সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
সুদীপ ভট্টাচার্য-র আলোচনায় ডঃ রূপন সরকারের বই 'তিস্তাপারের জলপাইগুড়ি, শহরের ইতিহাস (১৮৬৯-২০০১)'

সুদীপ ভট্টাচার্য-র আলোচনায় ডঃ রূপন সরকারের বই 'তিস্তাপারের জলপাইগুড়ি, শহরের ইতিহাস (১৮৬৯-২০০১)'

কবিতা বণিক-এর আলোচনায় সাহিত্যিক  অশোক কুমার গঙ্গাপাধ্যায়-এর বই ‘গোধূলি বেলার দিনরাত্রি'

কবিতা বণিক-এর আলোচনায় সাহিত্যিক অশোক কুমার গঙ্গাপাধ্যায়-এর বই ‘গোধূলি বেলার দিনরাত্রি'

পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর আলোচনায় অমিত কুমার দে-এর কাব্যগ্রন্থ  'বিসমিল্লার সানাই চৌরাশিয়ার বাঁশি'

পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর আলোচনায় অমিত কুমার দে-এর কাব্যগ্রন্থ 'বিসমিল্লার সানাই চৌরাশিয়ার বাঁশি'

ভাস্বতী রায়-এর আলোচনায় অমিত কুমার দে-র বই 'বৃষ্টি আমায় নিবি'

ভাস্বতী রায়-এর আলোচনায় অমিত কুমার দে-র বই 'বৃষ্টি আমায় নিবি'

দেবদত্তা বিশ্বাস-এর আলোচনায় শৌভিক রায়-এর 'চেনা উত্তর অচেনা উত্তর'

দেবদত্তা বিশ্বাস-এর আলোচনায় শৌভিক রায়-এর 'চেনা উত্তর অচেনা উত্তর'

ভাস্বতী শ‍্যামচৌধুরী-র  আলোচনায় নির্মলেন্দু  চট্টোপাধ্যায়-এর বই 'অন্তরঙ্গ দার্জিলিং'

ভাস্বতী শ‍্যামচৌধুরী-র আলোচনায় নির্মলেন্দু চট্টোপাধ্যায়-এর বই 'অন্তরঙ্গ দার্জিলিং'

অর্পিতা মুখার্জী চক্রবর্তী -এর আলোচনায় শৌভিক রায় -এর বই 'বোকামির এককাল'

অর্পিতা মুখার্জী চক্রবর্তী -এর আলোচনায় শৌভিক রায় -এর বই 'বোকামির এককাল'

অমিতাভ গোস্বামী-র আলোচনায় অমিত কুমার দে-র 'রাজেশ্বরী তুমি'

অমিতাভ গোস্বামী-র আলোচনায় অমিত কুমার দে-র 'রাজেশ্বরী তুমি'

রণজিৎ কুমার মিত্র-র আলোচনায় অভিজিৎ দাস-এর বই 'তিস্তা উৎস থেকে মোহনা'

রণজিৎ কুমার মিত্র-র আলোচনায় অভিজিৎ দাস-এর বই 'তিস্তা উৎস থেকে মোহনা'

19-January,2025 - Sunday ✍️ By- . . . 50

সুদীপ ভট্টাচার্য-র আলোচনায় ডঃ রূপন সরকারের বই 'তিস্তাপারের জলপাইগুড়ি, শহরের ইতিহাস (১৮৬৯-২০০১)'

সুদীপ ভট্টাচার্য-র আলোচনায় ডঃ রূপন সরকারের বই 'তিস্তাপারের জলপাইগুড়ি, শহরের ইতিহাস (১৮৬৯-২০০১)'


হরপ্পা সভ্যতার থেকে নাগরিক জীবনের সূচনা হলেও নানা কারণে বহুকাল এই ইতিহাস চর্চা প্রলম্বিত। ভারতবর্ষ তথা উত্তরবঙ্গে নগরসভ্যতার ইতিহাস চর্চা এখনও পর্যন্ত একেবারেই গঠনমূলক পর্যায়ে বলা যায়। ১৯৬০ এর দশকে ভারতীয় শহরের ইতিহাস নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত আলোচনার অভাব সম্পর্কে আক্ষেপের সুর ধরা পড়েছিল বিদেশী ইতিহাসবিদের গলায়। ভারতীয় শহরের ইতিহাস চর্চার প্রথম দুটি আংশিক বিজ্ঞানসন্মত আলোচনা উঠে আসে দুজন ভূগোলবিদদের আলোচনায়। একজন বিমলেন্দু ভট্টাচার্য (১৯৭৯) এবং অন্যজন এ. আর. রামচন্দ্রন (১৯৮৯) এবং তাদের লেখা যথাক্রমে ‘Urbanization in India’ এবং 'Urbanization and Urban System in India' গ্রন্থ দুটিতে। সত্তরের দশকে K.N. Choudhury-র  মন্তব্য এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক। তার কথায়, সমাজবিজ্ঞানের একাধিক অবহেলিত শাখার মধ্যে শহরের ইতিহাস চর্চা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। অথচ সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখার মতো শহর গড়ে ওঠার ইতিহাস বা নগরায়নের ইতিহাস কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কোলকাতা, বোম্বে, আমেদাবাদ, লক্ষ্ণৌর মতো শহরেই তা প্রায় সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এ প্রসঙ্গে পথিকৃৎ ঐতিহাসিক ইন্দু বঙ্গ, অনিরুদ্ধ রায়, ভি.কে. ঠাকুর, হামিদা খাতুন নাকভি (১৯৮৬), চম্পকলক্ষ্মী (১৯৯৯) আই. এইচ সিদ্দিকি, অনিতা রায়, আর. এস. শর্মা, ব্রজদুলাল চট্টোপাধ্যায়ের মতো কিছু কিছু লব্ধপ্রতিষ্ঠিত ইতিহাসবিদ বা গবেষক, যারা শহরের ইতিহাস চর্চার ধারাকে একটি নির্দিষ্ট রূপ দান করেন। তবে জেলা তথা প্রান্তিক ছোটো শহর বা জনপদ নিয়ে বিজ্ঞানসন্মত আলোচনা প্রায় হয়নি বললেই চলে। অথচ এক একটি শহর, এক একটি জনপদ একটি নির্দিষ্ট সময়কালের এক এক ভৌগলিক পরিসরের আর্থ-সামাজিক তথা রাজনীতি, প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান সহ মানব সভ্যতার নানান প্রাসঙ্গিক প্রতিষ্ঠানের নানা চরিত্রগত বিবর্তণের স্বাক্ষর বহন করে। প্রকৃতপক্ষেই শহরের ইতিহাস চর্চা একটি আন্তর্বিষয়ক গবেষণাক্ষেত্র, যার জন্য প্রয়োজন কল্পনাশক্তি, বিশ্লেষণী ক্ষমতা এবং অতীত সম্পর্কে যথাযথ চেতনা। এ প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গে তথা বৃহৎ বঙ্গে নাগরিক ইতিহাস রচনায় ইতিমধ্যেই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন অধ্যাপক রূপন সরকার তার 'English Bazar in Colonial Bengal' গ্রন্থে, যা তাঁর গবেষণামূলক নিবন্ধ। বাংলার শহর সম্পর্কে John Broomfield তার ‘Mostly about Bengal’ (Essays in Modern South Asian History), New Delhi, 1982, p. 256. গ্রন্থে দেখিয়েছেন বড়ো শহরের ওপরে বেশি মনোনিবেশ করার কারণে তুলনামূলক ছোটো শহর বা জনপদ অনেক বেশি অবহেলিত। 'তিস্তাপারের জলপাইগুড়ি' সেই অবহেলার থেকে জলপাইগুড়ি শহরকে অনেকাংশেই মুক্তি দিয়েছে এবং একটি উপেক্ষিত বিষয়ের ওপরে চর্চার সঙ্গে সঙ্গে এই জাতীয় শহর বা জনপদের ইতিহাস রচনার বিভিন্ন দিক উন্মোচন করেছে। জলপাইগুড়ি শহরের ওপরে পূর্বে বিভিন্ন বই লেখা হলেও তা ঠিক শহরের ইতিহাস চর্চা হয়েছে বলা যায় না। বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন বহু উপাদানের মাধ্যমে অধ্যাপক সরকার জলপাইগুড়ি শহরের পূর্ণাঙ্গ "নগরকেন্দ্রিক ইতিহাস" রচনা করেছেন। এক্ষেত্রে নগরের ইতিহাসচর্চার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গে আনুসঙ্গিক বিষয় যেমন ৬৮-র বন্যার বিবরণের মাধ্যমে শহরবাসির আবেগ এবং অনুভূতিকেও তুলে ধরার সফল চেষ্টা করেছেন। তথ্য, তথ্যের বিশ্লেষণ, যুক্তিপূর্ণ কল্পনাশক্তি এবং অতীত সম্পর্কে যথার্থবোধ তার লেখনীর বুনোনকে মজবুত ভিত্তি দিয়েছে। প্রাক-কথনে নিজের গবেষণার পথ চলার প্রকাশ যে কোনো উঠতি গবেষকের কাছে অনুপ্রেরণার যোগান দেবে। জলপাইগুড়ি শহর সম্পর্কে তার ঐকান্তিক আকর্ষণ তাঁকে শহরের ইতিহাস রচনার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে। অধ্যাপক সরকারের ইতিপূর্বে লিখিত ৩ টি বই যথাক্রমে : ১) 'English Bazar in Colonial Bengal' (দিল্লীর ইতিহাস বিষয়ক প্রসিদ্ধ সংস্থা মনোহর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত)। ২) 'বাংলার নগরায়নের তিন পর্ব, প্রাচীন, মধ্য, ঔপনিবেশিক' এবং ৩) 'স্মৃতিকথায় হ্যামিল্টনগঞ্জ' নগরকেন্দ্রিক ইতিহাস রচনায় অধ্যাপক সরকারের দক্ষতার প্রমাণ রেখেছে। স্বাভাবিক ভাবেই চতুর্থ রচনায় (তিস্তাপারের জলপাইগুড়ি) তিনি আরো অভিজ্ঞতার এবং পারদর্শীতার ছাপ রেখেছেন।
প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে প্রাক - ঔপনিবেশিক জলপাইগুড়ির রাজনৈতিক ইতিহাস। এই অধ্যায়ে লেখক উপাদান হিসাবে সরকারি দলিল পত্র, বৈকুণ্ঠপুর রাজপরিবারের উপরে লিখিত বিভিন্ন দ্বিতীয় শ্রেণীর উপাদান, বিভিন্ন প্রথম শ্রেণীর উপাদান যেমন সরকারি রিপোর্ট ইত্যাদির উপর নির্ভর করেছেন। জলপাইগুড়ি জেলার সীমা, পরিমাপ, প্রাকৃতিক পরিবেশ, নদী, জনসংখ্যা, জন বৈচিত্র, ধৰ্মীয় সম্প্রীতি, জনগণের জীবিকা, সামাজিক জীবন, বিবাহ পদ্ধতি আলোচনা করে রাজ পরিবারের উৎপত্তির উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ বিশ্লেষণ করেছেন। বিশু সিংহ(১৫২৪) থেকে রানী অশ্রুমতি দেবীর (১৯৫১) আংশিক সময়কালের বিবরণ দিয়ে জলপাইগুড়ির রাজনৈতিক ইতিহাসের মনোগ্রাহী চিত্র তুলে ধরেছেন।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে জলপাইগুড়ি নাম ব্যবহারের সময়কাল ও উৎস রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করেছেন নির্দিষ্ট কালানুক্রম অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রাসঙ্গিক মতামত গুলির তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে। সর্বোপরি, তথ্য - প্রমান এবং নিজস্ব যুক্তি ও বৌদ্ধিকদৃষ্টিতে অধিকতর গ্রহণযোগ্য মতকে বেছে নিয়েছেন।
তৃতীয় অধ্যায়ে জেলা গঠনের প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রথমেই ঔপনিবেশিক আমলে সৃষ্ট বিভিন্ন জনপদের দৃষ্টান্ত দিয়ে দ্বিমুখী প্রভাবের উল্লেখ করেছেন। একটি ধ্বংসাত্মক অপরটি গঠনমূলক। এই গঠনমূলক প্রক্রিয়ার অংশ রূপে তৎকালীন আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সামরিক ও প্রশাসনিক প্রয়োজন এবং ভৌগোলিক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে এই শহরের জেলা হয়ে ওঠার বর্ণনা দিয়েছেন।
চতুর্থ অধ্যায়ে জলপাইগুড়ির জনবিন্যাস এর পরিসংখ্যান তত্ত্বের মাধ্যমে বিবর্তন দেখিয়েছেন। প্রাথমিক পর্বের নাগরিকদের জনবসতি, ব্রিটিশ শাসক বর্গের হতাশজনক মন্তব্য, প্ররোম্ভীক তিন দশকের জনসংখ্যার পরিবর্তনহীনতা থেকে তিনটি পর্যায়ে বিংশ শতাব্দীর সূচনা থেকে ২০০১ সাল অব্দি জনসংখ্যার বিবর্তনের উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে উক্ত সমকালের জনঘনত্ব, জনবসতি, বসতিবিন্যাসের প্রকৃতিকেও বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করেছেন।
পঞ্চম অধ্যায়ে জলপাইগুড়ি পৌরসভা এবং পৌর পরিষেবার বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন মূলত দুটি পর্যায়ে : প্রাক-স্বাধীন পর্যায় এবং স্বাধীনতা-উত্তর পর্যায়ে। জলপাইগুড়ি পৌরসভার আয়-ব্যায়, নাগরিক পরিষেবা, কর আদায়ের উৎস, পৌর প্রতিনিধি নির্বাচন ইত্যাদির তথ্যনিষ্ঠ বিবরণ দিয়েছেন।
ষষ্ঠ অধ্যায়ে প্রাক ব্রিটিশ শিক্ষা ব্যবস্থা, পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার, জলপাইগুড়ি তে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার, পৌরপ্রশাসনের উদ্যোগ, ব্যক্তিগত উদ্যোগ, উচ্চ শিক্ষার চাহিদা, ব্রিটিশ সরকারের উদাসীনতা, সরকারি উদ্যোগে উচ্চ শিক্ষার প্রসার, বেসরকারি উদ্যোগের সরকারি স্বীকৃতি, শহরের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের কালানুক্রমিক তালিকা, স্বাধীনতা পরবর্তী উদ্যোগ, পাঠাগার-গ্রন্থগারের বিবরণ ইত্যাদি। 
সপ্তম অধ্যায়ে সাংবাদিকতা, সংবাদপত্র, পত্র -পত্রিকা, নাট্য চর্চা ইত্যাদি আলোচনা করেছেন প্রাক-স্বাধীন এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে।
অষ্টম অধ্যায়ে বিষয়বস্তু বিভিন্ন ধরণের ক্লাব, খেলা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গৃহীত জনকল্যাণকর কর্মসূচী।
নবম এবং দশম অধ্যায়ে শহরের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সঙ্গে এবং শহরের আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং চিকিৎসাব্যবস্থার বিবরণও প্রশংশনীয়।
একাদশ অধ্যায়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে জলপাইগুড়ি শহরের অংশগ্রহণ।
দ্বাদশ অধ্যায়ে ১৯৬৮ সালের বন্যার বিবরণ। যে সমস্ত উপাদানের ব্যবহার করেছেন, বন্যার ভয়াবহতা, নাগরিক সমাজের দুর্দশা, স্থানীয় যুবকদের প্রচেষ্টা, ত্রাণকার্য, ত্রাণকার্যে পার্শ্ববর্তী শহরের ভূমিকা, প্রশাসনিক ব্যর্থতা।
অধ্যাপক সরকার ১৮৬৯-১৯০১ পর্যায়করণ এ পর্যাপ্ত পরিমান তথ্য দিয়েছেন এবং তার যথাযথ কারণ বিশ্লেষণ করেছেন। যা সাধারণ পাঠকবর্গের কাছেও খুবই আকর্ষণীয়(পৃষ্ঠা:৪৭-৫১)। এই প্রসঙ্গে দুই ধরণের অভিবাসনের উল্লেখ করেছেন, যথা : 'স্বেচ্ছা অভিবাসন' এবং 'বাধ্যতামূলক অভিবাসন'। এই দুই চরিত্রের মাধ্যমে কিভাবে 'Pull Factor' এবং 'Push Factor' কাজ করেছে, সেই দিকটিও ফুটিয়ে তুলেছেন কার্য - কারণ তত্ত্বের নিরিখে (পৃষ্ঠা ৫১)। সমকালীন প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক অবস্থার মাধ্যমে বিংশ শতকের শহরের জলছবি ফুটিয়ে তুলেছেন যা সরকারি জনগণনার রিপোর্টের শুকনো তথ্যের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে প্রকৃত শহরের বিবর্তিত প্রাঞ্জল রূপ প্রকাশ করেছে। যার ফলে ১৯০১ সালের পঞ্চম শ্রেণীর শহরের থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণীর শহরের রূপান্তর অতি সহজেই বোধগম্য হয়। শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ পাড়ার মাধ্যমে ঔপনিবেশিক চরিত্রের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের লোকবসতির সামাজিক চরিত্র গঠনের প্রেক্ষাপটের উৎস সন্ধানে সচেষ্ট হয়েছেন (পৃষ্ঠা:৫৪-৫৫)। পাড়ার নামের উৎস সন্ধানের মাধ্যমে জীবিকা ভিত্তিক বসতিকে চিহ্নিত করেছেন যা যে কোনো জনপদের ইতিহাস রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হতে পারে (পৃষ্ঠা:৫৯)। সমকালীন উত্তরবঙ্গের অন্যান্য পৌরসভা গঠনের সময়কালের মাধ্যমে জলপাইগুড়ি পৌরসভা গঠনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ব্রিটিশ শাসকদের অভিসন্ধি পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠেছে (পৃষ্ঠা:৬১)। পৌরসভার ওয়ার্ড সংখ্যার ক্রমশ বৃদ্ধি কিভাবে শহরের বৃদ্ধি এবং বিকাশের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেই ধারণাও পরবর্তী গবেষকদের উৎসাহিত করবে আশা করা যায় (পৃষ্ঠা:৬২)।
বিভিন্ন পরিষেবা পৌরসভা কর্তৃক কিভাবে পরিচালিত হত, সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ, সরকারি আইনের মাধ্যমে কিভাবে নতুন নীতি জলপাইগুড়ি শহরে কার্যকরী হয়েছিল, নাগরিক সমাজ কিভাবে সংকটের পরিস্থিতিতে পৌরবাসীদের সাহায্য করেছিল ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরণের মাধ্যমে পৌরকর্মের এক প্রতিচ্ছবির মালা গেঁথেছেন খুঁটিনাটি তথ্যের আলোকবিন্দুতে (পৃষ্ঠা:৬২-৭০)। জলপাইগুড়ি শহরের শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ের বিবর্তনকে লেখক নিজস্ব দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। একই সঙ্গে সরকারি নীতির প্রয়োগ কিভাবে শহরের শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছিল সেই দিকটিও ব্যাখ্যা করেছেন (পৃষ্ঠা:৭৮-৭৯)। সরকারি তথ্যের উল্লেখ করে উন্নতির প্রমাণ দিয়েছেন। সারণীর মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠার কালানুক্রম অনুযায়ী। বিশেষভাবে উল্লেখ্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শুরুর প্রেক্ষাপট থেকে কিভাবে সেই প্রতিষ্ঠান উন্নততর পর্যায়ে পৌঁছেছিল সে সম্পর্কে প্রচুর তথ্যের উল্লেখ করেছেন যা তার ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং গবেষক দৃষ্টিভঙ্গির ছাপ রেখেছে (পৃষ্ঠা:৮৪)। প্রথাগত সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি নারী শিক্ষা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত শিক্ষাব্যবস্থার ও পুংখ্যানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন (পৃষ্ঠা:৮৬-৯০)। সর্বোপরি শিক্ষার অপ্রথাগত প্রতিষ্ঠান যেমন গ্রন্থাগার এবং সেগুলির কর্ম পদ্ধতি সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন (পৃষ্ঠা:৯৭-৯৮)। শহরের কোন কোন মানুষ কি কি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলো সেই সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ লেখক তার লেখনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। সংবাদপত্রের মাধ্যমে কিভাবে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এবং সাধারণ মানুষের দাবিসমূহ সকলের কাছে পৌঁছতো সেই বিবরণও উল্লেখ করার যোগ্য।(পৃষ্ঠা:১০০)। নির্ভিক সাংবাদিকতার জন্য ব্রিটিশ শাসকদের অত্যাচার তৎকালীন সাংবাদিকতার সার্থকতার প্রমাণ(পৃষ্ঠা:১০২)। এছাড়াও শহরের প্রকাশিত সংবাদপত্র ও পত্র-পত্রিকা কিভাবে নাগরিক সমাজে রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি করেছিল তারও ব্যাখ্যা করেছেন (পৃষ্ঠা:১০৩)। নাট্য চর্চার মধ্যে লেখক প্রকাশ করতে চেয়েছেন কত অসুবিধা সত্ত্বেও প্রবল ঐচ্ছিক শক্তির মাধ্যমে শহরের বহু নাট্য দল সমসাময়িক কত উল্লেখযোগ্য নাটক মঞ্চস্থ করেছিল, যা সাংস্কৃতিক ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য উপাদান হতে পারে। পাশ্চাত্য ক্লাব সংস্কৃতি কিভাবে জল শহরে প্রবেশ করল, প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশ শাসকদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং এই প্রতিষ্ঠানগুলির মাধ্যমে কিভাবে শাসক বর্গ নিজেদের উচ্চ সামাজিক মর্যাদা বজায় রাখত সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন (পৃষ্ঠা:১০৭-১০৮)। এই সামাজিক পটভূমিতে স্থানীয় উদ্যোগে গড়ে ওঠা এবং বিভিন্ন পাড়ার নামে গড়ে ওঠা শহরের দেশীয় ক্লাবগুলিরও বিস্তারিত বিবরণ লেখক দিয়েছেন। পাঠকদের চোখের সামনে সমকালীন পরিস্থিতিকে ছবির মতো সাজিয়ে তুলেছেন তথ্যের রঙ তুলির সাহায্যে (পৃষ্ঠা:১০৮-১১২)। জনকল্যাণকর কর্মসূচীর মাধ্যমে কিভাবে জলপাইগুড়ি শহরের নাগরিকরা সহনাগরিকদের পাশে সর্বদা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সেই দিকটিরও উল্লেখ করেছেন নিজস্ব সত্ত্বায়। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ক্লাব সমূহ নয় বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিও তার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। জাতীয় ধারার সঙ্গে আঞ্চলিক ধারার মাধ্যমে কিভাবে একটি ক্ষুদ্র এলাকাও স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল সেই সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ ধরা পড়ে অধ্যাপক সরকারের লেখার মধ্যে। জলপাইগুড়ি শহরের স্বাধীনতা সংগ্ৰামের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী কিভাবে সমকালীন জাতীয় পর্যায়ের সংবাদপত্র পরিবেশিত হয়েছিল তারও উল্লেখ করেছেন যা জলপাইগুড়ি শহরের স্বাধীনতার স্পৃহাকে বুঝতে সাহায্য করেছে (পৃষ্ঠা:১৩৫-১৩৭)।

পরিশেষে অধ্যাপক সরকারের লেখনীতে ব্রিটিশ বিরোধিতার সন্তুষ্টি লক্ষ্য করা যায় তার বক্তব্যে- "তাই মুখে ঝামা ঘষে দিতে সাহেবদের অনুসরণ করে ভারতীয়রাও গড়ে তোলে একাধিক ক্লাব" (পৃষ্ঠা-১৭১)। জলপাইগুড়ি শহরের উপরের গবেষণার সুযোগ সম্পর্কেও তিনি পরবর্তী প্রজন্মের গবেষকদের অবগত করেছেন। কিন্তু বিংশ শতকের শেষ দিকের বিভিন্ন ঘটনাবলী শহরের সামগ্রিক অবণতির কারণ হয়ে উঠেছে যা লেখকেকে বিষন্ন করে তুলেছে। তবুও তিনি ইতিহাসের উত্থান-পতনের শাশ্বত তত্ত্বকে মেনে নিয়েও শেষ পংক্তিতে ইতিবাচক মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। ''নদীর একূল ভাঙে, ও কূল গড়ে, এই ভাঙা-গড়ার ইতিহাস, শহর জলপাইগুড়ির ইতিহাস'' (পৃষ্ঠা-১৭২) শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে। এখানে দ্রষ্টব্য, আগে ভাঙা শব্দের প্রয়োগ এবং পরে গড়া অর্থাৎ অধ্যাপক সরকার আশাবাদী নবরূপে জলপাইগুড়ি শহরের ভবিষ্যত গঠন সম্পর্কে। তবে, সংখ্যা তত্ত্বের হিসাবে সরকারি রিপোর্টের ছোটো খাটো ত্রুটি সংশোধন করা যেতে পারে। জলপাইগুড়ি প্রকৃত অর্থেই এক ঔপনিবেশিক শহর হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবেই ঔপনিবেশিক শাসকদের উপস্থিতি ও তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে অধ্যাপক সরকারের ‘তিস্তাপরের জলপাইগুড়ি’ এক অর্থে নীরব। পাশাপাশি ‘চা-কর’দের (চা উৎপাদক) উল্লেখযোগ্য অবদানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা শহরের ইতিহাসে চা-বাগিচা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের সবিস্তর অনুপস্থিতি পাঠককে নিরাশ করেছে। আশাকরি এব্যাপারে নতুন করে আলো দেখানোর চেষ্টা করবে কোন গবেষকের কলম। সার্বিক দিক থেকে অধ্যাপক সরকারের এই প্রচেষ্টা শুধুমাত্র ইতিহাসের পাঠক গবেষক ছাড়াও সাধারণ পাঠকবর্গের কাছেও সুখপাঠ্য হবে বলে ধারণা। কারণ লেখনীর চলন গতি খুবই সাবলীল এবং স্বতঃস্ফূর্ত। স্থানীয় ইতিহাসের বিভিন্ন আঙ্গীকের সাথে সাথে নতুন রূপে জলপাইগুড়ি তথা উত্তর বঙ্গের জনপদ চর্চার ক্ষেত্রে অধ্যাপক সরকারের অবদান একটি মডেল স্বরূপ হতে পারে, যা ভবিষ্যৎ নগরের ইতিহাসচর্চার ক্ষেতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।

লেখক পরিচিতিঃ সুদীপ ভট্টাচার্য, সহকারি অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, ময়নাগুড়ি কলেজ।


গবেষক : ড. রূপন সরকার
প্রকাশক : প্রদোষ রঞ্জন সাহা
ঠিকানা : বিস্তার। ৩ রাজাডাঙ্গা গোল্ড পার্ক, কলকাতা ৭০০১০৭
প্রকাশ কাল : প্রথম সংস্করণ, ডিসেম্বর২৫, ২০২২.
গ্রন্থস্বত্ব : ড. রূপন সরকার
প্রচ্ছদ : শান্তনু সরকার
মূল্য : ৩৬০ টাকা

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri