শ্রাবণ, আমার মিথ্যে শ্রাবণ/অমিত কুমার দে
শ্রাবণ, আমার মিথ্যে শ্রাবণ
অমিত কুমার দে
আকাশ তখন নামতে থাকে
এই পৃথিবীর নাভির কাছে
ব্রহ্মনাদে কী যেন হয়
জারুল শিশু শিমুল গাছে!
কোন পুরাণের তিরগুলো সব
ফেলছে জোরে আকাশ চিরে
শ্রাবণ, আমার তীব্র শ্রাবণ,
আমায় তখন রাখিস ঘিরে!
অবশ হল পাহাড়ি পথ
জল-কুয়াশায় মেঘের পাড়ি
পাহাড় জুড়ে উড়তে থাকে
শ্রাবণী-তাঁত শ্রাবণ-শাড়ি!
ঝাউ পাইনের সব পাতারাই
মুখ লুকালো শাড়ির ভাঁজে
শ্রাবণ, আমার গোপন শ্রাবণ,
সেই ভায়োলিন তখন বাজে!
সব নদীরাই শিখতে থাকে
বিপুল কোনো ভাটিয়ালি
হাজার খমক মেঘ বাজালে
তরঙ্গ ঢেউ বাজায় তালি!
স্রোত ডিঙনোর উপায় খোঁজে
নতুন জলের মাছ ও পাখি
শ্রাবণ, আমার প্রাচীন শ্রাবণ,
সেই পুরাতন তোমায় রাখি!
বুকের বিলে বুকের ঝোরায়
দাড়িকা মাছ সাঁতার কাটে
কচু পাতার ছাতা মাথায়
কিশোরবেলা রাস্তা হাঁটে!
হাঁটতে হাঁটতে মেঘের বাড়ি
টিনের চালে টাপুর টুপুর
শ্রাবণ, আমার অঝোর শ্রাবণ,
সকাল তখন মেঘলা দুপুর!
পাল্টে দেবার অমোঘ তুলি
মেঘপুরুষের হাতেই থাকে
জল থইথই পায়ের ছাপে
আলপথে কার যাত্রা আঁকে!
এমন ঘন মেঘ ডিঙিয়ে
কে খুলে দেয় ডিঙার কাছি
শ্রাবণ, আমার সত্য শ্রাবণ,
তুমিই জানো কেমন আছি!
ভিজতে ভিজতে ফুরোচ্ছে দিন
মেঘের কালোয় পড়ছি চাপা
জলের ফিতেয় নিজের মতো
শ্রাবণ মাসের অথৈ মাপা!
কে আর কাকে মাপতে পারে
সব মেঘেরাই হারায় বাসা
শ্রাবণ, আমার মিথ্যে শ্রাবণ,
সর্বনাশের বৃষ্টি-চাষা!
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴