হঠাৎ খুশির জোয়ারে/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
হঠাৎ খুশির জোয়ারে
পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
পালাম বিমানবন্দরে পা দিতেই মনটা খুশিতে নেচে উঠল। একদল যাত্রী ভিড় করে কারো অটোগ্রাফ নিচ্ছে। যিনি অটোগ্রাফ দিচ্ছেন তার মুখ নড়ছে। অর্থাৎ তিনি কিছু খাচ্ছেন। একটু এগিয়ে যেতেই দেখলাম তিনি আর কেউ নন, প্রবাদ প্রতিম ভারতীয় ক্রিকেটার কপিল দেব নিখাঞ্জ। তার বাম হাতে একটা ব্রিটেনিয়া কেক। তার কাছাকাছি যেতেই যে বিষয়টা চোখে পড়ল তা হল তার শিকারীর মতো চোখের দৃষ্টি এবং কালচে শ্যাম বর্ণের হাতের লোমশ কবজি। অবলীলাক্রমে হাসিমুখে সবার সাথে কথা বলছেন। অন্যান্য যাত্রীরা তাদের গন্তব্যের ফ্লাইট ধরবার তাড়ায় যে যার মতো চলে যেতে, একটু ফাঁকা হলে তার কাছাকাছি যাবার এবং কথা বলবার সুযোগ পেলাম। জানলাম তিনি কিছু জরুরি কাজ নিয়ে মুম্বাইয়ে যাচ্ছেন। আমরা যে গৌহাটি যাচ্ছি একথাও তিনি জেনে নিলেন।
অফিসের কাজে হঠাৎ করে অরুণাচল সফরে আমি ও আমার সফরসঙ্গী ওঙ্কার সিংহ। আমরা পাঁচ দিনের জন্য সেই রাজ্যের সড়ক পরিবহন মন্ত্রী তাদার তানিয়াং এর আয়োজিত বৈঠকে যোগ দিতে গৌহাটির পথে। একরাত্রি গৌহাটি সার্কিট হাউসে থেকে, সেখান থেকে বাই কার অরুণাচল প্রদেশ যাব।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকে একঘেয়ে অফিস এবং সন্ধ্যায় নতুন দিল্লির কস্তুরবা গান্ধী মার্গে ভারতীয় বিদ্যা ভবনে সাংবাদিকতার ক্লাস করে কখন যেন মনে মনে স্বপ্ন দেখতাম এমন একজন বিগ শটের ইন্টারভিউ নেওয়ার। আজ তা পরিপূর্ণ হলো।
কোনো অজ্ঞাত কারণে কপিল দেব জী'র ফ্লাইট ডিলেইড ছিল । কিন্তু সে বিষয় নিয়ে তার ভ্রুক্ষেপ ছিল না। ছিল না তার কপালে কোনো দুশ্চিন্তার ভাঁজ। তার অনাবিল হাসি এবং ফুরফুরে মেজাজ দেখে হারিয়ে যাওয়া দু একটা স্মৃতি উস্কে দিতেই তিনি গড়গড় করে বলে গেলেন তার হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বল কিছু স্মৃতি। গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথের প্রসঙ্গে বললেন ও ঈশ্বরের বরপুত্র। শচীন তেন্ডুলকরকে উদ্দেশ্য করে বললেন ওর হাতে জাদু আছে। শচীন ভারতের গৌরব। একটা লক্ষণীয় বিষয় হল প্রবাদ প্রতিম এই ক্রিকেটার সব খেলোয়াড়দের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করেন। কেউই তার কাছে ছোট নয়, যার নিদর্শন বোধকরি সঙ্গীত, সাহিত্য, রাজনীতি বা অন্য অঙ্গনে দেখতে পাওয়া যাবে না। মনে পড়ে গেল বৈষ্ণদেবীর সেই সর্বত্যাগী সন্যাসীর কথা। তিনি বলেছিলেন, " সুক্ষতম ব্যাক্তি আমিত্ববোধ না কাটাতে পারলে, এই জগতের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা সম্ভব নয়। আমিত্ববোধ সুখের পথে প্রধান এবং একমাত্র অন্তরায়।"
ইন্দিরা গান্ধী এয়ারপোর্টের ডমেষ্টিক লাউঞ্জে লাউঞ্জে সবাই তখন দর্শক।
তার বাম হাতে রাখা ব্রিটানিয়া কেকের একটা টুকরো এগিয়ে দিলেন। এই খুশির মুহূর্ত মনের মনিকোঠায় সঞ্চিত হয়ে রইল। তখন হাতের কাছে কোন ডাইরি, বা কাগজ না থাকায় এয়ার ইন্ডিয়ার বোর্ডিং কার্ডের পিছনে তার অটোগ্রাফ নিলাম। ফ্লাইটের সময় এগিয়ে আসায় তাকে বিদায় জানিয়ে সিকিউরিটি চেকিং এর দিকে এগিয়ে গেলাম। গোটা সময়টা একটা ভালো লাগা রঙিন ছবি জীবনের এলবামে বন্দী করে রাখলাম।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴