সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
07-July,2024 - Sunday ✍️ By- কবিতা বণিক 233

সুন্দরী সেই বনভূমি/কবিতা বণিক

সুন্দরী সেই বনভূমি
কবিতা বণিক

                           
 শাল, সেগুন, শিশু, লালিগুরাস,  জারুল,চিকরাশি ইত্যাদি গাছেরা জঙ্গলে মাথা উঁচু করে  তাদের  যে জঙ্গল আবাসন তৈরি করে  তাদের সাথে আমার বেশ পরিচয় আছে।  শীতে এদের একটু রুক্ষতা দেখা যায় ঠিকই কিন্তু বর্ষায় তারা নবযৌবন লাভ করে। বৃষ্টিস্নাত গাছেদের  জলসার যে রূপ দেখেছি মনে হয়েছে এর তুলনা হয় না। আশ্চর্য পৃথিবীতে দেখলাম জঙ্গলের  অন্য এক রূপ।  জলজঙ্গলের এই রূপ মনে হয় জলের ওপর ভাসমান জঙ্গল। চিরসবুজ এই জঙ্গলের উচ্চতাও অতটা নয়। লঞ্চ থেকে দেখা  ভাসমান জঙ্গলের পাখিদের কলকাকলি আর ছলাৎ ছলাৎ শব্দ ছাড়া নিস্তব্ধ পরিবেশের  ভয়াবহ অথচ  অতীব সুন্দর    মায়াময়  যে ছবি মনে তৈরি  হয় সে যেন  সবুজ জলপরীর ছবি। গভীর চওড়া জলরাশি,  কত নদী - গঙ্গা, মাতলা, হলদী, বিদ্যাধরী, শ্যালা নদী  এছাড়াও আরও আছে। হলদী নদী  হলো কেলেঘাই ও  কংসাবতী নদীর যুগ্ম প্রবাহের নাম।  সব নদী এখানে বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে। আসলে নদীগুলোর মোহন রূপের  ঐশ্বর্যে  ভরপুর এই  জল তার সাথে  দুপাশে আছে  ম্যানগ্রোভের ঘন বন।   আমরা  সরকারি  লঞ্চে  একরাত দুদিনের জন্য বুক করেছিলাম।  আমাদের লঞ্চ চলছে হলদী নদীর  মধ্য দিয়ে।  দূরে দেখা যাচ্ছে  নদীর তীর ঘেঁসে  জঙ্গল  নেট দিয়ে ঘেরা । এদিকে বাঘ মহারাজের দৌরাত্মি  হয়ত বেশি।   তাই সাবধানতার জন্য মাঝে মাঝে লাল ঝাণ্ডা পোঁতা আছে। কোন জায়গায় দুদিকে জঙ্গল মাঝখানে সরু নদী , খাঁড়ি বলে  একে। দূর থেকেই দেখলাম একটা নৌকোয়  দুজন লোক  ঢুকে গেল খাঁড়ির ভিতর। যেহেতু জলা ভূমি আর আঠালো  মাটি  তাই এখানে গাছের মূল  মাধ্যাকর্ষনের বিপরীতে   শ্বাস নেওয়ার জন্য মাটির ওপর জেগে ওঠে । এদেরকে শ্বাসমূল বলা হয়। শ্বাস মূল খুব শক্ত হয়।   বাঘ তার শিকার টেনে নিয়ে যায় জঙ্গলের মধ্য দিয়ে  তখন শক্ত এই শ্বাসমূলের আঘাতেই  সেই দেহ ছিন্ন ভিন্ন হতে থাকে। এখানকার  বেশীরভাগ গাছই  চিরসবুজ।  এখানে  বেশীর ভাগ গাছের গঠন একই রকম।   খুব বেশি লম্বা হয় না।   ওয়াচ চাওয়ার থেকে পুরো বনভূমির  মাথা দেখা যায়। সবুজ মখমলের চাদর বিছানো যেন। সুন্দরী গাছের আধিক্য বেশী বলে এই বনাঞ্চল  সুন্দরবন  নামেই বিশ্ববিখ্যাত।  এছাড়াও নানান প্রজাতির গাছ আছে।  এই অভিনব সুন্দরবনাঞ্চলে   নানান প্রজাতির গাছ থাকলেও  বেশীর ভাগই ম্যানগ্রোভ ধরণের  তার মধ্যে  সবচেয়ে বেশি সুন্দরী গাছ । আর আছে গরাণ , গেওয়া , হেঁতাল , কেওড়া, হোগলা জাতীয়, ফার্ন জাতীয়, তৃণ জাতীয় নানান উদ্ভিদ ।  নোনা  আঠালো  জলা  ভূমি  বসবাসের উপযুক্ত না হলেও  দ্বীপ গুলোতে মানুষ বসবাসের উপযুক্ত করে প্রকৃতির সাথে  ও বন্যপ্রানীর সাথে লড়াই করে  দিন অতিবাহিত করছে।   সামুদ্রিক ঝড়, জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ  এছাড়াও   সাপ, ও অন্যান্য  পশু দের  আক্রমণ  সর্বদা ওঁত পেতে থাকে।  এখানে বাঘ নদী সাঁতরে  পার হয়ে আসে।  বাঘেরা  বেশির ভাগ হেঁতাল বনের  হলুদ, সবুজ  , কালো পাতার আড়ালে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। গাছের পাতা আর বাঘের গায়ের রঙ প্রায় মিলেমিশে যায়।  এরাই এই বনের  রাজা  বিশ্ববিখ্যাত  “ দ্যা  রয়্যালবেঙ্গল টাইগার।”। এছাড়া বাদামি রঙের কচ্ছপ,  লাল বানর, হরিণ,  শিয়াল, শূকর, কুমির  , হায়না ও অন্যান্য প্রাণী ছাড়াও এখানে প্রচুর মৌচাক দেখা যায়।  এখানে মানুষ প্রাণ হাতে করে  বনের  ভেতর যায় মধু সংগ্রহ করতে, কাঠ কাটতে । কাঁকড়া, মাছ  ধরে  আনে। এসবই এদের জীবিকা নির্বাহের রসদ।                
                           আমরা এসে পড়েছি  সজনেখালি  টাইগার রিজার্ভে।  জঙ্গলে ঢোকার পারমিট নিয়ে  আসা হল।  এখানে বনদেবীর মন্দির আছে।  সব ধর্মের মানুষ  এখানে  বনবিবি ও বাঘদেবতার পূজো দিয়ে জঙ্গলে ঢেকে।   দেখলাম কাঁকড়া গাছের মাথা ছেঁটে বেড়া  দিয়ে সাজানো হয়েছে সব সৌন্দর্যায়নের জন্য। ট্যুরিষ্টদের  দর্শনের জন্য  মাটি থেকে উঁচু  ব্রিজের মতো শক্ত নেট দিয়ে ঢাকা  মাইলের পর মাইল  কাঠের ট্রেল  তৈরি করা আছে। নীচে যেহেতু জলা আঠালো জমি, শক্ত শ্বাসমূল  মাথা উঁচিয়ে আছে এছাড়াও বন্য প্রাণীদের থেকে সুরক্ষার জন্যও বটে। নিঃশব্দে সবাই চলেছি। নীচে দেখা পেলাম হরিণের। বাঘের পায়ের  ছাপের  দেখাও পাওয়া গেল।  এখানে মাঝে মাঝে মিষ্টি  জলের  জলাশয় করা আছে বন্যপ্রাণীদের জন্য।  ওয়াচ টাওয়ারে  এসে উপরে উঠলাম।  কুমিরের  সংরক্ষণের জন্য  একটা পুকুর আছে।
দেখলাম গাছের মগ ডালে  লম্বা  মোটা ঠোঁট ওয়ালা বেশ বড় বড়  কতগুলো পাখি । এরা জলচর পাখি। দেখে খুব ভালো লাগলো, শুনলাম ওদের নাম মদন টাক পাখি। খাবারের  খোঁজে জলে নামে এরা।  এখানে মাছরাঙাদের গায়ের রঙ খয়েরি।  শঙ্খচিল, বড় বক, সিঁদুরে মৌটুসীরও দেখা পেলাম।  সে অবশ্যই আমাদের দেশের অতিথিদের  সৌজন্যে । আমাদের লঞ্চে ফ্রান্স ও ইউ ,কে থেকে আসা চারজন বিদেশি  ছিলেন।  তারা খুব উপভোগ করছিলেন বড় বড় বায়নাকুলার দিয়ে সব খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলেন।  তাদের বাঙালী তেল ঝাল রান্নায় পেটের  গোলমাল হচ্ছিল।  আমাদের কাছে থাকা হোমিওপ্যাথিক ওষুধে ওদের শরীর  সুস্হ করে  আমাদের মনেরও  মিল  করে দিয়েছিল।  বেলা গড়িয়ে এলে  মোহনার সূর্যাস্ত দেখে ধন্য হলাম।  রাত্রে লঞ্চ জলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে। আমাদের বলা হয়েছিল আমরা যেন সব জানলা দরজা বন্ধ রাখি। কারণ বাঘ নদী সাঁতরে নিঃশব্দে হামলে পড়ে নিয়ে চলে যায়।  তেমনি কুমিরের ও দৌরাত্মি আছে। রাতে জ্যোৎস্নার আলোয় জলের মায়াময় জলছবি মনের ক্যানভাসে কত না ছবি আঁকল। ভয় মিশ্রিত  দুরু দুরু বুকে বিছানা আঁকড়েই ভাবলাম রাত কাটবে। কিন্তু জ্যোৎস্নারাতের আলো আমার চোখের পাতায় মায়াঞ্জন পরিয়ে দিল। সকালে লঞ্চ যাত্রা করল সুধন্যখালি টাইগার রিজার্ভ এর উদ্দেশ্যে।  এটা কোর এড়িয়া। এখানে অনেক খাঁড়ি আছে।  জীব জন্তুরা  ঐ খাঁড়ি দিয়ে সাঁতরে  এ জঙ্গল থেকে অন্য জঙ্গলে যায়।  এখানে খাঁড়ি গুলোতে প্রচুর মাছ ও কাঁকড়া পাওয়া যায়।  এলাকাটা ডেঞ্জার জোন বলে যাতে মানুষ  মাছ কাঁকড়া ধরতে না যায় তাই নেট দিয়ে ঘিরে রাখা আছে।    লঞ্চ চলেছে এগিয়ে । অনন্ত জলরাশি  দুপাশে  মনে হচ্ছে সরু হয়ে  সবুজ  জঙ্গলের লাইন ক্রমশঃ মিলে যাচ্ছে। সুধন্যখালি  প্রায় যখন এসে পড়েছি হঠাৎই দেখতে পেলাম অনেক বানর  নেট ঘেঁসে  গাছের ওপর দিয়ে  খাঁড়ির ওপারে বড় বড় গাছের  ওপর চলে যাচ্ছে। মনে হল বাঘের আওয়াজ পেয়েই সব পালাচ্ছে।  একটু বাদে  সুধন্যখালিতে লঞ্চ এসে ভিড়ল  সরকারী অফিসের গেটে।   অনেক সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয়। এই  জায়গাটা জঙ্গলের কোর এরিয়া। জঙ্গলে ঢোকার পারমিট নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করার মুখে এখানেও সেই  বাঘদেবতা ও বনবিবির মন্দির আছে।  ফরেষ্ট ডিপার্টমেন্টের অফিস, স্টাফ কোয়াটারস,  ওয়াচ টাওয়ার ,  দর্শকদের জন্য এখানেও উঁচু বাঁধের উপর নেট দিয়ে ঘেরা   তবে এখানে পাকা রাস্তার ট্রেল।  গাছ চেনার জন্য গাছের গায়ে নাম লেখা আছে।    ওয়াচ টাওয়ারে উঠে  পুরো জঙ্গলের অসাধারণ ল্যাণ্ডস্কেপ দেখে মন ভরে গেল।  মিঠে জলের পুকুর, সব পশুরা জল খেতে আসে এখানে। আর ঘন জঙ্গল। যে জঙ্গলের সম্পূর্ণ টা দেখা যায়।  আর মাঝে মাঝে  লম্বা খোলা  জায়গা দিয়ে যেন  বনভূমিকে কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তাতেই ল্যাণ্ডস্কেপটা খুব সুন্দর দেখায়। ফিরে এলাম  লঞ্চে।  এবার  চললাম বাড়ির পথে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri