সহজ কবি ও সহজ পাঠ/অমিতাভ দাস
সহজ কবি ও সহজ পাঠ
অমিতাভ দাস
ছোট খোকা বলে অ আ
শেখেনি সে কথা কওয়া।
ক খ গ ঘ গান গেয়ে
জেলে -ডিঙি চলে বেয়ে।
সহজ পাঠ প্রথম ভাগ। সেখান থেকে স্বরবর্ণ ও ব্যাঞ্জন বর্ণ শেখা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সহজ পাঠ। প্রথম বই। দিদি এনে দিয়েছিল। দিদি শেখান।
তারপর দ্বিতীয় ভাগ।
রাম বনে ফুল পাড়ে। গায়ে তার লাল শাল। হাতে তার সাজি। জবা ফুল তোলে। বেল ফুল তোলে। বেল ফুল সাদা।
কি সুন্দর ছবির মতো লেখা....
কালো রাতি গেল ঘুচে,
আলো তারে দিল মুছে।
পুব দিকে ঘুম ভাঙা
হাসে ঊষা চোখ রাঙা।
তৃতীয় পাঠ,
নাম তার মতিবিল, বহু দূর জল,
হাঁস গুলি ভেসে ভেসে করে কোলাহল।
পাঁকে চেয়ে থাকে বক, চিল উড়ে চলে,
মাছ রাঙা ঝুপ করে পড়ে এসে জলে।
কত সহজ সরল জীবন যাপন ছিল তখন। বিনি পিসি, বামি, রাণীদিদি, মা, মাসি, কিনি, নীলু, বুড়িদাসী, দীনু কত চরিত্র। সব আমাদের পরিচিত।
গ্রামের অনাবিল ছবি পাই--
ছায়ার ঘোমটা মুখে টানি
আছে আমাদের পাড়া খানি।
দীঘি তার মাঝখানটিতে,
তাল বন তারি চারি ভিতে।
বাঁকা এক সরু গলি বেয়ে
জল নিতে আসে যত মেয়ে।
বাঁশ গাছ ঝুঁকে ঝুঁকে পড়ে,
ঝুরু ঝুরু পাতা গুলি নড়ে।
পঞ্চম পাঠে চড়ুই ভাতির বর্ণনা পাই। যেমন "আজ বুধবার, ছুটি। নুটু তাই খুব খুশী । সেও যাবে কুল বনে। কিছু মুড়ি নেব আর নুন। চড়ইভাতি হবে। ঝুড়ি নিতে হবে। তাতে কুল ভ'রে নিয়ে যাব।
ছোট বেলায় আমি, দিদি কতবার পড়েছি.... সে কবিতা।
"আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে,
বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে।
পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি,
দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।
পড়া, লেখা,পরীক্ষা ও বিদ্যালয়। এর মাঝে পুজোর আগে বিদ্যালয় থেকে ফেরার সময় মা দুর্গার প্রতিমা দেখতে কুমোরটুলি যেতাম। এ সময় শিউলি ফুলে ভরা উঠোন। আকাশে বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ। শরৎ কাল। আমার মন আর কবির মন একাকার হয়ে যায়।
'এসেছে শরৎ, হিমের পরশ
লেগেছে হাওয়ার প'রে,
সকাল বেলায় ঘাসের আগায়
শিশিরের রেখা ধরে।
আমলকি- বন কাঁপে, যেন তার
বুক করে দুরু দুরু -
পেয়েছে খবর পাতা খসানোর
সময় হয়েছে শুরু।
শিউলির ডালে কুঁড়ি ভ'রে এল,
টগর ফুটিল মেলা,
মালতি লতায় খোঁজ নিয়ে যায়
মৌমাছি দুই বেলা।
সপ্তম পাঠ। শৈল এল কৈ? ঐ- যে আসে ভেলা চ'ড়ে বৈঠা বেয়ে।
কবি মালির কাছে প্রশ্ন করেন -
কাল ছিল ডাল খালি,
আজ ফুলে যায় ভ'রে।
বল দেখি তুই মালী,
হয় সে কেমন ক'রে।
অষ্টম পাঠে কবি স্বপ্ন দেখে, আমার মতো করে -
"আমি বলি, কাকা মিছে করো চেঁচামেচি,
আকাশেতে উঠে আমি মেঘ হয়ে গেছি।
ফিরিব বাতাস বেয়ে রামধনু খুঁজি,
আলোর অশোক ফুল চুলে দেব গুঁজি।
নবম পাঠে চলে যাই দূর সাগরের পারে -
জলের ধারে ধারে,
নারকেলের বনগুলি সব
দাঁড়িয়ে সারে সারে।
দশম পাঠে কবির মতো আমারও উড়ে যেতে ইচ্ছে করে। মায়ের মুখে দেশের বাড়ি, কত নদী, বন জঙ্গল ডিঙিয়ে সেখানে যাবো মায়ের সাথে। মায়ের বাবা, দাদা, তাঁদের খুঁজতে খুঁজতে আমি ও মা হাঁপিয়ে যাই। স্বপ্নে আমি ফুল হয়ে উড়ে যাই, প্রজাপতি, জোনাকি, মেঘ, পাখি হয়ে উড়ে বেড়াই। স্বপ্নে আজ মাকে খুঁজি। স্বপ্নে মা আর আমি উড়ে বেড়াই। কবির সহজ পাঠ মা পাঠ করে -
"আমি ভাবি ঘোড়া হয়ে মাঠ হব পার।
কভু ভাবি মাছ হয়ে কাটিব সাঁতার
কভু ভাবি পাখি হয়ে উড়িব গগনে।
কখনো হবে না সে কি ভাবি যাহা মনে ।"
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴