতেগোনা নয় দশ জন শিক্ষক, শিক্ষিকা ছিলেন। আমরা ছাত্ররা সংখ্যায় ছিলাম সব শ্রেণী মিলিয়ে প্রায় চার 'শ। স্কুল ছিল জমজমাট, তখন মিড ডে মিল চালু ছিল না। এখন মিড ডে মিল প্রবর্তিত হয়েছে। কিন্তু অনেক স্কুলেরই গড় ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা পঞ্চাশ জন।
ঘটনাচক্রে এবং সৌভাগ্যক্রমে একবার আমার বিদ্যালয়ে ডেপুটেশন ভ্যাকান্সি তে শিক্ষকতা করবার সুযোগ এসেছিল। ঠিক তখনই আমার দিল্লি যাওয়ার ডাক আসে। বাড়িতে সকলের অমতেই সেই ডাকে সাড়া দিয়ে নতুন দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে প্রায় দুমাসের প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশ গ্রহণ করি। জীবন অন্যখাতে প্রবাহিত হয়। তা না হলে হয়তো এই জীবনস্মৃতি অন্য ভাবে লেখা হতো।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল প্রদীপ সরকার, স্বপন রায়, কল্পনা হালদার, চঞ্চল ঘোষ, প্রদীপ ঘোষ,পরিতোষ হাজরা,নাসিম বানু, নারায়ণ বিশ্বাস, শান্তি চ্যাটার্জি, গৌরী সরকার, জয়দেব বিশ্বাস, সান্ত্বনা ঘোষ তারা সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। প্রদীপ সরকার স্বপন রায় ও জয়দেব বিশ্বাস আজ না ফেরার দেশে।
আজও কোনো নির্জন দুপুরে একাকী পিছনে ফিরে তাকালে বেড়গুম উচ্চ বিদ্যালয়ের বড়ো খেলার মাঠটা বড়ো টানে। মাঠের পাশে একটা জলাভূমিতে ফুটে থাকত শালুক ফুল। স্কুলের পিছনের প্রকান্ড বাবলাগাছ হাওয়ায় দুলছে আর ঠিক তার পাশেই একটা কুল ভর্তি কুলগাছ, শুনতে পাই কেউ যেন ভারি মিষ্টি করে বলছে,
"Shall I repeat, or start again.,..? "
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴