সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
দাস বাড়ির নারকেল গাছের আত্মকথা/কবিতা বণিক

দাস বাড়ির নারকেল গাছের আত্মকথা/কবিতা বণিক

শিখর হইতে শিখরে ছুটিব/শিখা সরকার

শিখর হইতে শিখরে ছুটিব/শিখা সরকার

আমার বর্ষা/লীনা রায়

আমার বর্ষা/লীনা রায়

ভাঙা ঘুমের উৎসব/নীহার জয়ধর

ভাঙা ঘুমের উৎসব/নীহার জয়ধর

স্বপ্নের গাজন/সাধন পাল

স্বপ্নের গাজন/সাধন পাল

দুর্গোৎসব ও জলপাইগুড়ি/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

দুর্গোৎসব ও জলপাইগুড়ি/পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

06-October,2024 - Sunday ✍️ By- শিখা সরকার 196

শিখর হইতে শিখরে ছুটিব/শিখা সরকার

শিখর হইতে শিখরে ছুটিব
শিখা সরকার 


শিরোনামটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা থেকে নেওয়া।
২০১৪ সালের ২৭শে ডিসেম্বর সত্যিই আমরা শিখর থেকে শিখরে ছুটেছিলাম।

২৭শে ডিসেম্বরের ভোর আমরা বিশাখাপত্তনমের স্টেশনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের অপেক্ষায়।৬টা ৪৫ মিঃ ট্রেন আমাদের নিয়ে রওনা হল আরাকু ভ্যালির উদ্দেশ্যে।বিশাখাপত্তনম থেকে আরাকু ভ্যালির দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার।
সেখানে শুধুই পাহাড় আর পাহাড়। ট্রেন ছুটে চলেছে তার ছন্দোময় গতিতে, আমাদের চোখ জানালার বাইরে। নিসর্গ সৌন্দর্য দর্শনে দুটো চোখ যেন যথেষ্ট নয় বলেই মনে হল। দুপাশে সবুজ শ্যামল গাছপালা কুয়াশায় আচ্ছন্ন। আমরা ক্রমশ ওপরে উঠছি। যদিও ট্রেনে বসে কিছুই বুঝতে পারছি না। সামনে যতদূর চোখ যায় শুধুই পাহাড় শ্রেণী সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে। সবগুলো আমরা অতিক্রম করব পাকদন্ডী বেয়ে।

নিচে তাকালে বাড়ি ঘরগুলো খেলনা ঘরের মতো লাগছে। ফসলের ক্ষেত মনে হচ্ছে চারকোনা কাপড়ের টুকরো যেন। রাস্তাঘাট সরু ফিতের মতো দৃশ্যমান।
তখনও জানি না আরও চমক অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। এবার ট্রেন ঢুকল টানেলের মধ্যে, মুহূর্তে সব অন্ধকার। আবার আলোর ঝলকানি, আবার টানেল আবার আলো। আলো আঁধারির খেলায় মেতে উঠেছে কামরার সহযাত্রীরা। টানেলে ঢুকলেই হর্ষধ্বনি।

৪৪টা টানেল পর্যন্ত গুনতে পেরেছিলাম তারপর সব গুলিয়ে গেল।পরে শুনেছিলাম আরাকু যেতে মোট ৫৮টা টানেল পেরোতে হয়।

এক একটা পাকদন্ডী পার হয়ে আর এক পাহাড়ে উঠছি যেটা আগের থেকে অনেক উঁচু। প্রায় ৮০টার মতো ব্রিজ পাড় হতে হয়। এই ব্রিজগুলো দিয়েই একটা পাহাড়ের সঙ্গে অন্যটির সংযোগ। অসাধারণ এই ট্রেন যাত্রা, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। 

আরাকু ভ্যালির আগের স্টেশন বোরা গুহালু, আমরা সেখানেই নামব। সকাল ৯টা ৩০ মিঃ আমরা স্টেশনে নামলাম। ৫ মিঃ হাঁটা পথ বোরা কেভ যেতে।

পথের দুপাশে রকমারি পসরা সাজানো। রয়েছে কয়েকটি খাবারের দোকান, কিন্তু রাত্রি বাসের ব্যবস্থা নেই। এখানেই প্রাতরাশ সেরে নিলাম অপূর্ব সুস্বাদু চায়ের সঙ্গে।

বোরা কেভ
----------------
বিশাখাপত্তনম জেলার আরাকু উপত্যকার অনন্ত গিরি পাহাড়ে এর অবস্থান। পাহাড়ের উচ্চতা ৮০০ থেকে ১৩০০ মিটার। এই কেভের উপর দিয়ে গেছে ট্রেন লাইন। প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি এক বিস্ময়কর গুহা।১০ লক্ষ বছরের পুরনো, দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার, কিন্তু এঁকেবেঁকে যাওয়ার জন্য আরও বড়ো মনে হয়।পায়ে পায়ে পৌঁছে গেলাম গুহা মুখে। প্রশস্ত বাঁধানো রেলিং ঘেরা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছি।এক সময় এসে দাঁড়ালাম বিরাট হলঘরের মতো একটা জায়গায়।এর ছাদ চারতলা সমান উঁচু। আশ্চর্য সুন্দর গুহার দেয়াল। ধাপে ধাপে সিঁড়ি নেমেছে নিচের দিকে। অপর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা তাই স্বচ্ছন্দে ঘোরা যায় গুহার মধ্যে। যতই নিচে নামছি পথ সরু গলির মতো, বাঁকগুলো ভারি সুন্দর।

গুহার ছাদ থেকে ঝুলছে স্ট্যালাকটাইট এ গঠিত ফলার মত নকশা কাটা বিভিন্ন মাপের ফলা। নানা আকারের নানা বর্ণের এই ঝুলন্ত চুনাপাথরের স্তম্ভ। এদেরও অনেক রূপ আছে। যে যেমন ভাবে তার দৃষ্টিকোণ থেকে কল্পনা করবে,সে তাই দেখবে। মনে হল যেন কোনো সুদক্ষ শিল্পী পাথর কেটে নকশা তৈরি করেছে। বিস্ময়ের পর বিস্ময়, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার মতোই সৌন্দর্য। আবার নিচে রয়েছে স্ট্যালাগমাইট বা চুনাপাথরের স্তুপ, কতগুলো এমন ভাবে জমাট বাঁধা ঠিক যেন বসবার জন্য বেঞ্চ বানিয়ে রেখেছে।

এই চুনাপাথরের স্তুপ থেকেই প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয়েছে একটি শিবলিঙ্গ, কোনো এক অজ্ঞাত উৎস থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় জল পড়ছে শিবলিঙ্গের ওপর।একে দেব মাহাত্ম্য ছাড়া আর কি বলা যায়!
এখানে ওখানে পাথরের গায়ে সিঁদুর মাখিয়ে সামনে কয়েকটি ফুল সাজিয়ে দেব দেবীর আরাধনায় রত কত ভক্ত জন।

অনেকটা নিচে নেমে এলাম, এবারে গুহাপথ বেশ সরু আবছায়া আলো। খানিকটা যাবার পর গুহাপথ দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একটা ভাগ একদম নিচে নেমে দেয়ালে ঠেকেছে,আর একটা ভাগ ওপরে উঠে গেছে,এর সিঁড়ি বেশ খাড়া। সিঁড়ি যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে ছোট এক মন্দির, মন্দিরে রয়েছে শিব পার্বতীর যুগল মূর্তি। নিয়মিত পুজো হয়, পূজারী ঠাকুর রয়েছেন। আমি অবশ্য পুজো দেইনি, কারণ আমি ভ্রমণ পিয়াসী এবং প্রকৃতি প্রেমী তীর্থযাত্রী নই। এই মন্দির আর মূর্তি কিন্তু প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয়নি,এটা মনুষ্য কৃত সৃষ্টি।

সম্পূর্ণ গুহা ঘুরে দেখতে সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা।এত যে জনসমাগম তবুও কারো শ্বাস প্রশ্বাসের কষ্ট হচ্ছে না। নানা ফাঁক ফোকর দিয়ে বিশুদ্ধ অক্সিজেন আসছে।

বেরিয়ে এলাম কেভ থেকে, মনে হল যেন এক অপার্থিব জগৎ থেকে ফিরে এলাম পার্থিব জগতে। প্রকৃতির কি অদ্ভুত লীলা! হয়তো বা আরও বিস্ময়কর সৃষ্টি বা শিল্পকলা রয়েছে লোকচক্ষুর অন্তরালে! প্রকৃতি নিজের থেকে ধরা না দিলে তা রয়ে যাবে অধরা।

এবার মধ্যাহ্ন ভোজনের পালা, একটা খাবারের দোকানে ঢুকলাম। খাবারেও পেলাম বৈচিত্র্য অচেনা খাবার, বাম্বু চিকেন।

বিদায় বোরা কেভ,সে থাকুক স্বমহিমায় তার জায়গায়। আমরা ফিরে চলেছি স্টেশনের দিকে। ট্রেনে উঠে বসলাম, আবার এক শিখর থেকে আর এক শিখর বেয়ে আমরা নামতে থাকি বিশাখাপত্তনমের উদ্দেশ্যে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri