সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

সেই বারান্দা থেকে/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

সেই বারান্দা থেকে
মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

দাঁড়িয়েছিলাম দশবছরের একা থাকার রেলিঙ বারান্দায়। অন্ধকার ঘন হয়ে এলেও দূরে রাস উৎসবের গান জগঝম্প। অদ্ভুত শৈশব থেকে দুম করে বড় হয়ে গেলেও এ কোচবিহার ছোটবেলা টেনে এনেছিল। এবার ফিরে যাওয়ার পালা।... ঠিক তখনই মনে হয় মাকে বলা হল না তো! ছায়ার আঁচল ঘুরতে থাকে। দূরে অন্ধকার গাছে কালো রঙের ফিঙে লেজ ঝুলিয়ে বসে। শীতে যেমন, বৃষ্টিতেও তেমনি। আমার বারান্দার ঝুলে থাকা রাউটারের তারে কখনো বসে এসে। ওদের কি জল দেব! না। ওরা তো ঐ দোয়েল গুলোর মতো নয়। ওরা ভয় পায় কাছে গেলে। দোয়েল চামচে জেলি ধরলেও খেয়ে নিত, জানলার ধারে জবা গাছের গুচ্ছ খড়কুটোর বাসায় বসে। ডিমে তা দিতে দিতেও...কি আনন্দ। স্কুল দেরি হলে হোক।পাখি তো খেয়েছে। আহা! এই আধো অন্ধকার বারান্দা থেকে তোর্সার পাড় বাঁধানো বাঁধ দেখা যায়।ওরা সব বলে সুটুঙ্গার বাজার। সবুজ শাকসবজি, মাছ সব পাওয়া যায়। কিন্তু ঐযে গাড়ি থেকে নেমে একটু দাঁড়ানো বাঁধ ঘেঁষা রাস্তায় কোনদিন হয়ে উঠল না। আর রাতের প্রতিচ্ছায়ায় কেমন টান থেকে গেল। হিম ঝরা শীত নদীর ওপারের জঙ্গল থেকে বন‍্য বাঘের চিৎকার আর রেলিঙের ধারে ছুটে আসা কল্পনায় মেখে নিতে নিতে কেমন ছোটবেলার আলেয়ার ভয়ের কথা মনে হয়। একার এ রেলিঙ বারান্দা আমার নয়। ছিল না কোনদিন। এ দশবছরে ভুলে গিয়েছিলাম। কত বই হিজিবিজি লেখায় ভরা পৃষ্ঠা, ছেঁড়া কাগজের পাহাড়। অজস্র ডায়রী...এসব কি রেখে যাব! সব পেটিকায় বেঁধে নিয়েছি। জানি গৃহযুদ্ধ আসন্ন। নিজের থাকার জায়গা নেই, শঙ্করাকে ডাকে অবস্থা।...এ দশবছর!! সঙ্গের আসবাব, লেপের নরম ওয়াড়, নতুন কম্বলে কেমন ধুলোর গন্ধ এসব কিছু ছেড়ে রেখে, কিছু নিয়ে পাড়ি দিতে হবে গন্তব‍্যে।সে কি নিজস্ব আস্তানা! সে কি আমার চিন্তার প্রশস্ত ঘর! জানা নেই কি আছে শেষে। কর্মক্ষেত্রের অজস্র ব‍্যস্ততার মাঝখানে টুকরো সময় ঠিক ফাঁক বুঝে আমার কাছে এসে দাঁড়াত টেবিলের ধারে। দুহাত বাড়িয়ে সেটুকু নিয়েছি। আর নিয়েছি বলেই হিজিবিজি লেখায় ভরেছে পৃষ্ঠাগুলো। সেসব উড়িয়ে দিয়ে ছড়িয়ে রেখে চলে যেতে হবে। এ চলে যাওয়ার ভিতরে ভাসবে নদীজল, বারান্দাটুকু থেকে রাস্তার কুকুরগুলো ডাকবে, কখনো টোটো অলাদের ঝগড়া কিংবা সওয়ারি নেওয়ার ধরণ আমার সাদা চোখ তুলে নেবে। কখনো বা তোর্সার ধারের বস্তী থেকে উঠবে মড়াকান্না। ধমকানিতে থেমেও যাবে সে আবেগ। আমি লিখে ফেলব 'রুদালি'গল্প। এভাবে বয়সী একার ঘর গুছিয়ে ছড়িয়ে এলোমেলো কাপড়ে আমার মতো আমি হয়ে ওঠা এটাও সময়ের চাওয়া।যেমন বাবার চাওয়া ছিল, আমি মাটির কন‍্যা হয়েই থাকি। সে কি হয়, সে হয়নি। আমাদের কোন মাটি নেই। মায়ের সম্পত্তি আইনি বলে কন‍্যার। আবেগে সে সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে আসে ভায়েদের দাদাদের। তারা ভাল থাকুক এই অনুভবে।... ঠিক এখন এই রাতের অন্ধকার পেরোলে আর একটি দিনের মেয়াদ আমার সই সাবুদের। সেখানেও পাশাপাশি শুরু আবেগ ঝেড়ে ফেলে স্বার্থের গান। কার কটা সই বাকি, কার কি পাওনা বাকি থেকে গেল তার হিসেব। সাদা চোখ কখনো দিঘি হয়। রেলিঙ বারান্দা এখন জল থৈ থৈ।একটু পর গভীর রাতে মেলা ফেরত পসারি, দোকানী তাদের গাড়ি নিয়ে ফিরবে। সে শব্দেও কান পাতব আমি। এভাবেই কেটে যাবে দুটো রাত। আমার ছায়াশরীর রেখে যাব ঠিক যেমন করে শৈশব রেখেছি কোন উঠোনঅলা বাড়ির স্বপ্নে। রেলিঙ বারান্দা ঠিক এমনিই থাকবে। মানুষ বদলে যাবে শুধু।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri