শিলাইদহ বেড়াতে গিয়ে (৩)/প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
শিলাইদহ বেড়াতে গিয়ে (৩)
প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
চোখের সামনে দৃশ্যমান লাল র়ঙের শিলাইদহ কুঠি বাড়ির সুবিশাল তোরন। সুন্দর হরফে লেখা 'রবীন্দ্র কুঠি'। বিদেশিদের জন্য প্রবেশমূল্য অবশ্য একশ টাকা স্থানীয়দের দশ টাকা। আমার মনে হয় যাদের মাতৃভাষা বাংলা তাদের সবার জন্য টিকিটের মূল্য একটাই হওয়া উচিত। গেট থেকে কুঠিবাড়ির দূরত্ব আনুমানিক দুশ মিটার। ফুলের বাগান দিয়ে সাজানো। একসময় মোট আয়তন ছিল ১১ একর।
অতীতে জায়গাটির নাম ছিল খোরসেদপুর। শেলী নামে এক নীলকর সাহেবের অধীনে ছিল এলাকাটি। সেই নাম থেকে জায়গাটির নাম হয় শেলীদহ। পরবর্তী কালে তা ভেঙ্গে নাম হয় শিলাইদহ ।
১৮০৭সালে সম্পত্তির মালিকানা দ্বারকানাথ ঠাকুরের হস্তাগত হয়। শতাব্দির শেষে ১৮৮৯ সনে রবীন্দ্রনাথ জমিদারীর দায়িত্ব নিয়ে শিলাইদহ এসেছিলেন। ১৯০৫ সনে এখানে বসেই রচনা করেছিলেন 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমার ভালবাসি।' কি আশ্চর্য সমাপতন, এই গান স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে, পদ্মার বক্ষে বোটে, বকুলতলার ঘাটে অসংখ্য ছোটগল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। সোনার তরী, কথা ও কাহিনী, চিত্রা এবং চৈতালি রচিত হয় এই ভূমিতে। তাছাড়া নৈবদ্য ও খেয়ার অনেক কবিতাই শিলাইদহে আলোর মুখ দেখে। ১৯১২ সনে শিলাইদহে বসে স্বরচিত গীতাঞ্জলির কবিতাগুলির ইংরেজি অনুবাদ করে গ্রন্থের আকার দিলেন। ১৯১৩ সালে সেই কাব্য তাঁকে নোবল পুরস্কারে ভূষিত করে। । তাঁর বোটের নাম ছিল 'পদ্মা বোট'। বোটে ভ্রমন, জমিদারী দেখাশোনার সঙ্গে তার অনেক সাহিত্য কর্ম সমাপন করেছেন নদী বক্ষে।
তিনতলা বাড়িটির ১৮টি কক্ষে ছড়ানো রয়েছে কবিগুরুর অসংখ্যক ছবি, আসবাবপত্র, পাল্কি। এক তলায় রয়েছে একটা বিপুল হলঘর।
"বড়ো বিস্ময় জাগে হেরি তোমারে ।
কোথা হতে এলে তুমি হৃদি মাঝারে।।"
কুঠি বাড়ির বাইরে ডানদিকে ছোট দরজা দিয়ে প্রবেশ করলাম, নানা গাছের শীতল ছায়া ঘেরা এক বাগানে। পাশেই বিশাল আয়তনের শান্ত দীঘি। সেখানে বকুলতলার ঘাটে আসর জমিয়ে রবীন্দ্র গান গাইছেন স্থানীয় শিল্পীরা, বাদ্যযন্ত্র সহকারে।
শুনেছিলাম 'যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্নিত এই বাটে।' আমাদের দল থেকে অনুরোধ এলো 'সোনার হরিণ চাই' এবং 'তুমি রবে নিরবে'। অবশেষে নিরবে গান শুনলাম আর শিল্পীদের কিছু টাকা সম্মান দক্ষিনা দিয়ে এসেছিলাম। পরে আমি কিছুটা সময় বকুল তলার ঘাটে বেসেছিলাম বিচিত্র অনুভবের ঘোরে। হঠাৎ দেখি দলের সবাই বাসের দিকে। আমি বাগানের পথে ফিরে আসতেই বৈদ্যুতিন মিডিয়ার বুম হাতে দুজন সামনে দাঁড়াল। ওদের সঙ্গে কথা সেরে বাইরে এলাম।
ডানদিকের একটা বাড়ির সামনে টেবিলে বই সাজিয়ে বসে ছিলেন এক প্রৌঢ়। দুটো বই নিলাম। উনি গৃহহীন শিশুদের আশ্রয় ও শিক্ষার ব্যবস্থা করার কাজে নিয়োজিত। উনাকে সাধুবাদ জানিয়ে বাসের পথ ধরলাম। একটা একতারা সংগ্রহ করে নিলাম, সুভ্যেনির হয়ে থাকবে। রবীন্দ্র কুঠি ও শিলাইদহ থেকে চললাম 'অন্য কোথাও অন্য কোনখানে।'
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴