লিখছি তোমায় যীশু/সত্যজিৎ চক্রবর্তী
লিখছি তোমায় যীশু
সত্যজিৎ চক্রবর্তী
মহামানব যীশু তোমাকে লিখতে গিয়ে মনে পড়ছে ২৪ ডিসেম্বর, ১৮৮৬, খ্রিস্ট - জন্মের এক প্রাক সন্ধ্যার কথা। একদল তরুণ সেদিন যীশুর জীবন অনুধ্যানে মগ্ন হয়েছিলেন। নিশ্ছিদ্র আঁধার ভেদ করে, ঘন কুয়াশার আবরণ ছিন্ন করে তাঁরা আগুন জ্বালিয়ে বসলেন। এ আগুন প্রতিজ্ঞার, বৈরাগ্যের! প্রজ্জ্বলিত হুতাশনকে বৃত্তাকারে ঘিরে উপবিষ্ট নয়টি অগ্নিশুদ্ধ প্রাণ। হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে উঠে আসছে কিছু গভীর উপলব্ধির কথা। এই মহান সঙ্কল্পযজ্ঞের ঋত্তিক স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর গুরু ভ্রাতাদের সেই ঐতিহাসিক ধুনিমণ্ডপের অর্নিবান বহ্নিশিখায় যীশুর মতন জগৎ এর কল্যানে আত্মবিসর্জনের, ক্ষুদ্র সুখের নীড় ভেঙ্গে বিশ্ব- নিকেতনের নাগরিক হয়ে ওঠার শপথ নেওয়ালেন। স্বামীজী সহ ষোলোজন বড়দিনের সেই আগের রাতে ত্যাগব্রতের সঙ্কল্প গ্রহণ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মানব মুক্তির সুবৃহৎ কর্মযজ্ঞে। সূচনা হয়েছিল এক অভিনব এবং প্রচন্ড শক্তিশালী ভাবান্দোলনের। কিন্তু বহু যুগ আগের রাতের হিমে স্নাত সেই আকাশ আর বর্তমান পৃথিবীর এক প্রান্তে থাকা তোমার জন্মভূমির ঘন কালো বারুদে ঠাসা আকাশটার মধ্যে অনেক ফারাক! হে মহামানব যীশু, তোমার জন্মস্থান চার দিক দিয়ে ঘেরা, তিনটি ধর্মের পীঠস্থান বেথালহামের পবিত্রভূমি আজ প্রায় এক বছর হলো বোমা, বন্দুকের অগ্নিবর্ষণে
ছারখার হয়ে যাচ্ছে। মায়ের কোলের দুধের শিশুটিও এই অগ্নিবর্ষণে রেহাই পাচ্ছে না।দুই পক্ষের যোদ্ধাদের মধ্যে পড়ে নিরীহ শিশু ও নারীদের বেঘোরে প্রাণ যাচ্ছে। এক বছরের মধ্যেই প্রায় ২০০০০ নিরীহ প্রাণকে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় পিষে যেতে হল। শিশির ভেজা রাতে মোমবাতির স্নিগ্ধ আলোয় সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে তোমার পবিত্র জন্মস্থানে নতজানু হয়ে মনের সব আকুতি উজাড় করে দেওয়া প্রার্থনার পরিবেশ একেবারে উধাও। হিংসায় দীর্ণ পৃথিবীর এই অংশে মন বড় করার দিন আর নেই।চারিদিকে শুধুই হাহাকার! বর্তমান বিশ্বের 'চোখের বদলে চোখ' নীতিতে যীশু তোমার বলা বাণীর প্রাসঙ্গিকতা আরও বড় হয়ে উঠেছে। তুমি বলেছিলে প্রতিবেশীকে আপন করে নিতে, আমরা সীমানা পেরিয়ে প্রতিবেশীদের বে-আব্রু করতে আজ সিদ্ধহস্ত। একে অন্যের জমিটাকে ক্লাস্টার বোম দিয়ে ধ্বংস করতে আজ এক মিনিট লাগে। সুড়ঙ্গে লুকিয়ে থাকা মানুষগুলোকে বের করতে জল- আগুনের খেলা টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে এসে আমাদের সভ্যতার সব অহংকার, গৌরবকে ধূলায় মিশিয়ে দিচ্ছে। যারা তোমার সত্যম, শিবম, সুন্দরমের মন্ত্র ভুলিয়ে দিতে চাচ্ছে, প্রেম, আত্মত্যাগ কতটা শক্তিশালী তা ভুলিয়ে দিতে চাচ্ছে, ক্ষমার পরাকাষ্ঠা হে মহামানব যীশু, তুমি কি আজও তাদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখবে?
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴