লাল শিমুলের চিঠি
লাল শিমুলের চিঠি
অমিতাভ দাস
----------------------
সে যে বলল এত ভালোবাসি বোঝনা?
মনে মনে অনেকবার নৌসন্দিপুর মাঠে পৌঁছতে চেয়েছিলাম। আবার ভয়ও পেয়েছি। বিধবা মায়ের কষ্ট করা সংসারটুকু অনবরত ধরে রাখার চেষ্টা আবার সবটুকু তো আমাকে নিয়ে। শুকনো বালির মতো তার সবটুকু ইচ্ছে আঙ্গুলের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাবে- যদি নৌসন্দিপুর মাঠে পৌঁছাই। অথচ সে যে ওখানে আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। পলাশের সাথে পরতে পরতে ভালোবাসায় ধুয়ে যাচ্ছিলাম ইচ্ছেমতি নদীর জলে। বন্ধুত্বের গভীরে বয়ে চলা ভালোবাসা ফল্গু ধারার গল্প যেন। সে গল্প বন্যার জলে মন ভাঙার গল্প। প্রতিদিন সে ভালোবাসা জাল বুনে সংসার গড়তে চায়। এক ঢাল এলো চুল আর সবুজ হলদে ফুল ফুল ছাপা শাড়ি। পলাশের বুকে বন বন গন্ধ। সে যে আমাকে লাল শিমুল করেই ডাকে। সেবার পাগল বসন্ত ঋতু। বুকে চিনচিন ব্যথা, হুহু বাতাস আর শুকনো মুখ নিয়ে নৌসন্দিপুর মাঠে পলাশ এসেছিল। তখন সন্ধে প্রায় সমাগত। সন্ধে তারার কোল ঘেষে দ্বাদশীর চাঁদ। আমার আর কথা বলা হল না। একা একা শাল সেগুনের বন আর বনফুলের গন্ধে যেন থিতিয়ে এলো আমার বোধ। আকাশের থেকে তারা খসে পড়ল। অস্ফুটে সে যে বলল এত যে ভালোবাসি বোঝ না? সে সময় জোনাকিরা দলবেঁধে গান গেয়ে উঠল। শীত বাতাসের কানাকানি পেরিয়ে ফিসফিসে গলায় সে বলল চললাম তবে।
ওই যে দূর পাহাড়, আগুন আগুন লাল বন আর স্বপ্নের মত নদী পেরিয়ে দূর-অনেক দূরে- আর আসব না। সে চলে যেতেই কত কত বছর পাগল বসন্তে চিনচিন ব্যথা বেড়েছে, শুকনো পাতা উড়েছে। বিষণ্ণ বাতাসে যেমন করে ফেরিওয়ালা দুঃখ বিক্রি করে ফেরে ঠিক তেমনি বসন্ত এলেই- 'অপেক্ষা'। পুরনো মরচে ধরা তোরঙ্গ বারবার খুলে দেখেছি সাদা কাগজে গোলাপ নয় একটা লাল সিমুলের ছবি এঁকেছিল সে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴