সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

শিলাইদহের পর জীবনান্দের দেশ বরিশাল/প্রশান্ত নাথ চৌধুরী

শিলাইদহের পর জীবনান্দের দেশ বরিশাল
প্রশান্ত নাথ চৌধুরী 

শিলাইদহ হয়তো এ জীবনে  আর আসা হবে না। কিন্তু  যে স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে গেলাম তা সারাটা জীবনের।
এরপর আমরা চলেছিলাম বরিশালের পথে কুমিল্লা পেরিয়ে। কত ছোট বড় নদী  পেরিয়ে বেশ রাতে পৌছলাম বরিশাল। হয়তো এত নদীনালার কারনেই এখনও বরিশালে রেল যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। হোটেলটি ছিল বড় রাস্তার উপর শহরের কেন্দ্রে। 'নাম তার ' সেডোনা'।
রাতেই হোটেল থেকে টুক করে বেড়িয়ে পড়লাম। একটা রিক্সায় চেপে শহর দেখতে। এত রাতেও, শহরের রাস্তায় প্রতিপদে জ্যামের মুখে পড়ভে হচ্ছিল। রিক্সা থামানোর উপায় নেই থামলেই পেছনে অনেক যানবাহন লাইন করে দাড়িয়ে যাবে। দুটো কালিবাড়ি আর বাজারে প্রায় ঘন্টা খানেক চক্কর কেটে রিক্সাওয়ালা  ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম 'এখানে দেখার বিশেষ কি কি আছে'? উল্টে তিনি বললেন ' ইন্ডিয়া থেকে আইছেন তো? এখানে আছে জীবানন্দ( জীবনানন্দ) আর ডজন দুই কালিবাড়ি ।' জলপাইগুড়ি থেকে রওনা হওয়ার আগে জগুদা আমায় বলেছিলেন ' আমাদের আদিবাড়ী বরিশাল। কিন্তু আমি যাইনি। তুই কীর্তনখোলা নদীর  ঘাট ঘুরে আসিস'। রিক্সায়ালা ভাই বলল 'এখন অনেক রাত ঘাট পার গিয়া কাম নাই।' ফিরে এসে ১০০ টাকা দিতেই সে খুশী। অনেক রাত হয়েছিল খাওয়া দাওয়া সারতে।
পরদিন একটু দেরীতে উঠতেই দেখি পিউপা রেডি আমার ভাইবৌ নুপুরও এসেছে খোঁজ নিতে। আমি দ্রুত রেডি হয়ে প্রাতঃরাশ টেবিলে। ভাই বলল আমরা একটা অটো নিয়ে বেরিয়ে আসব। আমার ভাই এসব ম্যানেজমেন্টে পটু। 
প্রথমেই নির্জনতার কবি জীবনানন্দের চাকরি স্থল ব্রজমোহন কলেজ। গেটে ঠুকেই এক সজ্জন অধ্যাপকের দেখা, পরিচয় দিয়ে বলেছিলাম ' কবি জীবনানন্দ যে টিচার্স রুমে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন, বহু কবিতা সৃষ্টি করেছেন‌ সেই ঘরটা দেখব।' উনি বললেন 'পুরনো আসবাব পত্র কিছুই নাই তবে ঘরটির কোন সংস্কার হয়নি। দেখে আসুন।'
একজন বয়স্ক মানুষকে সঙ্গে করে দোতালার টিচার্স রুমে এলাম। দরজায় প্রণাম করলাম।নতুন আসবাবপত্রে ভরা ঘরটি। এই ঘরের বাতাসে হয়ত এখনো জীবনানন্দের শ্বাসপ্রশ্বাস ঘুর বেড়ায়। সেই অনুভূতি আমি হৃদয়ে বয়ে এনেছি।
নীচে দেখা হলো কয়েকটি ছাত্রের সঙ্গে ,ওরা কলেজ প্রাঙ্গন ঘুরে দেখাল। দেখলাম কলেজ ক্যান্টিনে 'জীবনানন্দ কাফে'। দেওয়ালে লেখা 'বনলতা সেন' কবিতাটি। রূপসি বাংলার   কিছু কবিতার লাইন চোখে পড়েছিল। একটা‌ হোস্টেল রয়েছে  জীবনানন্দের নামে। একটা পোস্টার  দেখে জানলাম ১৫-১৭ই ফেব্রুয়ারী কলেজ প্রাঙ্গনে‌  অনুষ্ঠিত হয়েছিল 'জীবনানন্দ মেলা'। কলেজটির স্থাপন করেছিলেন বরিশালের প্রাণপুরুষ অশ্বিণী কুমার দত্ত ১৮৮৯ সনে।
যে পুকুরটি কবির মন খারাপের সময় শীতল স্নিগ্ধ
হাওয়ায় তাকে শান্ত করেছে সেই পুকুরের‌ পাশে দাড়িয়ে কবিকে মনে পড়ল:
"আসিব তবুও আমি - দিন রাত্রি রয় পিছে পড়ে -
তারপর একদিন কুয়াশার মত সব বাধা যাবে সরে।"

আমরা বাংলাদেশ ভ্রমনের প্রথম পর্বে দুদিন আগে গিয়েছিলাম নাটোর। রাজবাড়ি প্রাঙ্গনের কিছু আবাস বেশ প্রাচীন , খসে  পড়ছে পলেস্তরা, বেরিয়ে পড়েছে কঙ্কাল। কাছের এক গ্রামে মৈত্র পরিবারে জন্মেছিলেন আমার মা। এই নাটোরে কি বনলতা সেন ছিলেন কোন দিন?  
ফিরে যাই বরিশালে। অটো চেপে এলাম বগুড়া রোডে জীবনানন্দের বাড়ির ঠিকানায়। স্থানীয় মানুষ কবিকে নিয়ে কি আদৌ ভাবেন? এক দোকানী বাড়িটা দেখিয়ে দিয়েছিল। বড় গেটে একটা বাড়ির নাম লেখা 'ধানসিঁড়ি ', যে নদীর নাম কবি এনেছেন তার কবিতায় বারবার। বয়স্ক মানুষ জলিল ফারুক ওখানেই থাকেন বললেন ' পুরনো বাড়ির কিছুই নেই।' ভাবতে কষ্ট হলো এই শহর কবিকে মনে রাখেনি। শহরে তার নামে কোন স্থাপত্য‌ চোখে পড়েনি। 
ভাল লেগেছিল শহর সংলগ্ন বিশাল  জলাশয় 'দূর্গা সাগর', একটু দূরেই বিশাল এক মসজিদ।  পথে বাংলাদেশ গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখায়  গিয়েছিলাম শুভেচ্ছা বিনিময়ে । গিয়েছিলাম ১৯১৬ সনে চারন কবি মুকুন্দ দাস প্রতিষ্ঠিত কালিবাড়িতে । 
এলাম এবার কীর্তনখোলা নদীর ঘাটে। ভর দুপুরে লোকজন কম। তবে অসংখ্য ছোটবড় স্টিমার নোঙর করে দাড়িয়ে। বেশ কিছু দোকানপাটও খোলা ছিল। খদ্দের তেমন একটা ছিল না।
সন্ধ্যায় এক সাহিত্য অনুষ্ঠানে ছিলাম কিছুটা সময়। বড্ড বেশি  নেতা নেত্রী বন্দনা। 
এলাম কীর্তনখোলা জাহাজ ঘাটায়। সন্ধ্যায় মানুষের জোয়ার, আলোয় আলোকিত। আমরা গিয়ে দাঁড়ালাম 'প্রিন্স আওলাদ' স্টীমারের গেটে। আদরে আমাদের জাহাজের ভেতর ডেকে নিয়েছিল। তিনতলা জাহাজ বলাই ভাল। কেবিন, এসি সহ কেবিন, ডেক পয়সা অন্যায়ী নানা ব্যবস্থা। লিফটে চেপে তিনতলা ঘুরে এলাম। চা-কফি ও নানা খাবারের ব্যবস্থা ছিল। একটি জাহাজ তিন হাজার যাত্রী নিয়ে চলাচল করে।

আমরা নেমে এলাম। এখান থেকে জাহাজ রাত নটায় ছাড়বে পরদিন ভোরে ঢাকায়। ত্রিশ হাজার  কোটি টাকা খরচ করে ২৫ শে জুন ২০২২ এ পদ্মা সেতু  উদ্বোধনের পর ওই জাহাজ গুলোর কৌলিন্য হারালেও , জাহাজ যাত্রার‌ মজাই নাকি আলাদা । এবার হোটেলে ফেরা। কাল সকালে রওনা দিয়ে বিকেলে ঢাকা। পরশু প্রত্যক্ষ করব আন্তর্জাতিক ভাষা শহীদ দিবস। মন আমার চঞ্চল।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri