সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

লেখক অমিত কুমার দে ও ডুয়ার্স প্রেম/আশিস কুমার খাজাঞ্চি

লেখক অমিত কুমার দে ও ডুয়ার্স প্রেম
আশিস কুমার খাজাঞ্চি

 এমনই একটি সুযোগের আপেক্ষায় ছিলাম। আজ সে বোধ হয় এমনি করে এলো। আমার অত্যন্ত কাছের একজন মানুষ সম্পর্কে দু'চারকথা বলার ঠিকানা খুঁজে পেলাম।

ডুয়ার্স আমায় ভরিয়ে দিয়েছে। সবটা নিয়ে এযাবৎ যা পেয়েছি তা অন্ততঃ আমার ভাবনার থেকে অনেক বেশিই। আমার এলোমেলো ঘুরে বেড়ানো সমেত আনুষঙ্গিক সব সবকিছু নিয়ে। আমার বিয়ের পর অষ্টমঙ্গলাতে শাশুড়িমার উলুধ্বনিতে শ্বশুরমশাইয়ের জলপাইগুড়ির নাথুয়াহাটের বাড়িতে প্রথম পা রাখি। এর আগে জলপাইগুড়িতে আমার কোনও সূত্রেই যাওয়া হয়ে ওঠেনি। আমার সহধর্মিনি মনির মুখে তাদের একজন প্রিয় দাদা এবং শিক্ষাগুরুর বহুতর গুণের কথা শুনেছিলাম। নাথুয়াতে "স্ফুলিঙ্গ" নামক সাংস্কৃতিক মঞ্চের বীজ বপন এবং তার সযত্নে প্রতিপালন যে মানুষটির হাত ধরে তিনি হলেন কথাসাহিত্যিক অমিত কুমার দে। পরবর্তীতে যদিও শ্বশুরমশাইয়ের কাছে অমিতদার নাথুয়াতে আসা থেকে শুরু করে নাথুয়ায় তাঁর অনন্য অবদানের কথা আদ্যোপান্ত মুগ্ধ স্রোতা হয়ে শুনেছি। শ্বশুর বাড়িতে দাদা বৌদির সাথে প্রথম পরিচয় হল। প্রথম সাক্ষাতেই যার মধুর কন্ঠস্বরে, বাচন ভঙ্গিমায়,শব্দ প্রয়োগে অসম্ভব নিজস্বতায় আমি বশ হলাম। প্রায় সমবয়সী একজন দাদাকে পেলাম। শ্বশুরমশায়ের কাছে তিনি পুত্রসম ছিলেন, বৌদি পপি তাঁর বৌমা। অমিতদাই পারেন একজন সম্পূর্ন অচেনা ভাইকে আপনি সরিয়ে তুমি বলাতে। পেলাম আমার বৌদিকে। আমি যেন দুজনেরই কত দিনের চেনা। ডুয়ার্সপ্রেমি দাদার সাথে যত মিশেছি শুধুই নিয়েছি, জেনেছি , দেখেছি। অকুণ্ঠ দাদা সেই পরিসর প্রতি মুহূর্তে আমায় দিয়ে এসেছেন। আমার দু-চার কথা লেখার আন্তরিক অনুপ্রেরণা অমিত কুমার দে। 

প্রকৃতিতে মিশে, ছুঁয়ে শব্দ খুঁজে নেওয়ার, সম্পূর্ণ নিজের তুলিতে শব্দ আঁকার একনিষ্ঠ কারিগর অমিত কুমার দে। উত্তরের অসংখ্য নিজ গুনে সমৃদ্ধ কবি, লেখকদের সম্পর্কে কম বেশি জানার সৌভাগ্য হয়েছে শুধুমাত্র অমিতদার সৌজন্যে। পাঁপড়খেতিতে "সাহিত্যের চড়ুইভাতি" শিরোনামে আলাদা ধারার এক রঙিন চড়ুইভাতির সাংস্কৃতিক সংসারে উপস্থিত থেকে বুঝেছি উপস্থিত লেখক ও বাকি সকলের কাছে অমিত কুমার দে এক বর্নময় ডুয়ার্স। কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার মানে ডুয়ার্স, ডুয়ার্সের অন্য নাম সমরেশ মজুমদার। আমার কাছে ডুয়ার্সের আরো একটি নাম অমিত কুমার দে। যাঁর নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে ডুয়ার্সের আংরা ভাষা, গরুবাথান, চাবাগান, খুট্টিমারির জঙ্গল, ডায়না- মূর্তি-তিস্তা-জলঢাকা। চিলাপাতা-জলদাপাড়া-গরুমারা-চাপড়ামারির জঙ্গল। জঙ্গল চিরে ছুটে চলা শুনশান রাস্তাসকল। নীল পাহাড়, পাহাড়িয়া নদী, নদীদের গান হয়ে ওঠা।

কবি অমিতই পারেন ৩০/৮/২০১৬ থেকে ২৯/৮/২০১৭ গোটা একটি বছর এক নাগাড়ে প্রতিদিন একটি করে কবিতা বুনতে। তুলে নিতে পারেন ৩৬৫টি কবিতায় ঋদ্ধ ভরা-ফসলের মাঠ "পঞ্চাশ পর্যটন শেষে মাধুকরী ধান"। এমন ৩৬৫টি কবিতা নিয়ে আরো দুটো বই অমিত লিখেছেন। বিশ্বসাহিত্যে কবিতার ট্রিলজি একা অমিতই লিখেছেন। 

সমরেশ মজুমদারের পর মুষ্টিমেয় ডুয়ার্সবাসি ডুয়ার্স হয়ে উঠতে পেরেছেন। সকাল-দুপুর-সাঁজ হয়ে ডুয়ার্স হয়ে ওঠা অমিত কুমার দে তাঁদের মধ্যে অন্যতম। যাঁর কাছে ডুয়ার্স চায়ের কাপে চুমুকে, ড্রাইভিং-এ, চলায়, বলায়, বইমেলায় কিংবা লিটল ম্যাগাজিন মেলায়। ডুয়ার্সের কুয়াশায়, বৃষ্টিতে, মেঘে, মোমোর টেবিলে। কখনো সখনো ওঁর অমর সৃষ্টি 'রাজেশ্বরী' ডুয়ার্স বেশে সাহিত্যের বাগানের শ্যামল বনানীর শোভা।

 চিলাপাতার নিঃশব্দে খসে পড়া পাতারা জানে ওদের পতনের শব্দ কবি অমিতের শব্দ বন্ধে বাঁধা আছে। ডুয়ার্সের কুয়াশা তাঁর গল্প, কবিতার কাকলি-কুজন। তাঁর শব্দ-ছবির ক্যানভাসে তাঁর ভালোবাসা-ডুয়ার্স সেজে ওঠে শাল, সেগুন, শিশু,পাইনে। অর্কিড, রডোডেনড্রনদের ভাষায় ওঁর শব্দেরা কথা বলে। আবার তিস্তা যখন চোখের সামনে প্রতিদিন মরে,খুন হয় সেই মরণমুখি রক্তাক্ত শরীরে নিজের কান্না গেঁথে রাখেন কবিতার পংক্তিতে। অঝোরে ঝরা শ্রাবণের বাদলে অমিত-কলম লিখে ফেলে 'শিউলি শ্রাবণ'। পুরনোকে সেগুন পাতায় মুড়ে লিখে রাখেন 'পুরনো'। কবির ভাবনার অসীম গভীরতায় তাঁর মাধুকরীর একটি ধান(কবিতা) 'নতুন' স্বপ্ন দেখায় এক অকৃত্রিম মহাকাব্যের। "সহজ উঠোন"এর "শুরুর কথা" এক অদ্বিতীয় সৃজন। প্রতি রবিবার সহজ উঠোনের সদস্যবৃন্দ আমরা উন্মুখ হয়ে থাকি ফেসবুকে সম্পাদক অমিত কুমার দের দরাজ কন্ঠের 'শুরুর কথা'র অসামান্য উপস্থাপনের শরিক হতে। 

সেদিন লিটল ম্যাগাজিন মেলায় কলকাতার নন্দনে এক নান্দনিক সন্ধ্যায় শুনেছিলাম উত্তরের কবিকণ্ঠে আবৃত্ত স্বরচিত কবিতা "মধুবনি জানে"। সঞ্চালিকা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন অনেকে কবিতা লেখেন, কিন্তু এনার কবিতার শব্দ চয়ন এবং প্রয়োগ সম্পূর্ন অন্য ধারার, অন্য ভাবনার। সে সন্ধ্যায় উপস্থিত শ্রোতাবৃন্দ দাঁড়িয়ে সমস্বরে সঞ্চালিকাকে সমর্থন করে কবি অমিতকে অভিনন্দিত করেন। 

হ্যাঁ "মধুবনী জানে", মধুবনীই জানে কোনো এক ডুয়ার্স পাগল অমিতকে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri