সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
18-June,2023 - Sunday ✍️ By- রাজর্ষি দত্ত 437

সুন্তালা বগান বাটা... /রাজর্ষি দত্ত

সুন্তালা বগান বাটা... 
রাজর্ষি দত্ত


সন্ধ্যাবেলায় বাড়ি ফিরে সুহাস দেখল মৌনী এসেছে। 
মৌনী আর সুহাসের বউ অনি একই অফিসে কাজ করে।
অনি বলল “দ্যাখো মৌনী কি বলছে !”
মৌনী হাসল “সত্যি দাদা–এত জায়গা গেছি, কিন্ত সেবারের সিটং-টাকে ভোলা যায় না”। 

সুহাস ভাবলো এটা একটা বিরাট কমপ্লিমেন্ট! মৌনী প্রচুর ঘুরেছে–কাশ্মীর থেকে উটি, বমদিলা থেকে স্পিতি, মায় থাইল্যান্ড-ব্যাংকক; সেখানে দার্জিলিং-এর এই লেপচা গ্রামটি…

২০১৯ সালের নভেম্বর। কোথাও একটা যাবার প্ল্যান হচ্ছিল। একদিন এক রিসর্টের খোঁজ পাওয়া গেল যার মালিক কলকাতার, নাম সুব্রত তালুকদার। তাকে ফোন করার পর – 

“সুব্রতবাবু বলছেন? আমি মালবাজার থেকে-”  
“ইয়া, ট্যালুকদার স্পিকিং”
“আপনার রিসর্টে বুকিং করতে চাই…” 
“কব চাহিয়ে? স্যাটারডে? মাফ কিজিয়ে-খালি নেহি হ্যায়, অল অকুপায়েড”। 
“ঠিক আছে…ভেবেছিলাম আপনি বাঙালি…সেজন্য মাফ করবেন!” 

অগত্যা বুবাইদাকে ধরা গেল।ওর নিজস্ব গাড়ি।বছরের তিনশ পঁয়ষট্টি বিয়োগ চৌত্রিশ দিন পাহাড়েই কাটায় পাঁচমেশালি টুরিস্ট নিয়ে। ঐ চৌত্রিশ দিনের গল্প অন্যত্র…
ওই জানালো সিটং-এর কথা। “দুটি রাস্তা আছে যাবা্র। একটা অহলদারা দিয়ে, অন্যটা মংপু …” 
শুনেই সুহাস লাফিয়ে উঠল। রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত মংপু-তে ও তখনও যায়নি। 

যাবার দিন বোলেরোতে বোঝাই হল সুহাসরা তিনজন, ব্যাঙ্কের তরুণ ম্যানেজার শুভেন্দু, ওর বউ সংহিতা ও তাদের দু বছরের ছেলে এবং মৌনী। মৌনীকে তো চেনাই যায় না। জিন্স, লাল স্লিভ, হেয়ার ব্যান্ড, রে-ব্যান, মেক আপ দেখে মনে হয় সিটং নয়, সিঙ্গাপুর যাচ্ছে! 

বাগড়াকোট থাকতে ব্রেকফাস্টের চিন্তা নেই। রাস্তার পাশে ঝুপড়ি দোকানে পেট পুরে লাচ্চা পরোটা, আলুর চোখা, আচার, খোসাওলা তরকার ডাল, চাটনি (আসলে স্যালাড),সাথে ধোঁয়া ওঠা গরম চা খেয়ে নিলে চিন্তাটা চট করে নিচে নামবে না।  

সেবকের বাঁদর,কালিঝোড়ার তিস্তা দর্শনের পর জানালা বন্ধ করতে হল রাস্তার ধুলোয়।বাঁদিকের পাহাড় ধবসে পড়েছে গত বর্ষায়।
রম্ভি বাজারের আগে বাঁদিকে রাস্তাটা খাড়া উঠতে লাগলো আর প্রতিটি বাঁকে নিঝুম পাহাড়ি দৃশ্য শিরশিরে হাওয়ার বার্তায় সবাইকে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিল।পাহাড়ের ঢাল ছেয়ে আছে ছোট ছোট হলুদ সূর্যমুখী ফুলে।হেমন্তেই বসন্তের বাণী নিয়ে।এ বাণীর স্রষ্টা এ পথে যেতেন ডুলিতে চড়ে।

তাঁর চরণধন্য সেই সাদা রঙের বাড়িখানি।একদা মৈত্রেয়ী দেবী, ডঃ মনমোহন সেনের বাসস্থান। একদিকে বন্ধ সিঙ্কোনা ফ্যাক্টরি।ঢোকার অনুমতি নেই।
সামনের লন,বারান্দা,ভেতরের ঘর, সংগ্রহশালা দেখার পাশে ভেসে আসে খালি গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত।গায়ক এখানের দায়িত্বে নিয়জিত নেপালি দাজুর। 

সিটং মংপুর উল্টোদিকের পাহাড়ে। মংপু বাজার থেকে সোজা রাস্তা চলে গেছে দার্জিলিঙের দিকে। উঠবে জোড়বাংলোর কাছে। বাজার পেরিয়ে বুবাইদা ঘুরলো বাঁদিকে, একটা ডাউন রাস্তায়। ঘোরার মুখে মুরগির দোকান। কাটা মুরগিগুলি সাজানো কাচের কেসে ।

ঘণ্টাখানেক উঁচু-নিচু আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে দেখা গেল কলকল করে বয়ে চলা রিয়াং নদী। নদীর উপর লোহার ব্রিজে লাগানো হলুদ, লাল, সবুজ পতাকাগুলি উড়ছে পতপত করে। রোদে ঝলমলে পাহাড়ের গায়ে সুন্দর ছবির মত রঙিন বাড়ীগুলি।

রাই-এর হোম-ষ্টে পথের পাশেই।অন্য পাশে বিরাট খাদ নেমে গেছে নিচে।দূরের দৃষ্টি মনোরম করে দিয়েছে শাড়ির কুঁচির মতো পরতে পরতে সাজানো নীল-সবুজ শৈলশ্রেণি।সুন্দর, পরিপাটি সাজানো হোম-ষ্টের ফেন্সিং বেগুনি কাগজ ফুল আর পাতায় ঢাকা। রংবেরঙের নানা সাইজের টব পাতাবাহার, অর্কিড আর ফুলের গাছ দিয়ে ভর্তি। কিচেনের পেছনে ছোট ক্ষেতে কিছু সবজি লাগানো হয়েছে।

লাঞ্চের পরে সুহাস হাঁটছে আনমনে।কিচ কিচ করে ডাকছে নানা জাতের পাখি। খাদের নিচের ঘন জঙ্গল থেকে একটানা ঝিঝি পোকার ডাক উঠে আসছে উপরে।তার সাথে নানা চেনা আওয়াজগুলি প্রতিধ্বনির  অচেনা মোড়কে ‘গুম গুম’ শব্দে কানে আসে।তা ছাড়া নেই আর কোন অবাঞ্ছিত শব্দের ভিড়। 

“সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসুন – দেখুন কি সুন্দর ভিউ!” ছাদ থেকে শুভেন্দু ডাকছে।একদম ঠিক বলেছে ও। কারণ উপর থেকে এমন তিনশো ষাট ডিগ্রি ভিউ কোথাও পাওয়া মুস্কিল। 

বিকেলের পর বইতে লাগলো জোর ঠাণ্ডা হাওয়া। ঘরে বাতি না জ্বালিয়ে সবাই দেখছে ঝুপ করে নেমে আসা সন্ধ্যা। ব্লুটুথে শুভেন্দু চালিয়ে দিল গান ‘আভি না যাও ছোড় কর…’। তখন বাইরের অন্ধকারে আকাশের তারা আর কালো পাহাড়ের গায়ে আলোর ফুটকি একটু একটু করে উজ্জ্বল হচ্ছে। সেইসাথে সুরের জাদু সবাইকে ঘিরে ফেলেছে অদ্ভুত ভালোলাগায়–এমন কি আর রোজ হয়?

ডাইনিং হলে মোমো খেয়ে বসা হল চেয়ার পাতা লনে। লনের মাঝখানে বনফায়ারের আয়োজন।এসে বসলেন অচেনা কেউ কেউ। সংহিতা গাইলো…তারপর বাকিরা যে যার মত।ডুয়েট নাচ দেখালো অনি আর মৌনী। তা দেখে তারিফ করলো হোম-ষ্টের মালিক ‘দামি হো,দামি!!’ সুহাস, শুভেন্দুও নাচে পা মেলালো, যার নাম ‘ব্যাকরণ মানি না!’ তাই অকারণ লনের দু-তিনটে টব স্থানচ্যুত হল। তবে রাতের জম্পেশ খানা হজমে এই শ্রমদান আবশ্যক ছিল। 

খাওয়ার শেষে আবার ছাদের উপর গিয়ে জমায়েত।রাতের আকাশের কালচে-নীল চাঁদোয়ার বুকে বসানো অসংখ্য হীরের কুচি।হিমের মধ্যে গুটিসুটি হয়ে বসে অনেক রাত অবধি চললো কত গল্প, হাসি-ঠাট্টা, অন্যকে রাগানো...এর নামই তো বণ্ডিং! তখন দূরের কালো প্রহরীর মত পাহাড়ের আলোগুলি প্রায় নিভে গেছে, বাকি আলোও ঝাপসা হয়ে এসেছে কুয়াশায়।

সূর্য উঠে গেলেও তা পাহাড়ে ঢাকা পরে থাকে অনেকক্ষণ কিন্ত একটা অপার্থিব নরম আলোয় ভরে যায় চারদিক।লেপে পা মুড়ে চা খেতে খেতে কাচের জানালা দিয়ে এ দৃশ্য দেখার আবেশই আলাদা।

লাঞ্চের আগে ছন্নছাড়ার মত বনে বাদাড়ে ঘুরে পাওয়া গেছে সাদা কুয়াস, সবুজ কুমড়ো, অ্যাভোকাডো ,এলাচ এবং প্রচুর কমলা। এত কমলা গাছ কোথাও দেখা যায় না।থোকা থোকা সুন্তালা ঝুলছে গাছে গাছে, নিতান্ত অবহেলায় পড়ে আছে মাটিতে। লোভীদের কমলা নিতে স্থানীয় কেউ আপত্তি করেনি। কেন করেনি,পরে খেয়ে বোঝা গেছিলো।তাই যম টককে ‘প্রি-মাচিওর’ বলে মনকে প্রবোধ দিতে হল। 

বিদায়কালে ওরা সবাইকে ‘খাদা’ পরিয়ে দিল।এমন নির্ভেজাল আন্তরিকতা পাহাড়েই মেলে। ‘আবার আসতে হবেই’–হয়তো তখন প্রত্যেকেই ভাবছে মনে মনে।   

ফেরার রাস্তায় পড়ে পাইন গাছে ঘেরা নামথিং পোখরি লেক।ওই সময় লেক শুকনো আর কুয়াশায় আচ্ছন্ন।এদিকে দেখা গেল অনেক অনুচ্চ সিঙ্কোনা গাছ, যার ডাল ধরে ঝুল খাওয়া যায়।

জমাট কুয়াশায় ঢাকা ছিল অহলদারা ভিউ পয়েন্ট।সাথে প্রচণ্ড বাতাসে উড়ে আসা মেঘ। ঠাণ্ডায় কাঁপুনি  ধরে গেল সবার।

পক্ষীপ্রেমিকদের আদর্শ স্থান লাটপাংচার পেরিয়ে গাড়ি যখন হাইওয়েতে নামল তখন তিস্তার জল, গাছের মাথা আর পথের ধুলোর উপর লাল আবীরের গুঁড়ো ছড়িয়ে পড়েছে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri