লাটাগুড়িতে রাত্রিবাস/লীনা রায়
লাটাগুড়িতে রাত্রিবাস
লীনা রায়
গন্তব্য লাটাগুড়ি। রাত সাড়ে ন'টায় বর্ধমান জংশন থেকে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে চেপে বসলাম।গত এক বছর এই দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলাম। স্বাভাবিক ভাবেই খুব উত্তেজিত।বছরে একবার আমরা কলেজের বান্ধবীরা মিলিত হই।আগামীকাল নভেম্বর মাসের এগারো তারিখ – সেই বহু প্রতীক্ষিত দিন। আমরা প্রতিবার ডুয়ার্সের কোন এক জায়গায় দেখা করি। আমাদের চির সবুজ বন্ধুত্ব উদযাপনের জন্য ডুয়ার্সের বিকল্প কিছু হতে পারে না।এবারও সবার মিলিত সিদ্ধান্তে গন্তব্য– লাটাগুড়ি। সেখানে প্রকৃতির মাঝে একটি রিসর্টে সকলের রাত্রিবাস।
সকাল সাড়ে সাতটায় জলপাইগুড়ি রোডে নামলাম। অটো ধরে আশ্রম পাড়া – বনার বাড়ি। বনাকে দেখেই সারা রাতের ক্লান্তি এক নিমেষে উধাও। এরপর স্নান সেরে ব্রেকফাস্ট। তারপর একপ্রস্থ ফটো সেশন সেরে সাগরিকা,বনা, মন্ডে আর আমি চললাম লাটাগুড়ি। বেলা এগারোটার মধ্যে পৌঁছে গেলাম গ্রীন পার্ক ইকো রিসর্ট। রাস্তার দু'দিকে চা বাগান। নেওড়া নদীর ধারে ছবির মত রিসর্ট। অপূর্ব সুন্দর।
একে একে অনি,গীতা,পম্পা, মুক্তা,চন্দনা, সুমনা চলে এলো। একমাত্র সাগরিকা দত্ত এলো রাতে। এক বছর পর দেখা। আনন্দে বয়স ভুলে একদম ছেলেমানুষ সবাই। গল্প করে, ফটো তুলে, হইহই করে দুপুরের খাবার সময় হয়ে গেল।
খাবার খেয়েই বেড়িয়ে পড়লাম। রিসর্টের গেটের উল্টো দিকেই মস্ত ক্যাকটাস। সেখানে বিস্তর ফটো তোলার পর সোজা চা বাগানে। চা বাগানের শান্ত সবুজে অদ্ভুত ভাল লাগাতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম। রিসর্টের কর্মচারীরা তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে বলেছিল। কারণ সন্ধে হলেই ওখানে চিতা বাঘের উপদ্রব। বাকি বিকেলটা রিসর্টের দোলনাতে কাটিয়ে অবশেষে ঘরে।মাঝ রাত পর্যন্ত চলল গল্প।
বাকি রাত এক ঘুমেই পার হল। নভেম্বরের শুরু হলেও বাতাসে বেশ ঠান্ডার আমেজ। অসম্ভব সুন্দর প্রকৃতির মাঝে হালকা রোদে চলল খানিক গল্প। এরপর ব্রেকফাস্ট।ফেরার সময় এগিয়ে আসছে।গত একবছর এই দিনটার অপেক্ষায় দিন গুনেছি।আর কিছুক্ষনের মধ্যেই সবাই ফিরে যাব নিজের নিজের বাড়িতে।ভারী মনে একে একে রিসর্ট ছেড়ে বেরিয়ে গেলে পড়ে রইলাম আমি আর সুমনা। সুমনা গজলডোবা আর আমি চললাম মালবাজার স্টেশন।সেখান থেকে রাতের ট্রেনে বাড়ি ফেরা। আবারও এক বছরের প্রতীক্ষা।
এক যে আছে দেশ
লীনা রায়
এক যে আছে দেশ –
এদিক, ওদিক সবদিকে যে
বন্য নীরবতা,
তুলির টানে নিখুঁত ছবি
সবুজ গল্প কথা।
সূর্য ওঠে নিয়ম মেনেই
সাত সকালের রোদ,
বনের পথে গভীর ছায়া
সবুজ অবরোধ।
সেখানেতে সরল যাপন
সম্বল খড় কুটো,
জীবন জুড়ে একটি কুঁড়ি
সঙ্গে পাতা দুটো।
সমস্ত রাত পূর্ণিমা চাঁদ
জোছনা ধোয়া ঢল,
পাতায় খেলে হীরের দ্যুতি
জমকালো অঞ্চল।
ডুয়ার্স জুড়ে তুলির আঁচড়
রঙ চঙে ক্যানভাস,
মানুষ বাঁচে, সঙ্গী যে বন
সবুজ সহবাস।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴