সে আছে হৃদয়ে/শ্যামল পাল
সে আছে হৃদয়ে
শ্যামল পাল
তোকে ধরে নিয়েই স্মৃতি সাগরে ডুব দিই?
৫২তম জন্ম বর্ষ, ২ যদি মিটিয়ে দিই শুধুমাত্র থাকে ৫, '২৫' থেকে ২ মুছে নিলে, এখানেও শুধুমাত্র থাকে ৫, নিজস্ব পরিবার, পরিজন, আত্নীয় স্বজন, বন্ধুদের, ভালোবাসার মানুষদের ফাঁকি দিয়ে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করে তুই না ফেরার সাগরে পাড়ি দিলি। সেটাও অভিশপ্ত ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫....।
পার্থ মেধাবী ছাত্র ছিল বীরপাড়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। মেধাবী শিক্ষার্থীদের নামের তালিকায় অনিন্দ্য সেনগুপ্ত নামটি জ্বলজ্বল করছে (মাধ্যমিকের ফলাফল)।
খেলাধুলা ওর রক্তের মধ্যেই ছিল। ফুটবল তার মধ্যেই প্রিয়। বীরপাড়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ফুটবল দলের অধিনায়কত্ব সামলিয়েছে সুনামের সঙ্গে। মাঠের মধ্যে চীনের প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে, ঠান্ডা মাথায় সম্পূর্ণ দলকে পরিচালনা করার পারদর্শিতা অর্জন করেছে। শখের বশে, ক্রিকেটটাও ভালো খেলত। পদার্থবিদ্যা, স্নাতক ১৯৯৬ সনে ভারতীয় ডাক ও তার বিভাগের চাকুরীতে যোগদান। পড়াশোনাতে কৃতি ছাত্র, খেলাধুলাতেও পারদর্শী -এই যুগলবন্দী সমান অধিকারি অনিন্দ্য সেনগুপ্ত (পার্থ)।
পার্থর বাবা আমার শিক্ষক মহাশয়, শ্রদ্ধেয় শ্রী অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত ভালো ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন খেলতেন। বীরপাড়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় স্যারের ভুমিকা অনস্বীকার্য। ছেলেবেলাটা পার্থর কেটেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবাসে। পাশেই থাকতেন আরেক জন আমার শিক্ষক মহাশয় শ্রদ্ধেয় শ্রী জীতেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী (কবি), পাশেই থাকতেন, আরেক জন, আমার শিক্ষক মহাশয় শ্রদ্ধেয় শ্রী তুষার বন্দ্যোপাধ্যায় (কবি, বিশিষ্ট লেখক)। বনভূমিতে অবাধ বিচরণ ছিল পার্থর হয়তো বা। সেখানে পেয়েছিল সাহিত্যে, কবিতা লেখার রসদ। সাহিত্য কবিতা লেখা পড়ার, সুবাদেই উত্তরের কিছু কবি সাহিত্যিকের সাথে ওর সম্পর্ক ছিল নিবিড়, আত্মার আত্মীয়। স্বর্গছেঁড়া সাহিত্যিক কবি সমরেশ মজুমদার (গয়ের কাটা), শ্রী বেনু সরকার(কবি), শ্রী সুকান্ত নাহা (কবি), বাগবাগিচা সম্পাদিকা শ্রীমতি শ্যামশ্রী দাস, শ্রীকানাই চ্যাটার্জি (নাট্য ব্যক্তিত্ব), শ্রী কাঞ্চন রায় (কবি), শ্রীমতি রুনা লায়লা খানম (কবি লেখক) ফজলুল হক (তোতা, কবি) শ্রী শিশির রায়নাথ(কবি)। পার্থ বীরপাড়ার, গুণীজনদের নিয়েই এই শুষ্ক জমিতে কবিতা, সাহিত্য চর্চার চারাগাছ রোপন করেছিল। রবিবারের সাহিত্য আড্ডা নতুন ভোরের সূচনা করেছিল। পার্থর মন ছিল সাগরের মতো। আপদে বিপদের সময়, মানুষের পাশেই দাঁড়িয়ে তাকে সাহায্য করা, কত ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করেছে করোনার সময় কত মানুষেরই পাশে দাঁড়িয়েছে, আমরা সকলেই জানি। যে কোন সমস্যা খুব সুন্দর ঠাণ্ডা মাথায়, সমাধান করতে পারতো। সবচেয়ে বড় গুণ ছিল প্রচার বিমুখ। নিজস্ব ব্যাপারে কোন প্রচার হোক সেটা চাইতো না কখনও। সময়ের কাঁটা টিক টিক করে বয়ে চলেছে, আজ তোর চলে যাওয়ার এক মাস হল। তোর স্মৃতি রেমন্থন করব কল্পনাতেও আসেনি। পরপারের কথা বলে কিছু আছে আমার জানা নেই। শেষে বলি, যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴