সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
04-June,2023 - Sunday ✍️ By- অভিজিৎ দাশ 379

সুন্দরী কুমাই : স্বল্প পরিচিত একটি পাহাড়ি গ্রাম/অভিজিৎ দাশ

সুন্দরী কুমাই : স্বল্প পরিচিত একটি পাহাড়ি গ্রাম
অভিজিৎ দাশ

              পাহাড়, বন আর ঝরণার জল দেখার জন‍্য মনটা সবসময়ই প্রস্তুত থাকে। আর তাই মাঝে মাঝে ডুয়ার্স ঘেঁষে বেরিয়ে পড়া।আমরা পাঁচ জন সহকর্মী মিলে ছুটে যাই হিমালয়ে। স্থান কখনোই পূর্ব নির্দিষ্ট থাকে না। এবারও এর ব‍্যতিক্রম হয়নি। এক সহকর্মীর চার চাকার গাড়িতে যেতে যেতেই আমরা গন্তব‍্য হিসেবে কুমাইকে স্থির করি। আমরা বড়ো সৌভাগ‍্যবান-- পাহাড়, বন ও ঝরণা আমাদের হাতের নাগালেই আছে, হাত বাড়ালেই যেন ছোঁয়া যায়। স্থান নির্বাচন করতে করতেই আমরা খুনিয়া মোড় পৌঁছে যাই। এখান থেকে বন ঘন হতে শুরু করল। চাপড়ামারী নিজস্ব রূপে হাজির হয় চোখের সামনে। চলার পথে মূর্তি নদী, ছোট ছোট ঝোরার কুলুকুলু শব্দ আর বনের নিজস্ব ঐকতান শুধু চোখ দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে করতে চললাম। হঠাৎ দেখলাম রাস্তায় সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছে। আসলে হাতির পাল রাস্তা পার হচ্ছিল। এভাবে বন্য হাতি কাছ থেকে দেখিনি। খুশিতে মন ভরে গেল। জলপাইগুড়ি জেলা পেরিয়ে গাড়ি পাহাড়ে উঠতে থাকল। বনের পথে চপলা হরিণীর চকিত চাহনী দেখা চোখে পড়ল। আর বানর ও ময়ূর তো হামেশাই গাছে গাছে দেখা যায়। বনভূমি, ছোট ছোট বসতি এলাকা পেরিয়ে উঠে এলাম আপার কুমাইতে। পথের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এই পথে পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল ও ভুটানের পার্বত্য অঞ্চল যেন লুকোচুরি খেলে। দূরে জলঢাকা নদী রূপোলি সুতোর মতো দেখায়। হালকা কুয়াশা মাখা পাহাড় যেন স্বর্গীয় সৌন্দর্য সৃষ্টি করে রেখেছে। পাহাড়ের কোলে সূর্য ওঠা দেখা যেমন অন্য অনুভূতি সৃষ্টি করে তেমনি সূর্য অস্ত যাওয়া এর চেয়েও সুন্দর দেখায়। সূর্যাস্ত দেখার জন্য হ‍্যালি ভিউ পয়েন্ট আছে। এই ভিউ পয়েন্ট থেকে হিমালয়ের বেশ কয়েকটি উঁচু পর্বত শৃঙ্গ পরিষ্কার দেখা যায়। আর গুদারায় ভিউ পয়েন্ট থেকে কালিম্পং ভ‍্যালি, দার্জিলিংয়ের চা বাগান ও তিস্তা নদী দেখা যায়। চোখ ফেরাবে সাধ্য কার? সন্ধ্যের পর পরিষ্কার আকাশে তাকালে তারাগুলিকে দেখে মনে হয় হাজার বাতি জ্বলে আছে। দুচোখ ভরে দেখলাম। আজ আমরা সৌভাগ্যবান আকাল বড্ড পরিষ্কার।।
          পাহাড়ে পায়ে হেঁটে বেড়ানোর মজাই আলাদা। মাছ ধরার আগ্রহ থাকলে নদীতে ছিপ নিয়ে বসা যেতে পারে। অবশ‍্য আমরা বসিনি। পাহাড়ের কোলে সবুজ চা বাগান ছবির মতো। পাহাড়ী মানুষ ঝুম চাষ করে। আগ্রহ থাকলে আপনি গোর্খা সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার সাথে মিশে যেতে পারেন। চাইলে পাহাড়ে ট্রেকিং করা যেতে পারে। আশপাশে লালিগুরাস, ঝালং, বিন্দু, গোরুবাথানের মতো বহু পর্যটক আকর্ষণ কেন্দ্র অতি সহজেই ঘোরা যায়। এমনকি নতুন কোনো  অফবিট পর্যটন কেন্দ্র আবিষ্কারও করা যায়। আর নিদেনপক্ষে নির্জনে কাটাতে চাইলে সারাটা দিন পাহাড়ের শোভা দেখেই কাটানো যায়। দ্বিশতাধিক বছরের প্রাচীন গুম্ফা ঘুরে আসা যায়। আমরা কিছুই বাদ দেইনি। সবকিছু আস্বাদনে মনের ভাড়ার পূর্ণ হয়ে উঠেছে। থাকার জন্য এখানে অনেক হোমস্টে তৈরি হয়েছে। আমরা আপার কুমাই গোর্খা হোমস্টেতে ছিলাম। হোমস্টে সত্যিই নিজের বাড়ি বলে মনে হয়। আতিথেয়তায় কোনো ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায় না। এখানে পাহাড়ী দেশি মুরগির ঝোলের সাথে গরম ভাত, জৈব সারে চাষ করা সবজির স্বাদ এখনও জিভে লেগে আছে। বেশকিছু রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। থাকা-খাওয়ার খরচ সাধ্যের মধ্যেই আছে। গোর্খা অধ্যুষিত এই গ্রামে ভাষাগত সমস্যায় পড়তে হয় না। তারা বাংলা বোঝে ও বলতে পারে। রাস্তাঘাট মানুষের মনের মতোই পরিষ্কার। যেতে হলে আগে থেকে হোমস্টে বুক করে যাওয়াই ভালো।
       ফেরার পথে সামসিং-মেটেলি-চালসা পথে ফিরে চললাম। সারিবদ্ধ চা বাগানের মধ্যে দিয়ে পিচ ঢালা রাস্তা মনে হয় "যেন হাজার বছর ধরে পথ হাটিতেছি"। সন্ধ‍্যার পর কোলাহলমুখর এক-একটি জনপদ পেরিয়ে ফিরে আসি আপন নীড়। স্বাভাবিকভাবেই জাবর কাটতে থাকি পাহাড়, বন আর ঝরণার জল।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri