সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
09-March,2025 - Sunday ✍️ By- রাজর্ষি দত্ত 120

স্মৃতির ছেঁড়া পাতা.../রাজর্ষি দত্ত

স্মৃতির ছেঁড়া পাতা...
রাজর্ষি দত্ত

তখন সাজানো কাঠের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। আর সামনের একটি ঝোপড়া গাছে ওই রাতে ডেকে চলেছে অগুন্তি পাখি ... কেউ জানাল এখানে নাকি এরকমই ডাকে। 

অনিন্দ্যদা হেসে বলছেন "লেখ রাজর্ষি -"
বললাম "আমি পারি না...যেটুকু লিখি তা খুব সাদামাটা,সোজাসুজি। ওটা কি সাহিত্য?"
বললেন "সব সময় নবারুণ হবে তার তো কোন মানে নেই, স্বপনকুমার পড়তেও তো ভালো লাগে!"

কেন এসব কথা আসছে? একমাস কম দুবছরের সম্পর্কে হাতে গোনা গুটিকতক দিনে চোখের দেখা (মনে পড়ছে ওনার চোখের পাতাগুলি খুব বড় আর ঘন) বাকিটা virtual. কিন্তু তাতে কোন অসুবিধা হয়নি। আমাদের মফস্বলীয় ছোটবেলা, শিক্ষক পরিবার, বই ও সংগীত প্রেম ওয়েভ লেংথে মিলিয়ে দিয়েছিল। মেধাবী ছাত্র অনিন্দ্য দা দারুণ ফুটবলও খেলত যেটা আমারও প্রিয় খেলা। প্রায়ই বলতাম অনিন্দ্য দাকে, উত্তরের ফুটবল নিয়ে লিখতে। স্কুলের বিল্ডিং ঘেরা ময়দান, ফ্যাক্টরি ও বাবু কোয়ার্টারের মাঝে চা বাগানের মাঠ, পাহাড়তলীর গ্রাউন্ড যেখানে ধাপে ধাপে উঁচু জমিতে বসে খেলা দেখে নেপালি দর্শক এইরকম বিবিধ বৈচিত্র্য মাথায় নিয়ে সবে শুরু করেছিলেন, যা হয়ত হতে পারত অক্ষর দলিল...

আবার কানে তালা লেগে যাচ্ছে পাখিদের কিচিরমিচিরে। রাত্রিবেলায় এমন সমস্বরে ডাকতে আমি কোনদিন শুনিনি।

ইচ্ছে করছে তাঁকে একটি পোস্টকার্ড লিখতে "রাগ করলে করুন...কিন্তু এমনভাবে চলে গিয়ে ঠিক করলেন না। খুব খারাপ হল!" ব্যাস এটুকুই।

কোনদিন ভেবেছিলাম বলব 'আমাদের আগে কেন দেখা হয়নি?' এখন ভাবি 'দেখা না হলেই বুঝি ভালো হত।' আবার এও ভাবি, অনিন্দ্যদা আপাত নিভৃতবাসে গেছেন। সেখানে পৌঁছতে বেশিদিন হয়তো অপেক্ষায় থাকতে হবে না! স্কুল ছাড়ার পর অনেক বন্ধুর সঙ্গে দেখাই নেই ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছর। সেরকম ধরে নিলেই হয়...

অনিন্দ্যদার বৈশিষ্ট্য ছিল সব কথার জবাব না দিয়ে মুচকি হেসে চুপ করে যেতেন। এবারেও দেখতে পাচ্ছি উনি জানালার বাইরে খোলা মাঠের দিকে তাকিয়ে আছেন। সেখানে শুকনো বৃক্ষের পত্রালি পাক খেতে খেতে নামছে, ক্ষণে ক্ষণে ঝটকা দখিনা হাওয়ায় মাটিতে জমে থাকা পাতাগুলি গণ্ডি খেতে খেতে জায়গা বদল করল।

"ছেলেদের পঁয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চান্ন বয়সটা খুব vulnerable", কথায় কথায় বলেছিলাম একদিন। কারণও আছে। বৃদ্ধ বাবা মায়ের অসুস্থতার টেনশন, conjugal life, ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা, কর্মক্ষেত্রে সিনিয়রের দায়িত্ব সব একসাথে বুকের ওপর চেপে বসে যে! বেড়ে গেছে আকছার stroke এর ঘটনা। ঐ পিরিয়ডের মধ্যেই। শুনে অনিন্দ্য দাও সম্মতি জানালেন। যদিও বাবা মা-কে বাদ দিলে সংসার সমুদ্রের দায়িত্ব তাঁর ছিল না। কিন্তু বাইরের দুনিয়ায় পরোপকারের ব্রত নিয়ে এক মহাসামুদ্রিক দায়িত্ব নীরবে ঘাড়ে পেতে নিয়েছিলেন। কিন্তু ইদানিং স্বাস্থ্য তেমন একটা ভালো যাচ্ছিল না। একসময়ের খেলোয়াড় শরীর কোভিডের পর থেকেই...তবুও কেমন উদাসীন থাকতেন চেক আপের মামলায়!   

যদিও এসব কথার কোন মানে নেই। গীতায় বলে না - সবকিছু predestined ! মানুষ একদিকে বালিতে ঘর বানায়, বিধাতার অট্টহাসির কলরবে সব হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। যুধিষ্ঠির সেই কবেই বলে গেছিলেন মৃত্যু সুনিশ্চিত জেনেও মানুষ এমন বেমালুম ভুলে থাকে কী করে? বোধহয় এটাই জীবনের মায়া।

তাই গভীর বেদনায় বাঙালির একমাত্র আশ্রয়দাতা রবীন্দ্রনাথের কাছেই ফিরে যেতে হয়। মৃত্যু জীবনের একমাত্র সত্য স্বীকার করেও তিনি দেখিয়েছেন পৃথিবীতে জাজ্বল্যমান অনেক অনেক সত্য ফুলের মতো ফুটে আছে। আমরা ঘুরে দেখি না। অত বড় করে দেখবার, ভাববার হৃদয় আমাদের কোথায়?

অনিন্দ্য দার কিন্তু ছিল। তাই শুধু আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব নয়, আরও বিভিন্ন সামাজিক অবস্থান থেকেও অনেকে মিস করবেন তাঁর সেই অমলিন হাসি, কাঁধে হাত, ভরসার কথা...বাকি জীবনের 'জীবনদোলায়' দুলতে দুলতে।

রবীন্দ্রনাথের কথা ধার করেই বলি - "দোল লেগেছে এবার! পাওয়া আর না পাওয়ার মাঝখানে এই দোল। এক প্রান্তে মিলন। আরেক প্রান্তে বিরহ। এই দুই প্রান্ত স্পর্শ করে দুলছে বিশ্বের হৃদয়। পরিপূর্ণ আর অপূর্ণের মাঝখানে এই দোলন। আলোতে ছায়াতে ঠেকতে ঠেকতে রূপ জাগছে জীবন থেকে মরণে - বাহির থেকে অন্তরে।"

এখন ধূ ধূ প্রান্তরের অনুমেয় শূন্যতা থেকে ভেসে আসছে "তুমি কিছু নিয়ে যাও... বেদনা হতে বেদনে..." মোহরদির গলা শুনতে পাচ্ছেন না আপনি?

ভাল থাকুন অনিন্দ্য দা। পরপারে যদি সৃষ্টির কাজ থাকে, আপনি তাতে লেগে পড়েছেন জানি। হয়তো দেখতে পাবেন রিক্ত বসন্তের শেষে আবার গুচ্ছ গুচ্ছ কিশলয় ছেয়ে ফেলেছে তরুর শাখা - আপনার ভাবনার, আপনার কর্মের, আপনার স্বপ্নের...

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri