সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
15-October,2023 - Sunday ✍️ By- রাজর্ষি দত্ত 384

শুকরের দাঁত/রাজর্ষি দত্ত

শুকরের দাঁত
রাজর্ষি দত্ত

কথাটা শুনেই মুখ কুঁচকে তাকিয়েছিল জ্যোতি পাল।
আলোচনা চলছিলো, বা পর্যালোচনাও বলা যায় - কান্তি রায়ের বাড়ির সামনে ড্রেনের উপর মুখোমুখি বাঁধানো সিমেন্টের বেঞ্চে বসে।তখন সন্ধ্যা লাগবে লাগবে করছে।এইমাত্র স্ট্রিট লাইটগুলো জ্বলে উঠেছে। সেখান থেকে তিরছে আলো এসে জ্যোতি পালের মুখে পড়ায় ওর মুখে কুঁচকানো ভাবের সাথে খানিকটা তাচ্ছিল্য দেখা গেছে।

"না না, বুড়ো ছাড়বে না..." পটাশ করে এক মশা মারার ব্যর্থ চেষ্টা করে তিমির বলে। আজকাল চতুর্দিকে ডেঙ্গি হচ্ছে। তবে কে যেন বললো ডেঙ্গির মশা সন্ধ্যাবেলা না, সকালবেলায় কামড়ায়...যদিও এই প্রায় মহামারীর কালে সকাল - বিকাল নিয়ে কে মাথা ঘামায়?

কান্তি রায় অন্য চারজনকে বললো "চল সবাই ভেতরে গিয়ে বসি।গরম সিঙ্গাড়া চলে আসছে... চা-ও বোধহয় রেডি"।

-"যাই বলিস, পাঁচজনে পূজোর মিটিং হয় না - কারুর কোন ইন্টারেস্ট নেই !" জ্যোতি পাল প্যান্ট ঝাড়তে ঝাড়তে বলে।

-"আরে আসবে আসবে...সাড়ে সাতটায় দেখবি ঘর ভর্তি।"ওদের মধ্যে কেউ অভয় দেয়।

ঘরে বসে কান্তি রায় তিমিরকে বলে " তুই ভালো করে শুনেছিস? শুয়োরের দাঁত তো?"
-"আমি তো জন্মেও শুনিনি !" তুহিন সামন্ত মন্তব্য করে। বয়স্ক লোক ।
-"হ্যাঁ দাদা", তিমির বলে " নিবারণ ভট্টাচার্য এ নিয়ে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে ঐটা ছাড়া সে পূজোর কাজ নেবে না - অন্য পুরোহিত দেখ নিতে।"
-"কিন্তু উনি ছাড়া কোন অপশন নেই" কান্তি রায় জানায়।
-"কেন একথা বলছিস?পুরোহিতের অভাব নাকি?" জ্যোতি পাল বিরক্তভাবে বলে।
"ঠিক কথা। ভাল পুরোহিতের সত্যিই অভাব..নিষ্ঠাভাবে কাজ করার" কান্তি রায় বলে " আমাদের পাড়ায় আমরা এই প্রথম করতে চলেছি...দেখি ঠাকুরের লিস্ট টা...হুম...অনেক আইটেম...আশাকরি সব যোগাড় হয়ে যাবে...শুধু দাঁতের ব্যাপারটা, তিমির - তুই একটু কাল ওনার বাড়ি যা...বুঝিয়ে বল যদি বিকল্প কিছুতে হয়..."

সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় ঘর ভর্তি লোক হয়নি।কারণ যারা আগে এসেছিল তারা আগেই সটকেছে।

পরদিন সকালে তিমির একাই গেল পুরোহিত নিবারণ ভট্টাচার্যের বাড়ি।দুদিকে পাঁচফুট উঁচু বাউন্ডারি ওয়ালের মাঝখান দিয়ে গলি গিয়ে ঠেকেছে পুরোহিত মশাইয়ের বাড়িতে। বাউন্ডারি ওয়ালের একদিকে ফ্ল্যাটবাড়ি উঠছে, অন্যদিকে গাড়ির শোরুম।
গেট খুলে ঢুকলে বাঁদিকে একটা বেড়ার ঘর, তার মাটির মেঝে গোবরে লেপা পরিষ্কার উঠোনের চেয়ে একহাত উঁচু।ভেতরে একটি কালী মূর্তি।উঠোনের কোণায় শিউলি গাছ থেকে টুপটুপ করে ঝরা ফুলের মিষ্টি গন্ধ বাতাসে। 

বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন নিবারণ ভট্টাচার্য। তাকে নিয়ে ভেতর ঘরে বসালেন।

তিমিরের নজরে এল কয়েকটা জিনিস যা সে ছোটবেলায় দেখেছে। যেমন কালো রেক্সিনের গদিওয়ালা বেতের মোড়া, ডিজাইন করা কাঠের আলনা, দরজার মুখে রাখা একজোড়া খড়ম, ঘরে কোণে বাঘছাপ লোহার সিন্দুক,মাটির কুঁজো,জানালায় লোহার শিক। তাছাড়া ফাটা সিমেন্টের মেঝে, ছেঁড়া পর্দা, রংচটা ড্যাম্প দেয়ালে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। তবে সবকিছুই তকতকে এটাই যা স্বস্তি!

'খুব স্বাভাবিক'। তিমির ভাবলো। যজমানি করা ছাড়া তো নিবারণবাবুর আর কোন আয় নেই।ওনার বউ শুনেছে দুটো বাড়িতে রান্নার কাজ করে।সে দিয়ে আর কতটুকু ?

"না রে বাবু!" নিবারণবাবু বলেন, "তোকে তো আগেই বলেছি বরাহ দন্তই আমার চাই। দ্যাখ...বরাহ হল বিষ্ণুর অবতার।তাছাড়া  দক্ষিণ ভারত বা অন্যত্র দেবী দুর্গা বরাহ রূপেও পূজিত হন...'ওঁ বরাহরূপিনী দুর্গা প্রচন্ডা মুণ্ডধরিনী'...সেখানে তিনি চতুর্ভুজা।এই বরাহ দন্ত লাগে মৃত্তিকা দোষ শোধন করতে। প্রতিমা বানানোর সময় কেউ কি শুদ্ধভাবে করে? পা দিয়ে মাটি দাবানো হয়, অশুচি হাতে কাদার তাল মাখা হয়। খড়, বাঁশ,কাপড় কোথা থেকে আসে তার কি ঠিক আছে? তাই বোধনের পূর্বে দেবীকে শোধন করা নিয়ম।ভূমিতে মাষভক্ত নিবেদন করতে হয়..."

-"ঐ জিনিস আপনার কাছে নেই?"
-"না, তোকে বুদ্ধি বলে দিচ্ছি ..."
-"বাবা..." পর্দা তুলে হাতে এককাপ চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো...আর তিমিরের মাথাটি একটু টাল খেয়ে গেল। 
তার সদ্য স্নান করে ওঠা ভেজা চুল ছড়িয়ে আছে পিঠে।গায়ের রং নিবারণবাবুর মত ফর্সা, মুখে সামান্য লালচে আভা।হাতে রঙিন কাঁচের চুড়ি। লাল হলুদ তাঁতের শাড়িতে মা দুর্গার আগমনীর সুর বেজে উঠলো সাতসকালেই।

ভেতর ঘরে ঢুকে যাবার আগে মেয়েটির দ্বিধাহীন দৃষ্টি ছুঁয়ে গেল তিমিরের সর্বাঙ্গে। বুঝলো টেবিলে রাখা চায়ের কাপের হ্যান্ডেলে ওর আঙ্গুল ঢুকবে না।এতটাই কাঁপুনি! 

একটা খর দৃষ্টি নিবারণ ভট্টাচার্যের চোখে - "মেথর পট্টিতে যান!ওখানে ওরা শুয়োর মেরে খায় - সেখান থেকে জোগাড় করুন।একবারের কাজ। যত্ন করে রেখে দিলে আগামীতে ওটা দিয়েই কাজ হয়ে যাবে..."
তুই থেকে এক লাফে আপনি! 
"আমি আধখ্যাচড়া কাজ করি না - ডালসমেত জোড়া বেলই লাগবে ; কাটা কলাগাছ না,শেকড় সমেত উপরে আনা চাই। যে পূজার যে নিয়ম তা আমি সম্পূর্ণভাবে করি...দেখতেই পাবেন।

সত্যিই দেখতে পেল সবাই। সার্থক পুজোয় যে এত পরিশ্রম তা কল্পনাতীত। জোগাড় করে আনা বরাহ  দন্ত দেবীর কপাল,বুক ও চরণ ছুঁইয়ে নিবারণবাবু উচ্চারণ করছেন শুদ্ধির মন্ত্র -

ওঁ খড়্গো বৈশ্বদেবঃ শ্বা কৃষ্ণঃ কর্ণো
গর্দভন্তরক্ষুন্তে রক্ষসামিদ্রায়
সুকরঃ সি হো মারুতঃ কৃকলাসঃ
পিপ্লকা শকুনিন্তে শরব্যায়ৈ
বিশ্বেষাং দেবানাং পৃষতঃ।।...

কিন্তু কোথায় সে ?
তিমির অস্থির চোখ ঘুরে বেড়ায় মণ্ডপে। বাইরের কোন কাজে সে যায় না।বন্ধুরা বলে "এখানে তুই কি করছিস? সব তো মেয়েদের কাজ!"
নিবারণবাবুর স্ত্রী প্রথমদিন এসেছিলেন,কিছু কাজে সাহায্য করতে।অথচ সে আসেনি।
সদ্য বিয়ে করেছে রাঘব।ওর বউও আসেনি।শুনলো মাহিনা চক্রে শরীর খারাপ তাই মন্ডপে আসতে পারবে না। নিবারণবাবুর মেয়েরও কি তেমন কিছু ?

নবমীর দিন আর সামলাতে না পেরে প্রাণের বন্ধু হাসু কে সব কথা জানালো তিমির।

-"তুই কি এই টাউনে থাকিস?" হাসু ডলা খৈনিটা মুখে দিয়ে বলে।
-"কেন রে?"
-"নিবারণ ভট্টাচার্যের মেয়ে...সুনেত্রা না সুমিত্রা কি যেন নাম...ওই তো সংসারটা চালায়...চামড়ার করবার করে..."
-"কি বললি? ওঃ বুঝলাম!" তিমির টের পেল দমাস করে একটা হাতুড়ি এসে লাগলো তার বুকে।
-"দিনকাল সত্যিই ভাল নয় রে! মেয়েটাকে দেখলে কে বলবে? যাকগে, লেটস ফরগেট অ্যান্ড ফরগিভ...কি বা উপায়? আজকের বাজারে..."

তিমিরের মাথায় ঢুকছে না কিছুই...

যে দেবীকে শুদ্ধ করতে নিবারণবাবু এত নিষ্ঠাবান,তার নিজের ঘরের দেবীই অশুদ্ধ?শুকররূপী দু-পেয়ে নখ-দন্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত ছিঁড়ে খায় তাকে ! হে ভগবান!

এদিকে বেজে উঠেছে নবমীর আরাধনা - কাঁসর ঘণ্টা শাঁখ আর উলুধ্বনিতে। মণ্ডপের বায়ুস্তম্ভে অনুরণিত হয়ে উঠেছে ঢাকের বাজনা।পুরোহিত ঘর্মাক্ত দেহে ফুল আর উপবীত বাঁহাতে ধরে ডানহাতে পঞ্চপ্রদীপ দোলাচ্ছেন বিশেষ নৃত্যের তালে।ধূপের ধোঁয়ায় কখনো আচ্ছন্ন কখনো বা প্রতীয়মান হয়ে উঠছে দশভূজার মুখ।

তিমিরের ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠল - "জাগতিক নয়, অন্তরের শুদ্ধতাই শ্রেষ্ঠ - সেখানে কোন পাপ ছুঁতে পারে না কাউকে..."

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri