সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
18-June,2023 - Sunday ✍️ By- কবিতা বণিক 458

সবুজ কুর্গের অপার সৌন্দর্য কথা/কবিতা বণিক

সবুজ কুর্গের অপার সৌন্দর্য কথা
কবিতা বণিক

কুর্গ এখন কর্ণাটক রাজ্যের একটা জেলা। এই জেলার প্রধান শহর  মাদিকেরী। ১৯৫৬ সালে কুর্গ রাজ্যকে  মহীশূরেরসাথে যুক্ত করা হয়। বর্তমানে কুর্গ কর্ণাটকের একটি জেলা। মহীশূর থেকে মাদিকেরীর দূরত্ব ১৩৫ কিমি।দাক্ষিণাত্যেরপশ্চিমঘাট পর্বতমালায় অবস্হিত কুর্গ জেলা। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৩৫০০ ফুট উঁচুতে অবস্হিত এই কুর্গ  জেলার  প্রতিটিজায়গা সবুজ পাহাড় শ্রেণীর মনোরম দৃশ্য ও  ঠাণ্ডা কুয়াশা মাখা আবহাওয়া সকলের মন  স্বর্গীয় অনুভূতিতে ভরিয়ে দেয়।বৃটিশরা  কুর্গ অঞ্চলকে তাদের স্কটল্যাণ্ড এর মত মনে করতেন। মাদিকেরী শহর থেকে কফি  বাগানের  অসাধারণমনোরম পরিবেশের মধ্য দিয়ে  পায়ে হাঁটা খুব সুন্দর পথ আছে। চা বাগানের সৌন্দর্য নয়নাভিরাম তাতে সন্দেহ নেই।কিন্তু  ছোট -ছোট ,আঁকা -বাঁকা ,উঁচু -নীচু পাহাডী পথের দুপাশে  ঘন সবুজ কফি বাগানের মধ্যে লাল টুকটুকে কফি বীজগুলো যখন উঁকি দেয় তখন চোখ এই অপরূপ সৌন্দর্য গ্রহণ করে তৃপ্তি নিতে চায়। আবার কফি প্রেমিক ছাড়াও সবারইজিহ্বার রসনা ঠেকানো দায় হয়ে পড়ে। ঘন সবুজ কফির বীজগুলো যখন পাকে তখন লাল টুকটুকে রঙ ধরে। কুর্গ জেলায়প্রচুর কফি চাষ হয়।পায়ে পায়ে এগিয়ে যেতে শোনা গেল জলপ্রপাতের গর্জন।  অনন্য সুন্দর এই জলপ্রপাতের নাম “ এ্যাবি ফলস”। ঘন সবুজ চারিদিক। প্রায় ৭০ ফুট উুঁচু থেকে  মুক্তো ধারায় দুগ্ধ ফেননিভ রঙের সে জল পড়ছে ধাপেধাপে, যেন তালে তালে সে মর্ত্যে নেমে আসছে সাদা ঘাগড়া পরে। অপরূপ সে ছন্দের বাহার ! সবুজের মধ্যে ধবধবে সাদাজলরাশি মাটিতে পড়েই ঘোলা রঙের শাড়ি পড়ে নদী হয়ে ছুটছে  কল কল ছল ছল নিনাদে। তার কাবেরী মায়ের কোলেউঠতে। ফলসের কাছে যেতে দেওয়া হয় না। নদীর ওপর একটা ঝোলানো ব্রিজ আছে। সেখান থেকে সৌন্দর্য উপভোগকরা যায় খুব সুন্দর ভাবে। কিছুদূর গিয়ে এই নদী মিলিত হয় কাবেরীর সাথে।এখান থেকে ২০ কিমি ওপরে  একটা জায়গা,মণ্ডল পট্টি বলা হয়। অনেকটা বিস্তৃত  সবুজ তৃণাচ্ছাদিত সমতল ভূমি। এই জায়গা থেকে চারিদিকের অসাধারণ সবুজ, নীল পর্বত শ্রেণীর রূপ তার সাথে বেশ জোর হাওয়ায় চলমান কুয়াশা, কবিদের কলম চালানোর উপযুক্ত জায়গা। পরপর বেশ কয়েকটা চেয়ার পাতা আছে। এই জায়গাটার নাম “ রাজা সীট”।রাজ আমলে এখানে বসে রাজা এই স্বর্গীয়সৌন্দর্য উপভোগ করতেন।  এই রাজা সীটের  সবচেয়ে উপভোগ্য হল এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখা।  কিছু দূরেই আছে সেই  মাদিকেরী রাজবাড়ি। এখানে দেখলাম কুর্গের মহিলাদের শাড়ি পড়ার  ধরণ একটু অভিনব ।এ অঞ্চলের নারী , পুরুষদেরচেহারা , গায়ের রঙ খুব সুন্দর। আমাদের ঐশ্বর্য রাই বচ্চন কুর্গেরই কন্যা। 

                      এখানে আরও কিছু জলপ্রপাত আছে। পুশ্পগিরি হিলসে আছে মাল্লালি ফলস। কুর্গের সেরা জলপ্রপাত।  ওপর থেকে এই জলপ্রপাতের ওপরের অংশটুকু দেখা যায়। সম্পূর্ণ দেখার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে ৩০০ সিঁড়িনীচে নামতে হয়। বর্ষাকালে এই জলপ্রপাত ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। জল মাটি স্পর্শ করার আগেই বাতাসে মিলিয়ে যায়।তাই এখানে ঠাণ্ডাও খুব। এছাড়া আছে ব্রহ্মগিরি পাহাড়ে ইরুপ্পু ফলস।  এই ফলস এ টিকিট কেটে ঢোকার মুখ থেকে৫০০ মি  সবুজ জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। তারপর নদী  পার হওয়ার জন্য আছে একটা ঝোলানো ব্রিজ। ব্রিজেরপর থেকে উঁচুতে উঠবার জন্য আছে খাঁড়া সিঁড়ি। আঁকা বাঁকা হয়ে একটু রাস্তা পার হয়ে আবার সিঁড়ি। এই ভাবে তিনবারসিঁড়ি পার করে পৌঁছনো গেল ভিউ পয়েন্টে। এতটা কষ্টের পর নয়নাভিরাম ফলসের দৃশ্য মনকে মুগ্ধ করে দিল।  ভিউপয়েন্টের পাশ দিয়ে সরু রাস্তা নেমে গেছে জলের ধারে। এখানে ইচ্ছে করলে উপর থেকে নেমে আসা জলের নীচে স্নানকরা যায়। সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। 

                      “নিসর্গ ধামের”  অবর্ণনীয় সৌন্দর্য কলমের মুখে বসানোর চেয়ে অন্তরে উপভোগ করা অনেক বেশিসহজ। কাবেরী নদীর বুকে একটা প্রাকৃতিক দ্বীপ।  নাম দেওয়া হয়েছে নিসর্গ ধাম।একে খুব সুন্দর ভাবে সংরক্ষিত করাহয়েছে। বেশ অনেক খানি জায়গা। বাঁশ আর চন্দন গাছের বন তৈরী করা হয়েছে।  হরিণ ,পাখি, হাতি সংরক্ষিত আছে।ঝোলানো ব্রিজ ,ছড়ানো ছিটানো ভঙ্গিতে রয়েছে অনেকগুলো অপুর্ব কাঠের তৈরি কটেজ,বাগান এত সুন্দর সাজানো  সবমিলিয়ে যেন উপবন। এখানে রাত্রি বাস  করতে হলে আগে থেকে কটেজ বুক করতে হয়।  বাইরে কোন বিদুতের আলোরব্যবস্হা নেই। কটেজের ভিতর  রাত্রিতে আলো আঁধারিতে নানান পোকা, মাকড়ের ডাক,  শুনে মনে হয়  সেই রূপকথারভালুক এসে দরজায় কড়া নাড়বে।  কটেজ গুলি নানান রঙের  গাছের গুঁড়ি , গাছের ডাল দিয়ে তৈরি। অনেকটারূপকথার চকোলেটের বাড়িগুলোর মতন। দিনের বেলা মনে হবে যেন রূপকথার রাজকন্যা, রাজপুত্রদের  বিচরণেরজায়গা। কাবেরী নদীতে এখানে জল বেশি নেই। আছে বড় বড় পাথর। এক একটা পাথরে শোয়া যায় এতটাই লম্বা , চওড়ায় ও অনেকটা। তবু জলে নামতে খুব আনন্দ পাওয়া যায়।  ছোট নুড়িগুলো  নানান রঙ ও নানান ধরণের। হঠাৎইচোখে পড়ল একটা বড় পাথরের ওপর কেউ খেলতে খেলতে রেখে গেছে  দশ/ বারোটা মতন পাথর , সবই যেন রত্ন।কোনটা পান্না সবুজ, হলদে পোখরাজ শিবলিঙ্গের মত কিছু আকৃতির, বাদামী রঙের পাথর  কিন্তু সবই রত্নের মতইউজ্জ্বল। আমরাও কেউ নিলাম না। নুড়ি বলা যাবে না এগুলোকে। যেখানকার জিনিস সেখানে থাকাই ভালো। বন্যেরাবনেই সুন্দর। স্নান সেরে উঠে এলাম। 

                       মাদিকেরী থেকে ৪৭ কিমি দূরে ব্রহ্মগিরি  পাহাড়ের ওপরে  আছে  একটা কুণ্ড । এই কুণ্ডকে বলে “তালকাবেরী”।  বলা হয় কাবেরী নদীর উৎস এই পবিত্র কুণ্ড।এখানে অগস্ত্য মুনি, গণপতি ও শিবের পূজো হয়।  পবিত্র এইকাবেরী নদীকে দাক্ষিণাত্যের গঙ্গা বলা হয়। এখান থেকে  চারিপাশের সৌন্দর্য ও মনোমুগ্ধকর।  কথিত আছে অগস্ত্যমুনির কমুণ্ডলে গঙ্গার পবিত্র জল রাখা ছিল। শ্রী গণেশ কাকের রূপ ধরে কমণ্ডলু উল্টে দিলে  এই কুণ্ডে পড়ে। অগস্ত্যমুনির আশীর্বাদে গঙ্গার জল কাবেরী নাম নিয়ে  কর্নাটক ও তামিলনাড়ু রাজ্যকে   জল দিয়ে পুষ্ট করেন।

                       মাদিকেরী থেকে একদিন যাওয়া হল ১৫ কিমি দূরে  “ দুবারে এ্যালিফ্যান্ট ক্যাম্প”। এই জায়গা হল হাতিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।  ১৫০ টা হাতির সে সময় প্রশিক্ষণ চলছিল।  কাবেরীর জলে হাতিদের স্নান দেখতে বেশ ভাল লাগছিল।  শুঁড়ে জল নিয়ে মাথায় , পিঠে ,পেটে জল ছিটিয়ে স্নান এর দৃশ্য এই প্রথম দেখা।কখনও জলে শুয়ে পড়েওজল কেলি করছে।  হাতিদের  জলকেলির আনন্দ আমাদের শিশু মনকেও উস্কে দিচ্ছিল।  এখানে হাতিদের বিশেষ ট্রেনিংহয় মহীশূরের দশেরা উৎসবের জন্য। মহীশূর রাজবাড়ি থেকে  খুব বড় এবং রাজকীয় শোভাযাত্রা বের হয় দশেরার দিন।নানান কলাকৌশল ও থাকে শোভাযাত্রায়। সমস্ত রাজ্যের মানুষের ঢল নামে এই শোভাযাত্রা দর্শনের জন্য।

                    এভাবেই কুর্গ ভ্রমণ  মোটামুটি ভাবে শেষ করে মহীশূরে ফিরে আসা। কারণ কোন জায়গাকেই সম্পূর্ণ জীবনদিয়ে দেখলেও যেন অনেক কথা ,অনেক কাহিনী অজানাই থেকে যায়।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri