সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
22-October,2023 - Sunday ✍️ By- অভিষিক্তা বসু 285

হঠাৎ দেখা/অভিষিক্তা বসু

হঠাৎ দেখা
অভিষিক্তা বসু

রবি ঠাকুরের 'হঠাৎ দেখা' কবিতা টা সেই কিশোরী বেলা থেকেই হৃদয়ের বাম অলিন্দে একটা আলাদা বাসা করেছিল সৃজার। আবাল্য এই কবিতা খানি ওর কল্পনার রূপ সাগরের ঢেউ এ কোকোনদের মতন জেগে থাকে। যেখানে মাঝে মাঝেই অকালের শিশির গুলো ওর হৃদয়ের শীতলতার স্পর্শে জমাট বাঁধে।
সৃজা ভীষণ প্রাণবন্ত ওর বাইরের আবরণে, কিন্তু মনে মনে ঠিক ততটাই অন্তর্মুখী। ওর মনের একমাত্র সহচরী ওর বাকহীন ডাইরির পাতা গুলি। যেখানে বছরের পর বছর প্রতিনিয়ত লেখা হতে থাকে ওর হৃদয়ের সমস্ত অব্যক্ত কথা। সৃজা তখন কৈশোরের গণ্ডি পেরিয়ে বয়সের রঙিন বসন্তের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে মুক্ত বিহঙ্গের মতন উড়ে চলেছে নিজের দুর্নিবার লক্ষ্যের দিকে। সদ্য ক্লাস নাইন এ পড়া মেয়েটি তখন ভীষণ ব্যস্ত স্কুল, টিউশন, গানের ক্লাস, আবৃত্তির ক্লাস নিয়ে। হঠাৎ একদিন ওর এই হিসেবী দুনিয়ায় ঝড় তোলে ওদের পাড়ায় কালীতলা র মেস বাড়িতে কলেজে পড়ার সুবাদে থাকতে আসা উজান এর মাউথ অর্গান এর মনোহারী সুর।
আনমনা হয়ে উঠে মাঝে মাঝেই গভীর রাতে রোজকার পড়ায় ব্যস্ত সৃজার মনের অবিনস্ত্য কপাট গুলো। মা- বাবা সৃজার জীবনে অন্য গ্রহের বাসিন্দা। তাদের কর্ম ব্যস্ত জীবনে কোনো রকম অভিযোগের তির নিক্ষেপ করতে সে রাজি নয়। তার গভীর প্রত্যয় তার জীবনের সফলতা। মাথার উপর খোলা আকাশ, আর পায়ের তলার শক্ত মাটি। যতই তার বাবা মা এর উজাড় করা সম্পদ থাক। সৃজা চায় নিজেই নিজের সম্পদ হতে।... নিজস্ব চিন্তায় মগ্ন নাবালিকার কানে আবার সেই সুর এসে জাগায় এক তীব্র উচাটন।

স্কুল ফেরত দেখা মেলে মেস বাড়ির ছাদের রোয়াকে বসা অগোছালো মাউথ অর্গান এ সুর তোলা ছেলে টির। মেঘলা আকাশ, ঝড় আসার পূর্বাভাস। আজ আর সে টিউশন যাবে না।বিকেলের কফি হাতে গুটি গুটি পায়ে সে এসে দাঁড়ায় তাদের ছাদে। মা এর শখের বাগানে ফুল ধরেছে রকমারি। এদের সাথে ওর ঘনিষ্ঠতা নিবিড়। নরম পাপড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে ধেয়ে আসে  তোলপাড় করা বৃষ্টি। চুতর্দশী নাবালিকা গেয়ে ওঠে "শাঙন গগনে ঘোর ঘনঘটা……। "
উজানের আজ মন ভালো নেই। কি অসাধারণ গানের গলা। কিন্তু  তার দর্শন যে মেলা দুষ্কর। সেদিনও ছাদে দেখেছে ফুলদের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় মগ্ন মেয়ে টিকে। বড় বড় কংক্রিটের  ইমারত ডিঙিয়ে তার মুখ খানা আর দেখতে পায় না সে।
ঋতু আসে ঋতু যায়। নব নব ঋতুর মতন মায়াবী ভালো লাগায় কানায় কানায় পূর্ণ হতে থাকে দুই অচেনা, অজানা হৃদয়। গাঢ় হতে থাকে তাদের মনের অভিমানী ভালোবাসা। এ যেনো এক অপ্রাপ্তির মধ্যেও পরম পাওয়া। অদর্শনের মধ্যেও অভিসারী পথ খোঁজা। এভাবেই কেটে যায় ৩ টে বছর।  সৃজা এখন ক্লাস 12। উজান B.tech  ফাইনাল ইয়ার। দীর্ঘ ৩ টে বছর ধরে পরস্পরের অজান্তেই ওরা লালন পালন করে চলেছে মনের গভীরে নিখাদ ভালোবাসা কে। যা শুধু কিছু সুরের মূর্ছনায় সীমাবদ্ধ। নাই বা হলো মৌখিক আলাপচারিতা, নাই বা হল রূপ সাগরের তীরে ভেলা ভাসিয়ে পরন্ত বিকেলে নগরীর প্রান্তে তাদের দেখাশোনা। থাক না এভাবেই আগলে রাখা সযত্নে ভালোবাসা।
...... দিন মাস বছর অতিক্রান্ত। উজান - সৃজা নিজের নিজের জগতে ধাবমান। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য সেই অচেনা মানুষের চেনা সুর ওরা ভুলে যায় নি।
চাকরি সূত্রে কিছু কাজ নিয়ে আজ সৃজা কলকাতায় এসেছে। কদিন বাড়িতে থাকবে। স্টেশনে নামতেই একটা অনুভুতি হল। মনে হল যে সুর শুনে এতকাল মনের মধ্যে সে একটাই গান গেঁথে রেখেছে..." ঘরে তে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে".... আজ যেনো তা অন্দরমহলের সমস্ত আগল ঠেলে বেড়িয়ে আসতে চাইছে। শেয়ারে ট্যাক্সি ভাড়া করল। বাড়িও পৌঁছাল। তবু মনের কোথায় যেনো সেই অনুভূতিটা বারবার ঘুরপাক খেতে থাকল।
উজান ওর শত ব্যস্ততার মধ্যেও ওর শিকড় ভুলে যায়নি। অনাথ আশ্রম ছেড়ে কালীতলার মেস বাড়িতে গেলেও, প্রতি মাসেই ও যায় ওর আশ্রমে। ফেরার সময় মন টা ভীষণ খারাপ করে ওর, ওই ছোট ক্ষুদে দের জন্য। আজ ও প্রতিষ্ঠিত। তবু কোথাও যেনো শুন্যতার নিবিড় আস্তরণ। সেই সুর আজো ওকে একলা করে চলে যায়। রাত প্রায় এগারোটা। লাস্ট মেট্রো আসতে একটু সময় আছে। মাউথ অর্গান টায় আজ আবার সুর ধরে উজান।
ইতস্তত ছড়িয়ে আছে জনা কয়েক মেট্রো যাত্রী।
আজ অফিসের কাজ গুলো সেরে নিউ মার্কেট থেকে কিছু কেনা কাটা করে সৃজা। অফিসের গাড়ি টাকে তাই আসতে বারণ করে দিয়েছিল। অনেক দিন পর কেনাকাটা করতে করতে খেয়াল করে নি কখন এত রাত হয়ে গেছে। মেট্রো ধরা ছাড়া উপায় নেই।
মেট্রো স্টেশনে ঢুকতেই সেই চেনা সুর। উন্মাদের মতন চারিদিকে ছুটতে থাকে সৃজা। অনেকক্ষন পর স্টেশনের শেষ প্রান্তে বসে থাকা একলা এক অচেনা মানুষের কাছে সেই হারিয়ে যাওয়া চেনা সুর।
মেট্রো এসে যায়। উজান চলে যায়। সৃজা আর তার নাগাল পায় না। যাকে এতো দিন ধরে খুঁজছে তাকে নাগালে পেয়েও হারিয়ে ফেলে সে। এরপর বাড়ি ফিরেই সৃজা সেটাই করে যা সে এতদিন করে নি। কালীতলার মেস বাড়িতে ছুটে গিয়ে খোঁজ করে নাম না জানা , মাউথ অর্গান বাজানো ১০ বছর আগের সেই ছেলে টার।
যার জন্য এত অপেক্ষা, এতো মনের মন্দিরে প্রেমের রোদ বৃষ্টি খেলা। নাহ, মেস বাড়িতে তার কোনো ঠিকানা কেউ দিতে পারে না। মনে শত সহস্র ঝড় তুলে শূন্য হাতে ফিরে আসে সৃজা।

এরপর যতদিন কলকাতায় ছিল, মেট্রো স্টেশন এ প্রায়ই গিয়েছে। কিন্তু সেই সুর আর শুনতে পায় নি।
বেশ কদিন পরেই এয়ারপোর্টের লাউঁচে এর সিটে একটা গোলাপী ডাইরির পরে থাকতে দেখে উজান। যদিও তার স্বভাব বিরুদ্ধ, তবুও সে ডাইরির মালিক কে তা ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্দ্যেশে সেটা তুলে নেয়। কিন্তু হতবাক হয় তাতে কোনো নাম লেখা নেই দেখে। প্রথম পাতায় শুধু লেখা.... "আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে। দেখতে আমি পাই নে..."। ভীষণ কৌতহল এর বশেই দ্বিতীয় পাতায় পায় সে  তার মেস বাড়ির ছাদের বর্ণনা। তার মাউথ অর্গানের সুরের প্রেমে পড়া  একলা কোনো প্রেয়সীর প্রেমের বার্তা।
হঠাৎ সৃজার খেয়াল হয়, তার ডাইরি তার সাথে নেই। সে ফিরে তাকায় লাউঁচএ। খুব বিরক্ত হয় তার খামখেয়ালি মনের উপাখ্যানকে অন্য কারো হাতে দেখে। সামনে এসে দাঁড়াতেই, উজান মাউথ অর্গানে সেই চেনা সুর ধরে।
..... চারিদিকের হাজার ব্যস্ততা ঘেরা জীবন যেনো স্তব্ধ হয়ে যায়। এতদিনের অদেখা মানুষ যাকে ঘিরে পরস্পরের মনে এতো অপেক্ষা,আজ তারা মুখোমুখি। চিনে নিতে অসুবিধে হয় না কাউকেই। আজ হৃদয়ের আকাশে লক্ষ তারার আলো, যেনো রামধনুর রঙে রাঙিয়ে সহস্র প্রজাপতি মেলেছে পাখনা।
...... উজান বলে.... "আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল... শুধাইলো না কেহ..."
সৃজা অন্তরে তখন...."এসো আমার ঘরে এসো..... বাহির হতে এসো, যে আছো অন্তরে"....
দুই আকুল প্রাণে তখন সুরের ধারা,... বাকহীন হৃদয় এর স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে চোখে চোখে কথারাও যেন স্তব্ধ হয়ে আসে।।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri