সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

স্বীকৃতি/জয়িতা রায় চৌধুরী মল্লিক

স্বীকৃতি
জয়িতা রায় চৌধুরী মল্লিক 

মা,তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও। বেরোবার সময় হয়ে গেল তো! মাকে তাড়া দিল তুতুল। ও আজ মাকে নিয়ে বেরোবে তাই অফিস যায়নি, ছুটি নিয়েছে। হাতের কাজগুলো সেরে নিতে নিতে তুতুলের দিকে তাকালেন শাশ্বতী দেবী, বললেন, কোথায় যাবি সেটাই তো জানালি না এখনও! মুচকি হেসে তুতুল রহস্যময় গলায় বলল, জানাব জানাব। ঝটপট তৈরি হয়ে নাও। কপট রাগ দেখিয়ে মা বললেন, সব সময় শুধু হেঁয়ালি!
অবশেষে সেজে গুজে টোটোতে চেপে রওনা হল দুজনে। তুতুলের মুখে কোন কথা নেই, শাশ্বতী দেবী উশখুশ করছেন কোথায় চলেছেন জানবার জন্য। কিন্তু মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না, জানেন উত্তর পাবেন না। অগত্যা তিনিও চুপচাপ চারপাশ দেখতে লাগলেন‌ আর ভাবতে লাগলেন, তুতুলের এই রহস্যের মানে কি? তুতুলের যখন সাত বছর বয়স তখন ওর বাবা মারা যান। তারপর থেকে ঐ ছোট্ট মেয়েকে ঘিরে একা একা পথ চলা শাশ্বতী দেবীর। মেয়েকে নিজে সম্পূর্ণ একা হাতে বড় করে তুলেছেন তিনি, তবু মাঝে মাঝে মেয়েকে যেন চিনতে পারেন না, আজকাল। আর্ট গ্যালারির সামনে পৌঁছে টোটোটিকে দাঁড় করালো তুতুল তারপর নেমে মায়ের দিকে তাকিয়ে, এস বলেই হনহন করে আর্ট গ্যালারির ভিতরে ঢুকে গেল। টোটো ভাড়া মিটিয়ে পিছন পিছন ঢুকলেন শাশ্বতী দেবী। বিরাট হলঘর। এর আগেও বেশ কয়েকবার এসেছেন এখানে, নানা অনুষ্ঠানে। কিন্তু আজ তুতুল তাকে এখানে কেন নিয়ে এল কেজানে। হল ঘরটিতে বেশ কিছু মহিলা-পুরুষ এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। প্রত্যেকেই খুব মনোযোগ দিয়ে দেওয়ালে টাঙানো হাতে আঁকা নানা ছবি ঘুরে ঘুরে দেখছেন, আলোচনা করছেন। দেওয়ালের মাঝ বরাবর বড় করে লেখা 'চিত্র প্রদর্শনী'। নানা শিল্পীর রঙ তুলির টান দেওয়াল জুড়ে। তুতুল যে হঠাৎ কোথায় মিলিয়ে গেল! ওকে দেখতে না পেয়ে ছবিগুলোতে মনোনিবেশ করলেন তিনি। ছোটবেলা থেকে তিনি নিজেও ছবি আঁকতে খুব ভালোবাসতেন। তার এত উৎসাহ দেখে বড় বড় শিল্পীদের আঁকা নানা ছবির বই কিনে এনে দিতেন বাবা। ঐসব বই নাড়াচাড়া করেই তার ঘর ভরে উঠত নিজস্ব ভাবনার অজস্র ছবিতে। কাছাকাছি কোন অঙ্কন শিক্ষক না থাকায় প্রথাগত শিক্ষা তার ছিল না, তবু সেসব ছবি হয়ে উঠত অসাধারণ। বাবা অবাক হয়ে দেখতেন আর বলতেন, সাবাশ! এটুকুই আনন্দে ভরিয়ে দিত শাশ্বতী দেবীকে। বিয়ের পর প্রথম প্রথম তুতুলের বাবাও উৎসাহ দিতেন। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সংসার যখন তাকে গ্রাস করছে তখন তার ভালোলাগাগুলো পিছু হটতে হটতে একসময় সব হারিয়ে গেল কোথায়! 
একটা ছবির সামনে বেশ ভিড় দেখে পায়ে পায়ে সেদিকেই এগিয়ে গেলেন তিনি। বিরাট ক্যানভাসে জল রঙে আঁকা এক দুর্গার ছবি। দশহাতে সংসারের যাবতীয় কাজ সামলাচ্ছেন এক মহিলা। মহিলাটি দুর্গার আদলে চিত্রিত হয়েছে। ভীষণ চেনা লাগল ছবিটা! চমকে উঠলেন তিনি, এটা তো তারই আঁকা ছবি। বহুবছর আগে এঁকেছিলেন। ঐ তো নীচে লেখা 'শাশ্বতী বসু'। এতদিন পর কোত্থেকে এল এই ছবি! অনেক ব্যথার নীচে, সংসারের ভারে চাপা পড়ে যাওয়া ভীষণ ভালোলাগার এই কাজটুকু হঠাৎ এতদিন পর কিভাবে এখানে ঠাঁই পেল! কাঁধে হাতের স্পর্শে চমকে পিছনে তাকালেন তিনি। তুতুল দাঁড়িয়ে রয়েছে তাকে ছুঁয়ে, মুখে ঝকঝকে হাসি। তিনি টের পেলেন বহুদিন আগে ঝড় ঝাপটায় নিভে যাওয়া ইচ্ছেগুলো বুকের ভিতর থেকে দলা পাকিয়ে পাকিয়ে গলার কাছে উঠে এসে বাকরুদ্ধ করে দিচ্ছে তাকে। চোখ ঝাপসা হয়ে গেল শাশ্বতী বসুর। আনন্দে আবেগে ভাললাগায় আর ভীষণ ভালবাসায় জড়িয়ে ধরলেন তিনি তুতুলকে। নীরবে নিভৃতে সবার অলক্ষ্যে, খানিকটা অবহেলায় গড়ে ওঠা এই শিল্পসত্তাকে সবার সামনে তুলে ধরে, শিল্পীর শিল্পকে স্বীকৃতি দেবার পথে নিয়ে আসতে পেরে এক অন্তহীন ভাললাগায়  চিকচিক করে উঠল তুতুলের চোখ দুটোও।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri