স্বর্গীয় সোনালী আলোর এক প্রত্যুষ/কবিতা বণিক
স্বর্গীয় সোনালী আলোর এক প্রত্যুষ
কবিতা বণিক
বাড়ি থেকে যোজন যোজন দূরে তখন আছি। সেখানে শরৎ, হেমন্ত যেন যুগ্ম ভাবেই বন্ধুর মতো আসে। গাছেরা মনোহারী রঙ দিয়ে তাদের পাতাগুলোকে সাজিয়ে ফেলেছে। লাল, খয়েরী, হলুদ, বাদামী রঙে থরে থরে সাজানো ম্যাপেল পাতার সারি সারি গাছ , ঝকঝকে পরিস্কার রাস্তা , স্বচ্ছ নীল আকাশ কি মায়া লাগায় চোখে। কোথাও এমন রঙ বাহারী ম্যাপেল গাছের ঘন বন । প্রকৃতি তার রঙ রূপ যেন ঢেলে দিয়েছে। তবে রেড় ম্যাপেল খুব বেশী আছে। এই গাছের ফুল, পাতা, ডাঁটা, কুঁড়ি, বীজ সবই লাল রঙের হয়। এমনই স্বচ্ছ নীল আকাশের দাক্ষ্যিণ্যে রেড় ম্যাপেল গাছ সমন্বিত ছোট ছোট পাড়াগুলোতে দু-একটি বাড়ির সামনের লনে কচিকাঁচাদের খেলা , কখনও হরিণ, খরগোসেরও দেখা সব মিলিয়ে বড় শ্রী মণ্ডিত মনে হয়।যেন রূপকথায় পড়া উপবনের সৌন্দর্য মনে করিয়ে দেয়। এখানকার লোকেরা সকাল সন্ধ্যে হাঁটতে বের হয় একটা নির্দিষ্ট জায়গায়। চোখ জুড়ানো ফুলবাগান, চকলেট, বিস্কিটের ছোট ছোট বাড়ি, ঝর্ণা ইত্যাদি পিচঢালা হাঁটা রাস্তার দুপাশে সাজানো। তখন ভাবি ফেয়ারী টেলসের গল্পগুলির কথা। এ পরিবেশ মানুষের সৃষ্টি না ঈশ্বরের? আসলে ঈশ্বরের দান তো বটেই। কিন্তু আলস্য বিহীন মানুষ গুলোর যত্নের ও শিল্পী মনোভাব এমন সৌন্দর্যে ভরিয়ে রেখেছে। প্রকৃতির দান ছাড়াও পরিচ্ছন্নতাই এখানকার সৌন্দর্যের চাবিকাঠি। এরা প্রকৃতিকে বাঁচিয়েই কাজ করে। যেখানেই যাই এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে, মনে সর্বদাই এক অনাবিল আনন্দ খেলা করে। কিছুদিন পর এই পাতাগুলো সব ঝরে যাবে তখন তুষারাবৃত শীতের অন্য রূপ দেখা যাবে। ঘরের জানলা দিয়ে দেখা, বা বাইবে বের হলে এই সৌন্দর্য সর্বদাই উপভোগ করা যায়। সত্যি সত্যিই যেন স্বর্গীয় ভুমিতে বিচরণ করছি। মনকে সুস্হ রাখতেও এমন পরিবেশ কাজ করে বৈকি! আমিও হয়ত সর্বদা সেই স্বর্গীয় আনন্দেই ডুবে থাকতাম। মনে হতো এমন সুন্দর উপবনে তো গান্ধর্বীরা, দেবতারা ঘুরে বেড়ায়। এই রকম স্বপ্নময় দিন কাটাতাম। তারই ফল স্বরূপ হয়তো সেদিনের এক অলৌকিক দৃশ্যের আনন্দ উপভোগ করা। যা আজও মনকে স্বর্গীয় আনন্দে ভরিয়ে রাখে।
এক অতি প্রত্যুষে আমি দেখছি চারিদিক সোনালী আলোয় ছেয়ে আছে। জানলা দিয়ে দেখি ম্যাপল গাছের পাতাগুলো আনন্দে হালকা ভাবে দোল খাচ্ছে। এমন সোনালী আলোয় সব কিছু যেন আনন্দ করছে। এমন সুন্দর নয়নাভিরাম আলো আগে কখনও কোথাও দেখিনি। পিচঢালা রাস্তা থেকেও যেন সোনার মতো আলো ঠিকরে বের হচ্ছে। মনে হল বুঝি এখুনি কোন দৈব রথ এসে নামবে। ঠিক তখনই যেন আমার কানে কেউ বলে দিল “ নিত্যলোকের ভাবতত্ব “। বুঝি না নিত্যলোক কি? তার ভাবতত্ব এমন হবে? মনে হল নিত্যলোক তাহলে সদা আনন্দময়। এত কঠিন শব্দ ডায়রীতে লিখে নিলাম। হয়তো শব্দটাই ভুলে যাব। এই ভাবে কতক্ষণ কাটল জানিনা। কিন্তু সময় যতই বয়ে যাক, আজও ডায়রীর ঐ পাতায় হাত বোলাই আর অনুভব করি সেই অলৌকিক দৃশ্যের নিত্যলোকের ভাব কে আত্মস্থ করার। তখনই মন শান্ত আনন্দিত হয়।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴