সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

সকাল দশটা দশের সোনারপুর লোকাল/আশিস কুমার খাজাঞ্চি

সকাল দশটা দশের সোনারপুর লোকাল
আশিস কুমার খাজাঞ্চি

সোনারপুর জংশন স্টেশনের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে সকাল দশটা দশের সোনারপুর লোকাল ছাড়ে। 
ঐ লোকালের নিত্য যাত্রীদের অন্ততঃ সপ্তাহের ছটা দিন সকালে মানষিক প্রস্তুতি নিতে হয়। আমাকে তো লোকালটি পেতেই হবে। স্কুলে দশটা চল্লিশে প্রার্থনা সভায় যোগ দেওয়ার তাগিদে। ইদানিং 'হচ্ছে-হবে'র আলসেপনায় আঙ্কেল পোজারকেও টেক্কা দিচ্ছি। দু মুঠো ভাত মুখে দেওয়ার সময়েও টান পড়ছে। এখন বেছে নিয়েছি লেস ছাড়া জুতো। উদ্দেশ্য বাঁধা-ছাদার ঝামেলা এড়িয়ে সময় কেনা। দৌড়াতে হবে। রিক্সা কিংবা অটো, অথবা টোটো একটা পেলেই হবে। তিনটি দেয়াল ঘড়ি ও একটা হাত ঘড়ি সময় কোনোটাতে দশ কোনোটাতে পাঁচ মিনিট এগিয়ে রাখা থাকে। এরপর ট্রাফিক জ্যামের কৃপায় তিন মিনিটের পথ ১০-১২ মিনিট হওয়ার সম্ভাব্য টেনশন। পরীক্ষার হলে ঠিক যেমনটি হয়ে থাকে, শেষ উত্তরটি উত্তরপত্রে লিখতে কিছুটা বাকি আছে, এদিকে ঘণ্টার ঢং ঢং আওয়াজ এর হাতছানি। রিকশা থেকে নেমে আবার দৌড়। আরও দু মিনিটের হাঁটা পথ। এরপর শিয়ালদহ-সোনারপুর অথবা শিয়ালদহ-বারইপুর লোকাল থেকে নেমে আসা নিত্যযাত্রীদের বিপরীতমুখী স্রোত ঠেলে এগিয়ে যেতে লেজে-গোবরে হাল। স্টেশন রোডের দু'পাশ জুড়ে সমাজ সেবক দাদা দিদিদের অনন্ত আনুকূল্য-- স্টেশন রোডের দুপাশ জুড়ে ফলওয়ালা, সবজিওয়ালা, চাওয়ালা ও আরো অন্যান্য ওয়ালাদের পসরা। ফল, মাসে ১/২ দিন স্টেশনে প্ল্যাটফর্মের দোরগোড়ায় পৌঁছে EMUএর প্রান্তিক কামরাটির পশ্চাৎদেশ দেখতে দেখতে দাঁড়িয়ে লম্বা শ্বাস নিতে থাকি। ট্রেনটি তখন হয় প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরোচ্ছে, কিম্বা প্লাটফর্মের মাঝামাঝি। 
তিন নম্বর প্লাটফর্মে সোনারপুর লোকাল।সময় সহায় না হলে পিছন থেকে প্রথম কামরায় পড়িমরি করে উঠতে হয়। তার উপর ডাউন বারুইপুর লোকাল যদি ঐ সময়ে ঢুকে পড়ে। আবার 2 নম্বর ও 3 নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝের অংশে হকার ইউনিয়নের সদস্যবৃন্দের গাজোয়ারি অস্থায়ী-স্থায়ী আস্তানায় ভরা। উপরি পাওনা ব্যাগের ধাক্কা, কনুয়ের গুঁতো, মাথায় ধরা ছাতাদের শিকের খোঁচা , প্ল্যাটফর্মে ফেলে রাখা ছোটবড় ফলের ঝুড়িতে হোঁচট খাওয়া, নারী কন্ঠের 'ওহো!', 'চোখে দেখতে পায় না ?' জাতীয় বাক্য বিহার।
রেলের কামরার দরজার মুখ কিছু যাত্রীর বড় বেশি রকমের ভালোবাসার জায়গা। টিপ্পনী কাটতে হবে, হাওয়া খেতে হবে, মুখ বাড়িয়ে ঝুলতে হবে, পোস্টে দুই একবার ধাক্কা খেতে হবে। লেট-কামারদের প্রতি ছুটে আসবে পাঁচ মেশালি কটাক্ষে চোবানো শব্দ-- 'দাদার হাতটা ধর', ' কাকাকে জায়গা দে , জায়গা দে ', 'কি যে করিস !' , ' আহা, বড্ড লেট হয়ে গেছে!' ' দাদা, হবে হবে', 'আরো জোরে, আরো জোরে', 'চেষ্টা করুন, চেষ্টা করুন', 'তব্বে!' এ সবই প্রথম আর শেষ কামরায় এ জাতীয় অভ্যর্থনার বহর। 
আমরা যে মুঠোফোনের কাছে বিকিয়ে গেছি সেটা নিয়ে বাজি ধরার মানুষ আজ আর মিলবে না। আট আর আশিতে তফাৎ মুছে যায় এই একটা মঞ্চে। মুঠোফোন প্রায় প্রত্যেককে গভীর একাগ্রতায় পুষ্টি যুগিয়ে চলেছে। মাদক প্রেমও বোল্ড-আউট এর প্রেমে। লুডো খেলা, তাস খেলাতে পার্টনার দরকার পড়ে না। ফুটবল বা ক্রিকেট খেলায় এখন আর টিমের প্রয়োজন নেই। এছাড়াও অসংখ্য রকমারি গেম তো আছেই। ঠাসাঠাসি ভিড়ে কোনো রকমে দাঁড়ানো যায়। তাতেও মুঠোফোনের পর্দায় বন্দি দর্শনেন্দ্রিয়। কোন সমঝোতা হবে না। কোনো হামাস আর ইসরায়েলের গোলাবারুদের লড়াই-এর মাঝে দাঁড়িয়েও এরা ঐ বস্তুটির একনিষ্ঠ সেবক।
ট্রেনের কামরায় তিনজনের বসবার জায়গায় চারজন ঠেসেঠুসে বসবার চল বহু আগে থেকেই নিয়মে বাঁধা পড়ে আছে। এবার শুধুই দেখা আর শোনা। দেখেও না দেখা, শুনেও না শোনা-- কম বয়সী ছেলে-মেয়ের জংলি প্রেম প্রেম খেলা, সাথে বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড মিশিয়ে আলোচনার আবর্জনা। বোঝা যায় ওরা বাড়ির বাইরে পা রাখার সাথে সাথে অন্ধ-কালার ভূমিকায় থাকে। তাই ওরা স্বচ্ছন্দ যেমন আলাপচারিতায়, তেমন অঙ্গ সঞ্চালনায়। তবে পবিত্র প্রেমের ছবিও ভালো লাগে। ট্রেনের কামরায় ওঠা নামার পথে দিন কয়েক আগে চোখে পড়া। এই সোনারপুর লোকালে। দুই অন্ধ স্বামী-স্ত্রীর এক মিষ্টি ভালোবাসা দেয়া-নেয়া।
ষাট ছুঁইছুঁই শ্রীজনবাবু নরেন্দ্রপুর স্টেশন থেকে ওঠেন একটা নির্দিষ্ট কামরায়। কট্টর বামপন্থী মানুষ। ছিলেন, এখন বামপন্থার বাম্পার সমালোচক, আর একই সাথে রামপন্থার একজন চরমপন্থী সমর্থক এখন। ওঁর থেকে বয়সে বেশ ছোট ৫-৬ জনের একটা দল ওই একই কামরায় ওঠে, যারা সোনারপুর থেকে উঠে আসে। সৃজন বাবুর অত্যন্ত কাছের সহযাত্রী ওরা। ভালোবেসে ভদ্রলোকের জন্যে জায়গা ওরাই রিজার্ভ করে রাখে। প্রয়োজনে কেউ না কেউ জায়গা ছেড়ে দেয় ওদের বায়োজ্যেষ্ঠ বন্ধুবরের স্বার্থে। ওদের স্বার্থ একটাই, ভদ্রলোককে কথার বিচুটিতে উসকে দিয়ে খেপিয়ে তোলা। সৃজনবাবু কখনো সখনো অগ্নিশর্মা হলেও সাঁড়াশি আক্রমণ পুরোটাই উপভোগ করেন। জাস্ট টাইম পাস। গোটা দুনিয়ার খবর কমবেশি ওঁর ভাঁড়ারে থাকে। তর্ক চালিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
দশটা দশের সোনারপুর লোকালের অন্ধ ছেলেটির কথা আমাকে বলতেই হবে। ও সেই ছেলেবেলা থেকে ট্রেনের কামরায় গান শুনিয়ে ভিক্ষে করে। এখন লোক লোক চেহারা। হিন্দি বাংলা মিলে অসংখ্য গান ওর মুখে। সুরে গায়। মাঝারি মানের একটি সাউন্ড বক্স ওর সঙ্গী। একটা সময় গানের তালে তালে ও একটানা মাথা এপাশ ওপাশ ঘন ঘন হেলিয়ে দুলিয়ে গাইতো। এখন সেটা থেমেছে। পরিবর্তে গলা থেকে ঝোলানো সাউন্ডবক্স আর প্যান্ট বারে বারে টেনে উপরে তোলার অভ্যাস আপন করেছে।
সোনারপুর ছেড়ে নরেন্দ্রপুর, গড়িয়া, নিউগড়িয়া তারপর বাঘাযতীন স্টেশন মিনিট দশেকেই চলে আসে। বাঘাযতীন স্টেশনে গাড়ি থামার পর কোন কোন সময় তড়িঘড়ি করে উঠে নামার জন্য দৌড়াতে হয়। যারা নামার তারা ততক্ষণে নেমে গেছে। নামা শেষের পরে গাড়িতে ওঠার যাত্রীদের হিড়িক থাকে। সুতরাং ঐ যাত্রীদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে কোন রকমে নামা। যথারীতি আনমনা হওয়ার পুরস্কারও জোটে -- 'এতোক্ষণ কি ঘুমাচ্ছিলেন?' পিছনে তাকানোর প্রশ্ন নেই। অপ্রিয় কথার পাটকেল আসতেই থাকবে। অগত্যা প্ল্যাটফর্ম ধরে অটো স্ট্যান্ড বা রিক্সা স্ট্যান্ড-এর দিকে এগারো নম্বরের গতি বাড়িয়ে দিই। ততক্ষণে রেলগাড়ির চাকা গড়িয়ে চলেছে শিয়ালদহ অভিমুখে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri