সোশ্যাল মিডিয়ার ঝলমলে আলোয় ঝলসে ওঠা একটি নাম—অমায়িক। চেনা মুখ। পরিচিত কণ্ঠ।কখনো গান, কখনো স্বরচিত কবিতা, কখনো দৈনন্দিনে লুকিয়ে থাকা নির্মল আনন্দ - এই নিয়েই তার অন্তর্জাল জীবন। প্রতিদিন তার মুখবই প্রোফাইলে ঢুকেই কেউ না কেউ হাঁফ ছেড়ে বলত, "চলছে ভাই, দারুণ চলছে!" অনুরাগীর সংখ্যা প্রায় দশ লক্ষ, বন্ধু তালিকা পূর্ণ—দশ হাজারে ঠাঁই নেই।

মেসেঞ্জারের টুংটাং শব্দে রোজ ভোর আড়মোড়া ভাঙে। নতুন ভিডিও কেমন লাগল, কোন ক্যাপশনে মন ভিজল—এসব নিয়ে অগণিত বার্তা। লাইভে ঢুকলেই সবাই বলত, "দা, তুমি না থাকলে চলেই না!" ... সবাই বলত, সবাই...

দিন দশেক হল,অমায়িকের প্রোফাইলে নেই কোনো পোস্ট। চুপচাপ পড়ে আছে তার ডিজিটাল অস্তিত্ব।নিউজফিডে তার অনুপস্থিতি প্রথমে কারও চোখে পড়েনি। পরে যখন মনে পড়ল, তখন কেউ কেউ জিজ্ঞেস করল—"দা, গ্যাপে নাকি?” “কনটেন্ট বানানো ছেড়ে দিলে?” কিন্তু কেউ জানে না, অমায়িক এখন ICU-তে, বাইক দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাত, শরীর নিস্তেজ। সাদা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন শুধু তার মা আর বাবা। কোনো বন্ধু নেই।কোনো পরিচিত কণ্ঠ নেই বলার মতো—“আচ্ছা, কিছু দরকার?” মেসেঞ্জারে আজও টুংটাং করে অনেক বার্তা আসে, কিন্তু ICU-র দরজার ওপারে ভিড় করে না কোনো মুখ। যে অমায়িককে সবাই ‘ভাই’, ‘দা’, ‘জীবন’ বলত, তার জীবনে বাস্তবে কেউ নেই। একটা সময় যিনি সবার রিচ বাড়াতেন,আজ তার নিজের রিচ—বাস্তব জীবনে—ডাউন।

তবু একটা আশা রয়ে যায়।

হয়তো একদিন, ICU-এর সাদা আলো পেরিয়ে, অমায়িক আবার ফিরবে—

নতুন করে, একটু নিঃশব্দে, একটু বুঝে—

কে আপন, কে শুধুই ফলোয়ার।