সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
28-January,2024 - Sunday ✍️ By- রাজর্ষি দত্ত 307

সমঝোতা অফিসার/রাজর্ষি দত্ত

সমঝোতা অফিসার
রাজর্ষি দত্ত

লেবার অফিসার বিজলী মোহন আচার্য-কে ভোলা মুস্কিল। বিশেষ করে তাঁর সাথে কন্সিলেসন মিটিং করার অভিজ্ঞতা যার হয়েছে।

চা বাগানে অনেক সমস্যা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় না মিটলে সরকারী শ্রমদপ্তরের দ্বারস্থ হতে হয়। সেখানে বাগান কর্মকর্তা ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের মাঝখানে একজন উচ্চপদস্থ লেবার অফিসার আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সুরাহা করেন। মানে একটা সমঝোতা চুক্তিতে আসে।

পরবর্তীকালে বিজলী মোহন বাবুর নাম শুনলে কেউ আর সে পথ মাড়াত না। একদিন ইউনিয়নের একজন জোনাল সেক্রেটারির কাছে মিটিং-এর শিডিউল নিয়ে কথা বলতে গেছি, তিনি বিজলীবাবুর নাম শুনেই একটি খারাপ গালি দিয়ে দিলেন।

“ছি ছি দাদা। কি বলছেন আপনি ! আপনার মুখে...” আমিও যেন লজ্জিত।
“ছাড়ুন তো ! ওই যমের অরুচিটা থাকলে আমি মিটিং-এ যাবই না।” 

যমের রুচির কথা জানা নেই। তবে বিজলীমোহন বাবুকে যেদিন প্রথম দর্শন করি সেদিন ভেতর থেকে গুড়গুড়ে হাসি গলা অবধি এসে খাবি খেয়েছিল। নেহাত গর্ভমেন্ট অফিসার তাই ক্লিন শেভড – কিন্তু একমাথা কাঁচাপাকা চুল যেন ঝড়ের মোকাবিলা করা কবুতরের মত উদ্ভ্রান্ত।জাপানিদের মত ছোট ছোট চোখ অথচ মোটা ফ্রেমের চশমাটি প্রায় মিনি জানালা।শ্যামলা চেহারাখানি জালার মত,কোলে পোয়ামণ ভুঁড়ি-মুখটি সর্বদা কাঁচুমাচু বুলডগের মত।বাংলা সিনেমার তরুণ কুমারের সাথে কিছুটা মিল। তার উপর গলার স্বরটি ভ্যারভেরে। মাঝে মাঝে নস্যি নেন আর ময়লা রুমালটায় নাক মুছে টেবিলের ড্রয়ারে রাখেন। 

যেসব লোক মাপা এক টোনে কথা বলেন তাদের কথা কিছুক্ষণ শোনার পর একঘেঁয়ে, বিরক্তিকর লাগে।অভিনয় বা বাচিক শিল্পের কুশীলবরা গলার পর্দা উঠিয়ে-নামিয়ে শ্রোতাদের আবিষ্ট করে রাখেন দীর্ঘক্ষণ। সেজন্য তাদেরকে প্র্যাকটিস করতে হয়।কিন্তু বিজলীমোহন বাবু কোন চর্চা বা সাধনা করে ওই উত্তেজনাহীন ঢ্যারঢেঁড়ে আওয়াজে কথা বলা শিখেছেন তা খোদাই জানে! তবে টানা পনের-বিশ মিনিট শোনার পর ব্রেনে আর কিচ্ছু ঢোকে না, আপনা থেকেই খামোখা হাই উঠতে থাকে, হাতের আঙ্গুলগুলি নিশপিশ করে মাথার চুল খামচাতে।  

সেবারের মিটিং-টা যেমন! ইউনিয়ন ও শ্রমিকরা বেশ মারমুখই ছিল।ওদের দাবিতে ম্যানেজমেন্টও বেশ কোণঠাসা।

অতএব সিটিং হল শ্রমিকদপ্তরে বিজলী বাবুর দরবারে।
বিজলী বাবু প্রথমে সবার কথা মনোযোগী ছাত্রের মত শুনলেন।বাগান কর্তৃপক্ষকে চরম গালিগালাজ করা হল। উনি শান্তভাবে তাঁর কাঁদো কাঁদো বুলডগের মত মুখে সবটা গিললেন।এবার শুরু করলেন তাঁর বচন-

খানিকটা পরে একজন লিডার নড়েচড়ে বসলেন –“আপনি কি বলতে চান আগে সেটা বলুন তো –”  

বিজলীবাবু ছাড়ার পাত্র নন। উনি চা-বাগান সমস্যার কথা বলতে গিয়ে রাশিয়ার গর্ভাচেভের উদার অর্থনীতি, স্মল গ্রোয়ারস, গ্লোবাল মার্কেট, টি-অকশনের বিরাট কাহিনী ফেঁদে বসেছেন। ঘরে উপস্থিত  বাগান শ্রমিকরা জ্বলজ্বলে চোখে সেসব শুনছে যদিও সবটাই মাথার পাশ দিয়ে শাঁ শাঁ করে বেরিয়ে যাচ্ছে।  

ওদের মধ্যে একজন গুন্ডা টাইপের লেবার চিৎকার করে উঠলো –“লেকচার বন্ধ কিজিয়ে...বহুত শুন চুকা...হামলোগোকা ডিমান্ড কে বারে মে বাতাইয়ে-”  

-“আহা, ওহি তো বোলতা হ্যাঁয়”, বিজলীবাবু শান্তভাবে বলতে থাকেন “খামোখা অস্থির কাহে হোতা হ্যাঁয় ? হামে মালুম যে তুম্ লোগ কিতনা সইতে সইতে চলতা হ্যাঁয়...” ওনার হিন্দিটি বীভৎস।

বিজলীবাবুর বক্তব্য যখন শ্রীলঙ্কা ও কেনিয়ার প্লান্টেশন ছেড়ে নেপালের ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করেছে তখন উল্টোদিকের চেয়ারে বসা এক ছোকরা লিডার মেজাজ হারিয়ে বলে বসলো “কি উল্টাপাল্টা ভ্যাদর ভ্যাদর করছেন তখন থেকে ? আমরা কি গাধার বাচ্চা, না আপনি ?”

-“বাপ-মা তুলবেন না।” ঐ একই ঘরঘরে আওয়াজ, কিন্ত উত্তেজনার বাস্প নেই। 

-“শালা এটা কে ? লেবার অফিসার না কোম্পানির দালাল-”বলে সজোরে একজন টেবিল চাপড়ায়, আরেকজন পেছন থেকে চেয়ারটা তুলে ধমাস করে মেঝেতে আছড়ায়।

-“উঁহু, এটা ঠিক করছেন না-সরকারি প্রপার্টি–মহল ঠিক রাখুন।”যেন পাঠশালার ছাত্রদের বোঝানো হচ্ছে- বুলডগ মুখে তবুও কোন ভাবান্তর নেই। মাথাটা বোধহয় হিমঘর। সেখানে জলের সাথে আমূল দুধ ঢেলে দিলে ভ্যানিলা আইসক্রিম হয়ে বের হবে।  

পেছনের সারি থেকে একজন লেবার বললো “ই লাঁর মনকার বাইত কে কোনো দিশাদুয়ার নাইখ্যে...”

শুনে পাশেরজন নিচুস্বরে বললো-‘ল্যাওরা...’

ঠিক কানে গেছে-বিজলীবাবুর তাৎক্ষণিক জবাব “মেরা ভি ল্যাওরা হ্যাঁয়”।

“ঠিক বুলিয়েছেন” মালিকপক্ষের মাড়োয়ারি প্রতিনিধি এই সুযোগে রা কাটেন “আচারিয়াবাবুকে কুথা বুলতে দিবেন তো মালুম হোবে হামারা কোমপানি কত্ত কুসটো কুরে পিমেণ্ট দিলাই-ইধার মে তো পিসা কোনি...” 

-“ধুত্তোর”-একজন ইউনিয়ন লিডার রাগ করে বেরিয়ে গেলেন বাইরে চা খেতে। 

-“হাম লোগোকা ডিমান্ড পুরা নেহি করনেসে আজ ঘেরাও নেহি উঠেগা” শ্রমিকদের এই হুমকিতে একটুও ঘাবড়ালেন না বিজলীবাবু। বরং মিচকে হেসে বললেন “কোই বাত নেহি...হামারা তো পায়খানা পেচ্ছাপ কম হোতা হ্যাঁয়... কোষ্ঠবব্ধতা হ্যাঁয় যে...”

একটিপ নস্যি নিয়ে উনি ফের শুরু করলেন চর্বিতচর্বণ।

 আলোচনাকালে তিনি কোন বিতর্কে যান না। সবার কথা স্বীকার করেও জবাব দেন অনেক ঘুরিয়ে পেছিয়ে। যার মানে শেষে হয়ে দ্বারায় অন্য !

ততক্ষণে লোকজন ঢুকছে-বের হচ্ছে। যারা ঠায় বসে আছে তারা নিশ্চয় কানে খাটো বা নিতান্তই বুরবক।

“তাহলে এটাই ফাইনাল...” বলতে গেলেই সবাই রে রে করে উঠলো। আবার ভিড় জমে গেল ঘরে-সেইসাথে হট্টগোল ও গালাগালি।

নির্বিকার বিজলীবাবু একদিকে কাত হলেন-আর শোনা গেল পরিস্কার শঙ্খধ্বনি। মুহূর্তে বিষাক্ত গন্ধে ভরে গেল ঘর। কেউ কেউ তড়িৎগতিতে ছিটকে গেল দরজার বাইরে থু থু করতে করতে। অনেকে নাক চিপে ধরেছেন। এখনও যারা বসে আছে তাদের নির্ঘাত ঘন সর্দি বা ঘ্রানেন্দ্রিয় সাময়িকভাবে হিপটোনাইজড। মহিলা শ্রমিকরা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে হাসছে “ক্যায়সান আদমি! প্যায়খানাকার টাংকি খুইল দেলাক...”।

ঘেরাও অবস্থায় জলপান, জলত্যাগ বন্ধ হতে পারে কিন্তু গ্যাস নির্গমন তো নয়! সেটা তো মৌলিক অধিকার...

বিজলীমোহনবাবু আবার গোড়া থেকে শুরু করলেন কথা ও কাহিনী-

এইভাবে জলের মাছকে খেলিয়ে খেলিয়ে যখন ফাইনাল এগ্রিমেন্ট হল তখন চার পাঁচ ঘণ্টা কেটে গেছে। ক্রমশঃ বাড়ছে রাত।লিডাররা এবার সই করে পালাতে পারলে বাঁচে ! অনেকের আবার বাড়ি থেকে ফোন আসতে শুরু করেছে-‘ঘরে ঢোকার আগে মুসুর ডাল, বেসন, মৌরি আর সুজি নিয়ে আসবে...’ 

“আপকা বাগান কা গুটি চা বহুত আচ্ছা হ্যাঁয়” বিজলীবাবুর এই কথায় কয়েকজন হেসে ফেললো। গুটি চা মানে সিটিসি।

হাসছে আরও অনেকেই। আজকের চুক্তিতে দুপক্ষই খুশি।

এই ক্ষণজন্মা লোকটি কয়েকবছর হল রিটায়ার করেছেন। তাঁর খবর নিয়েও লাভ নেই। উনি অকৃতদার ছিলেন-এখন কোন মুলুকে কোন কৃতকর্ম করে বেড়াচ্ছেন সে হদিশ কে দেবে ?

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri