সুমনা দত্ত ঘোষ-এর আলোচনায় প্রমোদ নাথ-এর 'আদিবাসী অসুর সমাজ ও সংস্কৃতি'
সুমনা দত্ত ঘোষ-এর আলোচনায় প্রমোদ নাথ-এর 'আদিবাসী অসুর সমাজ ও সংস্কৃতি'
আদিবাসী অসুর সমাজ ও সংস্কৃতি
লেখক: প্রমোদ নাথ
প্রকাশক : এখন ডুয়ার্স
দ্বিতীয় মুদ্রণ: ডিসেম্বর ২০২২
পৃষ্ঠা সংখ্যা ১১২
মূল্য ১৯৫ টাকা
আই এস বি এন 978-81-956532-7-0
লেখক প্রমোদ নাথ, জন্ম ২২ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬, বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায়। তিনি ডুয়ার্সের লোক সংস্কৃতি আকাদেমির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ক্ষেত্র সমীক্ষার ভিত্তিতে উত্তরের লোক সংস্কৃতি ও আদিবাসী চর্চার সাথে যুক্ত বিষয়ে তাঁর ৩৯টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা এবং অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগার কর্মী।
লেখক তার এই বইটি উৎসর্গ করেছেন ক্ষেত্র সমীক্ষা করতে যারা সহযোগিতা করেছেন তাঁদের অর্থাৎ জগন্নাথ সিং, সুধা অসুর, প্রকাশ অসুর, মাধুরী অসুর ও টিটুস্মা অসুরকে।
'Asure, small Non-Ariyan tribe of Lohardanga and eastern protion of Sangula who lived almost entirely by iron- melting'
- Risley
Risley র এই কথা উদ্ধৃত করে লেখক অসুর সম্প্রদায়ের আদি জীবিকার উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, উত্তরবঙ্গের সমতলের চা বলয়ের স্থানীয় আদিবাসী তথা মেচ, রাভা, গারো, টোটো সম্প্রদায়ের লোকেরা চা বাগানে শ্রমিকের কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন না। তাই ইংরেজরা রাঁচি, দুমকা, সাঁওতাল পরগনা থেকে ওঁরাও, সাঁওতাল, মুন্ডা, অসুর প্রভৃতি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে আসেন। আর চা চাষের অনুপযুক্ত জমিতে কৃষি কাজ করার জন্য এদের মধ্যে জমি বন্টন করে দেন। বিকল্প জীবিকার সন্ধানে ডুয়ার্স তরাই এ থেকে যায় অসুর সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়ের কথ্য ভাষা 'আসুরি'। যদিও এরা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন চা বাগানে কাজের সূত্রে সাদরি, হিন্দি এবং বাংলাতেও কথা বলে থাকেন। এদের নিজস্ব কোন লিপি নেই তাই দেবনাগরি লিপি এঁরা ব্যবহার করে থাকেন।
আলোচ্য গ্রন্থে লেখক অসুর সম্প্রদায়ের নানা দিক তুলে ধরেছেন।
সূচিপত্রে রয়েছে:
উৎস সন্ধানে
সমাজ জীবন
বেশভূষা গহনা
গৃহস্থলী সামগ্রী
গোত্র
আত্মীয়তা সম্পর্ক
অসুর খাদ্য ও পানীয়
উত্তরাধিকার
পূজা পার্বণ
অসুর সমাজে নৃত্যচর্চা
অসুর সম্প্রদায়ের কয়েকটি গান
অসুর শব্দ ভান্ডার
কয়েকটি অসুর বাক্য
অর্থনৈতিক অবস্থা
তথ্যসূত্র
ক্ষেত্রসমীক্ষা করে লেখা এই বইটি। লেখক প্রমোদ নাথ লিখেছেন, ১৯৯১ সালে জনগণনা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে অসুর সম্প্রদায়ের সংখ্যা চার হাজার আটশো চৌষট্টি জন তার মধ্যে উত্তরবঙ্গে জলপাইগুড়ি আর আলিপুরদুয়ার জেলায় রয়েছেন তিন হাজার একশ আট জন। তাছাড়া দার্জিলিং ও কোচবিহার জেলাতেও বেশ কিছু অসুর জনজাতির মানুষ রয়েছেন। তথ্যসমৃদ্ধ এই বইটিতে অসুর সম্প্রদায়ের উন্নতিকল্পে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে। এবং আদিবাসীদের তালিকাভুক্ত হয়েও কেন তারা বঞ্চিত সে প্রশ্ন তুলে ধরেছেন লেখক। তৎকালীন অসুর সম্প্রদায়ের বেশ কিছু পুরুষ মহিলার ছবি ছাপিয়ে বইটির উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বইটির প্রচ্ছদে চাবাগানে অসুর রমনীর ছবি এক কথায় দূর্দান্ত। সহজ সরল ভাষায় লেখা এই বইটি অসুর সম্প্রদায়কে নিয়ে লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি। উৎসুক পাঠকদের অসুর জনজাতি সম্পর্কে জানার ইচ্ছাকে তৃপ্ত করবে এই বইটি সেই প্রত্যাশা রাখি।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴