সেই অনুভূতি আজও জাগে/চিত্রা পাল
সেই অনুভূতি আজও জাগে
চিত্রা পাল
কিছু কিছু অনুভূতি জীবন ভোর জেগে থাকে, সহজে তার বিস্মরণ হয় না। স্নেহ প্রেম দয়ামায়া সঙ্গে মানবিকতার অনুভূতি যা আজীবন থেকে যায় মানুষ হিসেবে আমাদের সঙ্গে তার যাত্রা যে শুরু হয়েছিলো আমাদের মহামানবদের সংস্পর্শে এসে তা যেন নতুন করে অনুভূত হলো অনুরাধাপুরায় এসে। বাস থেকে নামতেই আমাদের সঙ্গী প্রদর্শক বললেন, এই সেই পথ যেখান দিয়ে সহস্র শতাব্দী আগে সম্রাট অশোকের। পুত্র রাজা মহেন্দ্র ও রাজকুমারী সংঘমিত্রা হেঁটে গিয়েছিলেন। আমরা অনেকেই অভিভূত সেই পথে এসে। সম্রাট অশোকের পুত্র কন্যা তাঁর আদেশে এসেছিলেন বুদ্ধদেবের অহিংসা জীবপ্রেমের বাণী প্রচারে, সঙ্গে এনেছিলেন সেই বোধিবৃক্ষের একটি ছোট্ট চারা।
বুদ্ধগয়ায় যে বৃক্ষ চ্ছায়য় বসে তিনি তপস্যা করেছিলেন তারই একটি। এখানে প্রস্তর খন্ডে উৎকীর্ণ সেই চিত্র সিংহলের মজারাজা নতজানু হয়ে সেই বৃক্ষ চারা গ্রহণ করছেন বৌদ্ধভিক্ষুনীর হাত থেকে। এ যে কত মহৎ দান আর কত বড় গ্রহণ তার ব্যাপ্তি কত প্রশস্ত তা ভাবলেই শরীরে শিহরণ জাগে। সম্রাট অশোকের প্রথমা পত্নী মহাদেবীর পুত্রকন্যা মহেন্দ্র ও সংঘমিত্রা যে পিতার অনুসারী হয়েই এখানে এসেছিলেন, বাস করেছিলেন, তারপরে কত কাল কত শতাব্দী চলে গেছে বুদ্ধ গয়ায় এক মহামানবের প্রাপ্ত অনুভূতি যে দেশে দেশে সাগর পেরিয়ে এমন করে বিরাজ করবে আজও তা ভাবলেই অবাক হই।
পৃথিবী জুড়ে আজও সীমাহীন দুঃখ যন্ত্রনা, যা মানব জীবনের সঙ্গেই বহমান ফেলে দিতে পারবো? না তা নয়, তবে তার তাপ কমাতে পারার চেষ্টা। সেই হাজার হাজার বছর শুরু হয়েছিল আমাদের দেশেই। এখানে এসে এই সময়ে কল্পনার লাগাম ধরেই চলতে শুরু করলাম। কল্পনার হাত ধরে চলার স্থায়িত্ব কতখানি জানি না, কিন্তু টান একটা থেকেই যায়। ওই বিশাল পরিব্যাপ্ত সীমাহীন মানসের কাছেআমরা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র তর। একদিন এই পৃথিবীর মানুষ চেষ্টা করেছিল ক্ষুদ্র তার খোলস কেটে ফেলতে। এখন শুধু বর্তমানের স্রোতে ভাসা। ওই শুদ্ধ জীবনচর্চা হয়তো বইয়ের পাতায় থেকে যাবে জানি না ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কিছু পাবে কিনা।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴