সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
24-December,2023 - Sunday ✍️ By- চিত্রা পাল 279

সব ছায়া ছবি যেন/চিত্রা পাল

সব ছায়া ছবি যেন 
চিত্রা পাল 

চলে গিয়েছি পাঁচ সাড়ে পাঁচ দশক আগে, আমার সেই প্রথম সংসার পাতার বেলায়। ছিলাম দক্ষিণ বঙ্গে, গঙ্গা পেরিয়ে চলে এলাম উত্তরবঙ্গে। ট্রেন থেকে নেমে গঙ্গা পেরোতে মালপত্র নিয়ে কুলির পেছনে দৌড়নো। দৌড়নো যায় নাকি। বালিতে পা ডুবে যায়। অনেকখানি বালির চড়া যে। ওই দূরে দেখা যাচ্ছে জাহাজ। সারি দিয়ে লোক যাচ্ছে মালপত্র, বাচ্ছাকাচ্ছা নিয়ে। প্রায় মাইল খানেক হাঁটা। হয়তো অতোটা পথ নয়। কিন্তু বালি ঠেলে চলতেচলতে আমার তাই মনে হয়েছিলো। তার মধ্যে অনেকেই অনেককে হারিয়ে ফেলছে। বাচ্ছারা ডাকছে, ওবাবা তুমি কোথায়? এরকম কেউ ডাকছে তার মাকে, কেউ ডাকছে দাদাকে, কাকাকে মামাকে। কুলির দিকে চোখ রাখতে গিয়ে পাশে থেকে নিজের লোক সরে যাচ্ছে,ওদিকে নিজের লোক ঠিকঠাক আছে কিনা দেখতে গিয়ে কুলি চলে যাচ্ছে অন্যদিকে। ওই বালির সমুদ্রে এক জনতার ঐকতান যেন। ওদিকে মানে যাত্রাপথের ওধারে, সারি দিয়ে হোগলার চালা। সবাই ডাকছে সেখান থেকে, পেটপুরে ইলিশের ঝোল ভাত, একেবারে গরম গরম, দামটা খুব নরম নরম। ও কত্তা এই  দিহে আয়েন। এই সব শুনতে শুনতে,ট্রাঙ্ক হোল্ডল নিয়ে কাঠের পাটাতন  পেরিয়ে  জাহাজে বা বলা যায়  খুব বড় স্টিমারে ওঠা। 
এতক্ষণে একটু অবকাশ পাওয়া গেলো। জিনিসপত্র একজন পরিচিতের কাছে রেখে জাহাজের ক্যান্টিনে খেতে যাওয়া। কিন্তু গিয়ে দেখি ও হরি, শুধু ডিমের ঝোল ভাত অবশিষ্ট আছে, তাই দিয়ে কোনরকমে দুপুরের খাওয়া সাঙ্গ করা। এবার ডেকের ওপর দাঁড়িয়ে দেখতে থাকলুম গঙ্গাকে। সবে পুজো গিয়েছে। ভরা গঙ্গাএকেবারে জল থই থই। খুব মনে হচ্ছিল, একবার যদি কাছে যেতে পারতাম, ছুঁতে পারতাম। আসলে আমি যে গঙ্গা পারের মেয়ে। গঙ্গাকে সঙ্গে করেই বড় হয়েছি। 
মনে পড়ে বাবার কথা। ভরা ভাদ্র মাস। বাবা গঙ্গার ঘাটের রাণায় বসে পিতৃতর্পণ করছে কোষাকুশি নিয়ে। জোর বৃষ্টি এলো মাঝগঙ্গায়। সে বৃষ্টি দৌড়ে আসছে এদিকে।আমি তাড়াতাড়ি ছাতা খুলে ধরেছি বাবার মাথায়।আর এক হাতে তামার পুষ্পপাত্রে কালোতিল হর্তুকি ধরে আছি। একদিন ঘাট থেকে ঊঠে আসছি, এমন সময়ে একখানা নৌকো দেখি ভাঁটার টানে তরতর করে চলেছে। বাবা ঘাট থেকে চীত্‌কার করে বললো, আছে নাকি? হ্যাঁ বলে সে উত্তর দিলে বাবা তাকে জোর গলায় এদিকে আসতে বলে।তারপরে বাড়িতে ঢোকে একহাতে ইলিশ আর এক হাতে ছাতা নিয়ে। আমার দুহাতে ধরা পুষ্পপাত্র তামার কোষা কুশি।   
তারপরে সে জীবনকে ওপারে রেখে চলে এলাম তিস্তা পারে।গঙ্গার মতো তিস্তাও এক দুকুল ছাপানো খুব বড় নদী। তিস্তাকে দেখে খানিক স্বস্তি যেন। তবে আমার বসবাস ছিলো তিস্তার উপনদী করলার তীরে। তিস্তায় জল বাড়লে করলায় জল বাড়ে, কমলে কমে। বর্ষায় গ্রামের ছেলেমেয়েরা গামছায় ছোট মাছ ধরে কচুপাতায় করে নিয়ে আসত। সেই লাফানো মাছ নিয়েছি কত দিন। যা দাম পেত তাতেই খুশি। গ্রীষ্মে করলা থাকতো রোগাসোগা,বর্ষায় বিপুলা পৃথুলা।তখন ঢুকে পড়তো আমাদের বাগানে, বারান্দার সিঁড়ির ওপরে। সিঁড়ির ওপরে দাগ দেওয়া। সেখানে জল কতক্ষনে পৌঁছচ্ছে সেইটে দেখা।  
সেই জল থই থই সীমানা পেরিয়ে ক্রমশঃ সংসার জীবনে জড়িয়ে পড়েছি, সারা শরীরে মনে অভিজ্ঞতার লূতাতন্তু নিয়ে। এরপরে ঘটি বাটি নিয়ে যখন চলে এলাম নদী তীর থেকে, তখন থেকে সব সব ছবি হয়ে আছে আমার মনের এলবামে। সেই যে অরবিন্দ পাড়ার বইওলা যে ওখানকার লাইব্রেরি থেকে আমাকে বই এনে দিতো,আবার পড়া হয়ে গেলে ফেরত্‌ নিয়ে যেত। সে এক একদিন যখন নতুন বই আনতো,কিংবা যখন সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার টাটকা সংখ্যা হাতে পাওয়া কি আনন্দ যে পেয়েছি তা তুলনাবিহীন। একটা শিমুল গাছ,যার কোন পাতা নেই, শুধু লালফুল, আগুনের শিখার মতো। তাকে পেয়্বেছি বসন্তে, আর পেয়েছি উত্তরের সীমানা জুড়ে ওই চা বাগানের ওই ওপারে কাঞ্চণজ্ঞঘাকে। তার লাল থেকে সোনালি হয়ে সাদা হয়ে যাওয়া দেখেছি অপলক নয়নে। 
এখন এই সদাত্রস্ত শহরের বয়স্ক জীবনে সব ছবি গুলো আসে মনে এক এক করে। দেখি কেউ চলে  যায়নি, মলিন হয়নি, ছায়াছবির মতো চলমান। সবাই আমাকে আনন্দ দিয়ে যায় আজও।  মন আজও বহতা নদীর মতো বয়ে চলে সব জলছাপ।               

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri