সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
11-June,2023 - Sunday ✍️ By- সুকল্যাণ দে 460

সেদিন পাহাড়ে/সুকল্যাণ দে

সেদিন পাহাড়ে                                 
সুকল্যাণ দে     
------------------                                     

জলপাইগুড়ি থেকে প্রায় ঘন্টা  চারেকের মনজুড়ানো পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে অবশেষে পৌঁছলাম সাউথ সিকিমের প্রায় ৮০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত রাভাংলায়। যাত্রায় আমার সঙ্গী আমারই এক বন্ধু তুহিন। সবচেয়ে বেশি যার টানে এই রাভাংলায় ছুটে আসা তা হলো রাভাংলা বুদ্ধ পার্ক। আমাদের থাকার হোটেলটিও ছিল রাভাংলা বুদ্ধ পার্ক এর একদম পাশে।  হোটেলের ব্যালকনি থেকে বুদ্ধপার্ক এর  প্রায় পুরোটাই দৃষ্টিতে আসে। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ সারবার পর আমরা দুই বন্ধু চলে গেলাম বুদ্ধপার্কে। চারিদিকে নীলাভ সবুজ  আকাশছোঁয়া পাহাড়ের মাঝে যেন অভাবনীয় এক সৃষ্টি। সুবৃস্তিত জায়গা জুড়ে এই পার্কের চারিদিকে শুধু চোখ জুড়ানো কারিগরি দক্ষতার ছোঁয়া। প্রচুর সিঁড়ি অতিক্রম করে আমরা অবশেষে পৌঁছলাম পার্কের কেন্দ্রবিন্দু, প্রায় ১৩০ ফুট উচ্চতার বুদ্ধের প্রতিমূর্তির সামনে। এ যেনো সাক্ষাৎ বুদ্ধ তাঁর  স্বমহিমায় বিরাজিত হয়ে পুরো রাভাংলার উপরে যেন স্নিগ্ধভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। কি আকর্ষণীয় তাঁর আবেশ। অপূর্ব সেই বুদ্ধমূর্তির সঙ্গে যেন পাহাড়ের অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্ব। ঘন সাদা মেঘ যেন সেই বুদ্ধের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লুকোচুরি খেলছে। কখনো সেই মেঘ সাদা চাদরে ঢেকে দিচ্ছে পাহাড় ছুঁয়ে থাকা বুদ্ধকে আবার কখনো যেন  সেই সাদা মেঘের আড়াল থেকে বুদ্ধ আবারও প্রকট হচ্ছে। কি অপরূপ সেই মায়াবী খেলা। কি স্নিগ্ধ ! মনে হচ্ছে যেন শহরের সমস্ত  কর্কশ, কাঠিন্য, বিষাক্ত বাতাস থেকে মুক্ত হয়ে আমার বুক যেন এক স্নিগ্ধ, তাজা, পবিত্র বাতাস মনভরে টেনে চলেছে। সত্যিই কি সৃষ্টি! হাল্কা হিমেল হাওয়া যেন সেই অনুভূতিকে আরও চাঙ্গা করে তুলছে। পার্কের চারিদিকে বিভিন্ন বর্ণের ফুলের সজ্জা চমৎকারভাবে পর্যটকদের মুগ্ধ করে তুলেছে। বিভিন্ন অর্কিড, রোডোডেনড্রন সর্বাঙ্গে ঘিরে রেখেছে পার্কটিকে। ফোয়ারায় জলের খেলা যেন আমাদের মনকে ভালোবাসায় ভিজিয়ে দিচ্ছে। পার্কের ভেতরেই রয়েছে কয়েকটি  খাবারের দোকান। রয়েছে বিভিন্ন শৌখিন জিনিসের দোকান যেগুলো পাহাড়ি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য, তাদের পরিচয় বহন করে চলেছে।  শৌখিনতার এক  উচ্চমাত্রা তুলে ধরেছে এই ঘর সাজানোর জিনিসগুলো। আমিও ব্যাতিক্রমী না হয়ে কিনে নিলাম একটি মার্বেলের টুকরোতে খোদাই করা বুদ্ধের প্রতিমূর্তি। পার্কের ভেতরেই  সুস্বাদু নরম মোমোর স্বাদ নিতে নিতে সন্ধ্যে নেমো এলো পাহাড়ে। এবার যেন আরও এক বিস্ময় অপেক্ষা করেছিলো আমাদের জন্যে। সন্ধেবেলায় সমস্ত পার্কটি আলোকিত হয়ে উঠল এক অসাধারণ আলোর কারিগরিতে। নীল, লাল, হলুদ আলোতে পার্কটি যেন আরও আরও মায়াবী হয়ে উঠল। উজ্জ্বল সোনালী আলোর আভায় আলোকিত বুদ্ধের মূর্তিটি যেন পাহাড়ের রাতের অন্ধকারের আধিক্যকে ঘুচিয়ে দিচ্ছে। কি উজ্জ্বল, কি প্রকট দীপ্তি সেই বুদ্ধ মূর্তির। তার সঙ্গে পার্কে মৃদু সুরেলা আওয়াজে বেজে চলেছে বুদ্ধের মন্ত্র। যেন সেই  মন্ত্রের সুরকে সঙ্গে নিয়ে , এই অতুলনীয় পাহাড়িরূপের সাক্ষী থেকে ফিরলাম হোটেলে। আজ যেন নিস্তব্ধ সুনিদ্রা এলো আবেশে। ভোরবেলা সাঁড়ে পাঁচটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে হোটেলের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে  মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখলাম পার্কের বুদ্ধ মূর্তির পিছনে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য।  শ্বেত শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা  বুদ্ধকে সমস্ত কাঠিন্য থেকে আগলে নিয়ে ঘিরে রেখেছে। মনে হচ্ছে যেন শুভ্রবসনে স্বয়ং গৌতম বুদ্ধ শায়িত হয়ে রয়েছেন, আর তাঁর স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দিচ্ছেন পাহাড়ের দিগ্বিদিকে। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের প্রত্যক্ষদর্শী  হয়ে থাকলো  আমার চোখ দুখানি যা সারাজীবনের জন্য গেঁথে থাকল আমার মনে, আমার হৃদয়তলে। এরপর আমি আর তুহিন পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তায় মনিংওয়াক করতে বেরলাম। কিছুটা এগোতেই দেখি পাহাড়ি কয়েকটি বাচ্চা ছেলে বাস্কেটবল খেলছে। ওদের খেলা আমরা দাঁড়িয়ে উপভোগ করছিলাম। হঠাৎ  কয়েকটি বাচ্চাছেলে আমাদের এসে বলল- ' ভাইয়া, খেলোগে হামারে সাথ? ওদের নিষ্পাপ, সরল, ক্লান্তিহীন মুখগুলো দেখে আমরা না করতে পারলাম না। হিমেল আবহাওয়ায় পাহাড়ে ওদের সাথে কিছুক্ষণ বাস্কেটবল  খেলে আরও কিছুটা উষ্ণ হয়ে উঠলাম। পর্যটকরুপী বন্ধুদের সাথে কি সুন্দর তাদের ব্যবহার। পাহাড়ের স্নিগ্ধতাই হয়তো ওদেরকে এই শিক্ষা দিয়েছে। ফেরার সময় বাচ্চাগুলোর হাতে কতগুলো চকলেট দিয়ে আসলাম। তারপর ব্রেকফাস্ট সেরে চিরজীবনের জন্য এই মন তৃপ্ত করা পাহাড়ি মুহুর্তগুলোকে একমুঠো ফোনের ক্যামেরায় বন্দী করে রওনা হয়ে গেলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। গাড়ির জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে আমার কুর্নিশ জানিয়ে আসলাম পাহাড়কে, রাভাংলাকে। বুদ্ধ হয়তো ঠিকই বলেছেন "শান্তি মনের ভেতর থেকে আসে, তাই সেটা ছাড়া শান্তির অনুসন্ধান করো না।" পাহাড়ে একদিনের এই স্নিগ্ধ প্রশান্তির স্মৃতিই হয়তো শহরে কোনো একদিনের মনের সুখদুঃখের দোটানায়  মাধুর্য্য এনে দেবে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri