স্বপ্নের গাজন/সাধন পাল
স্বপ্নের গাজন
সাধন পাল
আমার কিন্তু আজ হেব্বি লাগছে মাইরী! ঐ ভাল বাংলায় কি যেন বলে এক্কেরে "শিহরিত"!
এদিকে দুগ্গা ঠাকুরের ঢাকের বাদ্যি বাজবে আর ঐ দিকে ভোটের বাদ্যি! জমে ক্ষীর! সুভাষ দত্ত কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চোঙে উচ্চ ডেসিবেলে গুটখা সুবাসিত মুখে ভাষণ,
'মেরে প্যারে ভাইয়ো.. হাম ইয়ে করেঙ্গে... হাম বো করেঙ্গে...'!
অনুপ্রাণিত টোটোওয়ালা ফটিক রাতে বাড়ি ফিরে ফুটো চালের ফাঁক দিয়ে পুর্ণিমার চাঁদকে দেখিয়ে বউকে সোহাগে জড়িয়ে বলবে,
--জানিস বউ, আজি নেতা আসি কয়া গেইল হামার দুক্কের দিন শ্যাস্...এইবার ভোট দিলে নয়া ঘর দিবে হামাক! তুই কিন্তুক্ ভোটখান ঠিক জাগাত দিবু!
সেই ডিটারজেন্টের বিজ্ঞাপনটা মনে আছে? দাগ্ অচ্ছে হোতে হ্যয়! আমি পাল্টে নিয়ে বলি- "ভোট অচ্ছে হোতে হ্যয়!" বলবই না কেন?আলবৎ বলবো...একদিকে বন্ধ বাগানে কাজের সাইরেন বেজে উঠলো আর ঐ দিকে -বুলাবা আয়া হ্যয়,বোনাসের বুলায়া হ্যয়..!
বছর বছর ভোট হোক! লাগে টাকা দেবে গৌরি সেন! এভাবেই একদিন শপিংমল,পিজ্জাবার সমৃদ্ধ আধা জনপদগুলো গ্ল্যামারাস পৌরসভায় উন্নীত হবে।
ওদিকে আবার আদিবাসী ছেলেমেয়েগুলোর ব্যাপক স্ট্যামিনা। ওদের একটু প্রশিক্ষণ দিলে খেলায় ভারতবর্ষের নাম "রৌশন" করবে! ওক্কে দ্যাটস্ গুড আইডিয়া। রেলের জমি পরে আছে অনেক। একটা স্পোর্টস একাডেমি করে দেওয়া হবে। পুরো খচ্চা সরকার বাহাদুর দেবে- প্রতিশ্রুতির তোড়ে মরা নদীতেও হরপা বাণ ছোটে।
আধাপেটা খাওয়া শীর্ণ চেহারার গোদাম লাইনের শুকড়া সর্দার তামকু সানতে সানতে ভাবে -"সারা সাল রোউদ পাণিমে হামিন কামাব আউর বোনাস ঠিক করেক্লে নেতামন জাবায়..শা.. এতরা কমতি পারসিন বোনাস?!!
হামার লাইনকের ঝাড়িয়া কয় দিন নেতামন কের পিছে পিছে ঘুমলায়...গেট মিটিং মে সাহেব-বাবুমনকে গাড়িয়ালায়...এখন দেখোথো উকার নয়া মোটরসাইকিল! ছোটা সাহেব সাঙ্গে খারায়কে সিগ্রেট ভি পিয়েল!
মুখ থেকে ঘৃণায় একগাদা থুথু ফেলে--সব বুঝন...সব বুঝন...শা...!
ছেলেটা ইস্কুল বাদ দিয়ে কেরালায় গিয়েছে কামাই করতে। মেয়েটা পড়াশুনোয় ভাল বলে ছোট থেকেই মিশনারী স্কুলের সিস্টাররা হোস্টেলে রেখে দিয়েছে। এবার উচ্চমাধ্যমিক দেবে। দু’মাস হ'ল কলকাতায় গিয়েছে ডাক্তারি পরীক্ষার ট্রেনিং নিতে মিশনের বড় হোস্টেলে থেকে।
সেদিন সন্ধ্যায় বাজারে শুকড়া দেখে মহিলাদের বিরাট মিছিল চলছে। হাতে হাতে মোমবাতি । এত বছর আছে শহরের লাগোয়া চা-বাগানে কিন্তু কখনও রাতে শহরের মহিলাদের এভাবে মিছিলে হাঁটতে দেখেনি শুকড়া। কিছুটা অবাক লাগছে। পথ চলতি পরিচিতজনের থেকে কারনটা মালুম হ'তে নিজের মেয়েটার কথা ভেবে আতঙ্ক তারও মনে।
--বাগানকের হামিন তোহ্ আনপড় জংলী কুলি আদমিন! লেকিন কলকাত্তা মে তো সব পড়ালিখা বাবুসায়েব রহেল! হুয়া জান্ বাচায়েকওয়ালা ডাক্টার মাইয়াকে মাইর দেলায়! কোই বাচায়েক লে নি আলায়...!! উকার আওয়াজ কে কো নি শুনালাক্ ?
আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় সে
-- হায় পারভু, জানোয়ার ভি এইসান নি করেল্ ! তোর বানাল্ ইনসান বৈন জাহে কেইসান!!
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴