রাধাচূড়ার চিঠি/অমিতাভ দাস
রাধাচূড়ার চিঠি
অমিতাভ দাস
'বকুল বাড়ি'
তোমাকে,
ক'দিন ধরে রাধাচূড়ার মন খারাপ। চাঁপা গাছের ডালে থেকে থেকে অদ্ভুত বিষণ্ণ ডাক। মনে হল পাখিটাকে উড়িয়ে দিই। জানালা দিয়ে খুঁজছিলাম পাখিটাকে। সারারাত ধরে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি, স্যাঁতস্যাঁতে ঠান্ডা। গতকাল রাতে পিচের রাস্তা বরাবর চৌমাথা মোড়ে হঠাৎই মনে হল আমার দিন ফুরিয়ে আসছে। কোনো কোনোদিন খুব কষ্ট হয়। অনেক বছরের জমানো অভিমান চৌমাথার মোড় ছাড়িয়ে অনেক দূরে বকুল বাড়ির জঙ্গল ছুঁয়ে জোনাকির সাথে কোথায় জানি মিলিয়ে যায়।
শুনেছি, তোমার বাড়ি আজ আগাছা-জঙ্গলে পরিপূর্ণ। সাপ-ইঁদুরের বাস সেখানে। অথচ অনেক অনেক অপেক্ষা।দীর্ঘশ্বাস। শেষ ট্রেন ধরে দেখা হবে আমাদের। সেখানে হাওয়ায় হাওয়ায় রঙে রঙে উড়ে বেড়ায় হলুদ, সবুজ ও খয়েরী প্রজাপতি। সে বাগানে প্রেম নয় একটা গল্প লিখবে রাধাচূড়া। ভারী নয়, সব অভিযোগ তুলোর মতো ভেসে বেড়াবে। বিষাদের ওপারে আনন্দ, তার বাসভূমি অন্তরে অন্তরালে, সেখানে কারও প্রবেশাধিকার নয়, জীবন শেখায় অপেক্ষা করতে। অনেক বছর আগে চৌমাথার মোড়ে তুমি দাঁড়িয়েছিলে। তখন শীত নেই, তবুও ঝিমঝিমে শরীর। কদম গাছে হেলান দিয়ে তুমি বললে 'চা খাবে রাধাচূড়া?' কোনো কথা বলিনি। আবার বললে 'বকুল বাড়ি যাবে আমার সাথে? সেখানে নাটক হবে "আম্রপালী", তোমাকে প্রধান চরিত্রে ভেবেছি।' না করিনি, নাটকে অভিনয় করেছি। প্রশ্ন করলাম, আপনার চরিত্রের নাম? উত্তরে বললেন 'সিদ্ধার্থ'।
অদ্ভুত মাদকতা মেশানো 'বকুল বাড়ি'। সারা বকুল বাড়ি বকুল ফুলের সুগন্ধ ছড়ানো। এই বাড়ির জঙ্গলে ঘর ফেরতা পাখিদের ডাক, বারান্দায় নাটকের রিহার্সাল চলছে -
'আমি আম্রপালী। সারা বাড়ি জুড়ে ধূপ-ধুনার গন্ধ। কেমন জানি আধ্যাত্মিক হয়ে পড়েছে কলা-কুশলীরা "বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি, ধর্ম্মং শরণং গচ্ছামি, সংঘং শরণং গচ্ছামি।" তারপর বিম্বিসার, মহারানি একে একে বৌদ্ধ হলেন ধর্মের শরণ নিলেন। সংঘের স্মরণ নিলেন। বিখ্যাত নটী আম্রপালী বুদ্ধের শরণ নিলেন। একদিন বুদ্ধদেব ভিক্ষার জন্য হেঁটে যাচ্ছিলেন রাজপথ দিয়ে, ছুটে এল সে পথে উন্মত্ত গজরাজ। নগরীর লোকেরা প্রাণভয়ে দিকবিদিক্ জ্ঞানহারা হয়ে পালাচ্ছে, উন্মত্ত গজরাজ পথ রোধ করল বুদ্ধের। বুদ্ধ সস্নেহে তার মাথায় হাত বুলাতেই ধীরে ধীরে হাঁটু মুড়ে বসল গজরাজ। আম্রপালী বৌদ্ধ হওয়ায় অজাতশত্রু খেপে গেলেন। তিনি বলেন 'সব গণ্ডগোলে নারীই।' বললাম নারী ভোগের এমন ভাবনা না গেলে এমন-ই মনে হয়। আমি বললাম- ভোগ কীসে যায় প্রভু?
সিদ্ধার্থ- 'ত্যাগে'
আমি ( আম্রপালী)-ত্যাগ কীসে আসে?
সিদ্ধার্থ- 'প্রেমে'
আমি(আম্রপালী)-আমিও প্রেমে সব ছেড়ে এসেছি প্রভু।
সেদিন চৌমাথা মোড় থেকে বকুল বাড়ি আসা এবং যাওয়া ছিল। যাওয়ার পর বেদনা ছিল, সারাপথ জুড়ে বকুল ফুলের সুগন্ধ আর বৃষ্টি ছিল।
রাধাচূড়া
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴