সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
29-October,2023 - Sunday ✍️ By- অভিষিক্তা বসু 211

শৈশব স্মৃতি/অভিষিক্তা বসু

শৈশব স্মৃতি
অভিষিক্তা বসু

বাঙালি মানেই সারা বছর ধরে জীবনটাকে যাপন করা,  সমস্ত আনন্দ নিংড়ে বের করে নিয়ে আসা শরৎ কালের অপেক্ষায়। মা দুর্গা যেন তাদের ঘরে ঘরে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে । প্রবল তারুণ্যে পরিপূর্ণ রোহণের জীবনেও তার কোন আলাদা সংজ্ঞা নেই। বয়সের ২৭তম শরতে পা রেখে তার কাছে এই দিনগুলো অতীত আর বর্তমানের একটা পাঁচমিশালি মেলবন্ধন।
দুর্গাপুজোর কটা দিন তার একেবারেই ঘরে মন টেকে না। তাই রোহন বেরিয়ে পড়ে তার স্ত্রী ও কন্যাটিকে নিয়ে সারা দিনের সফরে। ঘুরতে ঘুরতে কখনো কখনো সে হারিয়েও যায় তার অতীত স্মৃতিতে। যেখানে খুব কম তার সুখ স্মৃতি বর্তমান। আজও অতীতের পাতা উল্টালে খুব একটা মনে পড়ে না শেষ কবে সে মা-বাবার হাত ধরে পুজোর প্যান্ডেল ঘুরে বেড়িয়েছে। তার মা ছিল ভীষণ শৌখিন, বাবাকে সে  বুঝে উঠতে পারেনি। ছোট থেকেই বড় হতে হতে সে দেখেছে বাবা এবং মায়ের কর্ম জীবনকে ঘিরে তাদের ব্যস্ততা সবটাই আলাদা। তাদের মানসিক গঠনও আলাদা। রোহণের মায়ের কাছে তার পেশার পাশাপাশি, সংসার সন্তান দায়িত্ব-কর্তব্য সবকিছুই নিজ নিজ জায়গা করে নিয়েছিল। কিন্তু তার বাবা এসব কিছুর চাপে পড়ে সবকিছুকেই গোল পাকিয়ে ফেলেছিল। তাই রোহনের শৈশব থেকে হারিয়ে গেছে অনেক স্মৃতি,  বলা যেতে পারে শৈশবকে মনে করলে কোন সুখকর স্মৃতি তার মনে পড়ে না। পুজো পুজো গন্ধ আসলেই তার খুব আনন্দ হতো সেই সময়। কিন্তু ঠিক পুজোর কটা দিন রোহন আর তার মা বরাবর একাই হয়ে যেত যেন। ছোট্ট রোহনের মনে হতো, ঠিক তাদের জন্যই যেন বাবার কাছে সময় নেই। এভাবেই যে কতগুলো পুজো,  কতগুলো জন্মদিন,  কতগুলো ছোট ছোট উৎসব - অনুষ্ঠান তাদের বাবাকে ছাড়া কেটে গেছে আজ আর তার হিসেব মেলানো যায় না। অথচ একটা সন্তানের বড় হয়ে ওঠার পেছনে মা-বাবা উভয়ের অবদান অনস্বীকার্য। ঠিকই সূক্ষ্ম কথাটাই তার বাবা কোনদিন বুঝে উঠতে পারল না। বুঝলেও হয়তো জীবনের জৈবিক জটিলতায় অপারগ ছিল সে। কখনো কখনো রোহণের মনে হয়, বাবা কি পারত না সম্পর্কের এই জটিল জালটাকে ছিড়ে বেরিয়ে আসতে। নাকি সে কখনো চায় নি, একটা সুখী সংসারিক জীবন। এমনই বহু প্রশ্ন ত্রিশ এর গণ্ডির দিকে পা বাড়ানো রোহনের মনে আজও ভিড় করে আছে। হয়তো এর উত্তর কোন দিনই সে পাবে না। রহোনের উপলব্ধিতে, প্রত্যেকটা মুহূর্ত অতীত হয়ে যায় আর রেখে যায় এক একটা স্মৃতি। জীবনকে সে সম্পূর্ণরূপে অনুভব করতে চায়, যাতে শারীরিক বলিষ্ঠতা কমে এলে এই স্মৃতিগুলোই মনের মাঝে তাজা হয়ে থাকে। 

তাই তরুণ রোহন  একদমই চায়না যে , তার সন্তানের জীবন থেকে এই সুখের স্মৃতিগুলো হারিয়ে যাক। প্রত্যেকটা মুহূর্ত কে সে এক একটা স্মৃতি করে তুলতে চায়। প্রত্যেকটা বিশেষ দিনকে সে তার জীবনের বিশেষ মুহূর্ত করে তুলতে চায়। ঠিক যেমনটা একদিন তার মা চেয়েছিল। অথচ সে পায়নি কিছুই। মায়ের কাছে রোহন শুনেছিল, সে তার বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে চাতকের মতন শুধু একটু আনন্দ খুঁজে পেতে চাইতো। অনেক সময় সে আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে। কখনো আবার সে আনন্দ ধরাই দেয়নি। জীবন গতিময়। তাই একটা সময়ের পর রোহণের মা বিশেষ দিনগুলোতে তার জীবনের বিশেষ মানুষটিকে আশাতীত তালিকার মধ্যেই রাখেনি। ছোট্ট রোহন দেখেছে সকলের আড়ালে নিভৃতে তার মায়ের চোখের জল, মেকি হাসির অন্তরালে বিষাদের মেঘ। সে দেখেছে বড় হতে হতে মায়ের আমূল পরিবর্তন। একদিন তার মা যে মানুষটিকে তার জীবনের সম্পূর্ণটা দিয়েছিল,  আস্তে আস্তে কি করে দূরত্ব সে বাড়িয়ে ফেলেছে। 
আর রোহণের বাবা , !!! ভাগ্যের চড়াই উতরাইয়ে,  সাংসারিক জটিলতায়, পারিবারিক  চক্রান্তের বলি হওয়া একটা মানুষ। যে কখন স্থির করতেই পারেনি, কোন সময়,  তার জীবনে কোন অধ্যায়টা মূল্যবান। কোন সম্পর্কটাকে আঁকড়ে ধরে,  আগলে রাখা উচিত। আর কোন সম্পর্ককে দূরত্বে রেখেও , আপন করে রাখা যায়।  বুঝে উঠতে পারে নি  এই সমস্ত কিছুর আড়ালে রোহণের শৈশবটা হারিয়ে গেল। বুঝেছিল অনেক পরে,  কিন্তু ততদিনে রোহন সাবলম্বী হয়ে গেছে। তখন আর তার বয়স নেই বাবার আঙুল ধরে ঘুরে বেড়ানোর। তখন আর তার মনে ইচ্ছে জাগে না বাবা-মায়ের সাথে,  একসাথে নাগরদোলা চড়ার।

এই যে শৈশবটা, রোহণের অপূর্ণ রয়ে গিয়েছিল, সেই শৈশবটাকে সে বাঁচিয়ে রেখেছে তার মেয়ের মধ্যে। তাদের স্বামী-স্ত্রীর হাজারো কর্মব্যস্ততার মধ্যে তারা পরিকল্পনা করে একেকটা আনন্দময় সপ্তাহান্তের। একটা জন্মদিন,  একটা বিবাহ বার্ষিকী, একটা পয়লা বৈশাখ, একটা  পুজো প্রত্যেকটা উপলক্ষে তারা যেন এক লক্ষ বছর বাঁচে। রোহন শিখেছে প্রত্যেকটা সম্পর্কের একটা আলাদা  চাহিদা আছে, ... আছে পারস্পরিক বোঝাপড়া। আছে নিজেদের জন্য একটু মুহুর্ত খোঁজা। খানিকটা এই শিক্ষা সে তার মায়ের থেকেও পেয়েছে,  আর জীবন তাকে শিখিয়েছে কি করে সময়ের থেকে ছিনিয়ে নিতে হয় জীবনের পুঁথি। 

রোহনের জীবনে বাবার যে অপূর্ণতা রয়েছে, ঠিক যে সময়ে তার প্রয়োজন ছিল বাবার শক্ত কাঁধের, সেই সময় তার বাবা ছিল আড়ালে। তার মায়ের একজোড়া কাঁধে সমস্ত দায়িত্ব কর্তব্য চাপিয়ে দিয়ে তার বাবা মানুষটি বরাবর আড়ালেই থেকে গেছে। রোহনের কাছে তাই তার মা শুধু দশভূজা নয়, এক সুবিশাল  ছায়া সুনিবিড় বট বৃক্ষ। শৈশবের স্মৃতি বলতে,  রোহনের সমস্ত মনের আঙ্গিনা জুড়ে ছুটে বেড়ায় তার মায়ের তাকে ঘিরে সমস্ত কর্মকান্ড। ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়েছে,  আবার উঠে দাঁড়িয়েছে, ভেঙে পড়েছে বহুবার, কিন্তু কি অসম্ভব হার না মানার লড়াই সে চালিয়ে গেছে সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। দায়িত্ব কর্তব্যের অবিচল থেকে কি করে জীবনের সব ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা যায় এই শিক্ষা রোহন তার বাস্তবের দুর্গার থেকেই পেয়েছে। 

আজ দশমী, রোহনের মায়ের কাছে একটা সময় এই দিনটি খুব ভালোলাগার ভালোবাসার দিন ছিল। সস্ত্রীক - কন্যা নিয়ে তাই রোহন আজ উপস্থিত হয়েছে, তার মায়ের বর্তমান কর্মস্থল - মাতৃ সেবাসদনে। রোহনের জীবনটা সম্পূর্ণ  গুছিয়ে দিয়ে, তার মা চলে এসেছিল শহর থেকে অনেকটা দূরে,  একটা অচেনা মফস্বলে।  যেখানে কিছু সংখ্যক অনাথ মেয়েদের নিয়ে তার আশ্রম। কর্মই যেন তার পুজো। এই মেয়েদের মধ্যেই তার মায়ের হাজারো দুর্গা বাঁচে। যখন রোহনের মা এখানে চলে আসার সিদ্ধান্ত জানায়, সেদিন  রোহন  বাধা দেয়নি। রোহন মনে মনে এটাই ভেবেছিল আজ অন্তত তার মা তার নিজের জন্য বাঁচুক। রোহন  চেয়েছিল তার জীবনের দুর্গা, সমাজে আরো কিছু দুর্গা গড়ে তুলুক। এভাবেই যেন দুর্গারা বাঁচে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri