শিলাইদহ বেড়াতে গিয়ে (১)/প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
"বাজিল কাহার বীণা মধুর স্বরে
আমার নিভৃত নব জীবন-'পরে।"
গত ১৫ ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩ এক শীতের সকালে আমরা জলপাইগুড়ি থেকে কয়েকজন একসাথে রওনা হলাম বাংলাদেশের পথে । আমরা প্রথমে গিয়ে দাঁড়ালাম ভারতবর্ষের প্রান্তসীমায় চ্যাংড়াবান্ধা চেক পোস্টে। ওখানে একটা বড়সর ব্রেকফাস্ট, টাকা বদলে বাংলাদেশের কারেন্সি করেছিলাম, তারপর আমাদের একেবারে ঝামেলাহীন ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা হয়েছিল। বলে রাখি, ভারতীয় একশ টাকার বদলে ওই দেশের একশ ত্রিশ টাকা পাওয়া যাচ্ছিল। তারপর আমরা বর্ডার পেরিয়ে ওপারে বাংলাদেশের বুড়িমাড়িতে প্রবেশ করলাম। তখন বুড়িমারীতে যথেষ্ট ভিড়, আমাদের জিনিসপত্র এক জায়গায় রাখা হলো। অনেকের জিনিসপত্রই ভালো করে তল্লাশি চালানো হলো এবং কিছু কিছু ব্যাগ থেকে, সুটকেস থেকে সোনালী কারনসুধার বোতল বেরোতে শুরু করলো এবং যথারীতি বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের যে সমস্ত রক্ষীরা ছিলেন তারা বোতলগুলো বাজেয়াপ্ত শুরু করলেন। তবে, হ্যাঁ আমি আগেও বলেছি ওদের উদারতার প্রশংসা অবশ্যই করতে হয় কারণ অনেককেই ওরা কিন্তু একাধিক বোতল রেখে দিয়ে, একটা করে বোতল ছাড় দিল বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আবার আমার মত দুচার জনের লাগেজ ওরা একদম চেক করল না। এটা আমার খুব আশ্চর্য মনে হলো। যাইহোক বুড়িমারীতে কিন্তু প্রচুর লোকের ভিড় ওখানে আমরা প্রায় চার ঘন্টা অপেক্ষা করেছি। ওখানেই খাওয়া দাওয়া। বুড়িমারীতে আমাদের ভিসা পরীক্ষার কাজ শেখ হয়ে যাওয়ার পর যখন আমরা গাড়িতে চাপলাম যখন শীতের বিকেল প্রায় চারটে।
ঠান্ডা পরতে শুরু করেছে যদিও ওটা শীতের শেষ বেলা মানে শীত ঋতু টাই শেষ হয়ে আসছে এমন একটা সময়। উচুঁ বাস, টু বাই টু পুস ব্যাক সিট। তবে এসি ছিল না।
আমরা এবার রওনা দিলাম রংপুরের পথে। আমি ড্রাইভারকে অনুরোধ করলাম 'ভাই তিস্তা নদী এলে তুমি একটু আমাকে ডেকো। আমি দূর থেকে তিস্তা নদীকে দেখতে চাই। এখানে তিস্তা কেমন আছে দেখব। আমাদের দেশে তিস্তা তো প্রায়ই মৃত্যুর মুখে'। 'আমাদের দেশে আবার তিস্তা কোথায়? এখন শীতকাল তিস্তায় একটুও পানি নাই শুধু বালির চর শুধু বালির চর'।
তখন বুড়িমারী থেকে রংপুর যাওয়ার হাইওয়েতে নির্মাণ কার্য চলছিল গোটা রাস্তা জুড়ে বালি, পাথর, পিচ, লোকজন গাড়ি ঘোড়া অনেক কিছু। শুধু রাস্তাটাই আস্ত নেই। ছিল নির্মানকার্যের গাড়ি ,ট্রাকটার আর ছিল প্রচন্ড ধুলা, মানে কোন এক সময় ড্রাইভার বলছিল 'এত ধুলো যে সামনে কি আছে দেখতেই পাচ্ছিনা'। একটু পরে আমরা একটা জায়গায় অল্প সময়ের জন্ম চা পানের বিরতি নিয়েছিলাম । এখানে একটা গ্রামের চায়ের দোকানে তখন সান্ধ্যকালীন আড্ডা জমে উঠেছিল সেই দোকানটিতে। আমরাও গিয়ে ভিড় করে দাঁড়ালাম। চা খাওয়ার পরে আমি পাশের দোকানে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ' ভাই আপনার কাছে এই মুখশুদ্ধি যেমন ভাজা মৌরী বা জোয়ান জাতীয় কিছু কি পাওয়া যাবে।' ছেলেটি নিজেই এক টুকরো সুপারী দিয়েছিল। ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করলাম 'তোমাদের এখানে তো তিস্তার পানি একদমই আসছে না তাতে তোমাদের এলাকায় চাষবাসের অসুবিধা হচ্ছে না'। ছেলেটি কেমন যেন ফোঁস করে উঠলো 'তিস্তার পানি পাঠায়ে আপনাদের আর কাম নাই। পানি আসলে ওই মহিলাকে আর গদি থেকে নামানো যাবে নি।' বুঝলাম ছেলেটি বর্তমান সরকারের উপরে খুবই বিক্ষুব্ধ। ইতিমধ্যে আমাদের গাড়ির হর্ন বেজে উঠেছিল আমি গাড়ির দিকে দৌড় দিলাম।
রাত প্রায় আটটায় আমরা রংপুর শহরের প্রান্তদেশে সরকারি অতিথিশালায় গিয়ে উঠেছিলাম । অদ্ভুত সুন্দর সেই অতিথিশালা, বিশাল জায়গা নিয়ে প্রচুর ফুলের বাগান। গাড়ির পার্কিংয়ের সুবিশাল ব্যবস্থা। অতবড় ডাইনিং হল, সুন্দর গোছানো , কচিৎ চোখে পড়ে। একটা একটা আশ্চর্য ব্যাপার না বলেই নয়, ওই দিনের, ওই রাত্রি আটটায় আমাদের এক অর্থাৎ আবার স্ত্রীর ভগ্নিপতি মানস ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন আমাদের নিয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে সৈয়দপুর নিয়ে যাবেন বলে। আমি সেই ভদ্রলোক অর্থাৎ মানসকে হাতজোড় করে বললাম 'ভাই আমি ভীষণ ক্লান্ত, আজকে আমার পক্ষে সৈয়দপুর যাওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়।' আরো বলেছিলাম 'কাল সকাল সাড়ে সাতটায় আসুন আপনার সাথে আমরা অবশ্যই সৈয়দপুর ঘুরে আসব।' আত্মীয়আমার স্ত্রীর পরিবারের সবচেয়ে বড় বোন সৈয়দপুরে থাকেন। সেই রাতটা ছিল যাত্রা শুরুর প্রথম রাত। ডিনার শেষ হয়েছিল রাত প্রায় ১২ টায়। ঘুমে দুচোখ ভেঙে আসছিল।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴