সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
18-June,2023 - Sunday ✍️ By- গৌতম চক্রবর্তী 628

রবীন্দ্রস্মৃতি বিজরিত সিঙ্কোনার দেশ মংপুতে/গৌতম চক্রবর্তী

রবীন্দ্রস্মৃতি বিজরিত সিঙ্কোনার দেশ মংপুতে 
গৌতম চক্রবর্তী

‘ঘন ছায়াছন্ন পথ দিয়ে মেঘ কুয়াশার রাজ্য ছাড়িয়ে মংপুতে যখন নামলাম তখন রোদ চারদিকের ধোয়া সবুজের উপর ঝিলমিল করছে, শেষ বেলাকার রোদের সুন্দর শান্ত হাসি।' 'মংপুতে রবীন্দ্রনাথ' বইটিতে মৈত্রেয়ী দেবী এভাবেই মংপুর বর্ণনা দিয়েছিলেন। আজও যেন পাল্টায় নি সেই মংপু। পাহাড়ে বেড়াতে হলে হাল্কা গরম আর শীত এই দুটো সময়ই আমার উপযুক্ত মনে হয়। শীতে কনকনে ঠান্ডা, কুয়াশা, মিষ্টি রোদ আর বরফের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আর হাল্কা গরমে পাহাড় খুবই মনোরম, বিশেষ করে বসন্তে। তবে পাহাড়ের আসল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে বর্ষায়। ঘন সবুজ বন, পাহাড় থেকে প্রবল বেগে ঝাঁপিয়ে পড়া ঝরনা, দামাল নদী এক মায়াময় সৌন্দর্য্য সৃষ্টি করে। বর্ষা ছাড়া পাহাড়ের এই রূপ সারা বছর দেখা যায় না। তবে মেঘ আর বৃষ্টির সঙ্গে লুকোচুরি খেলেই ঘুরে বেড়াতে হয়। তাড়াহুড়ো করলে ভিজে একসা হতে হয়৷ আর অতি অবশ্যই সাবধানতা প্রয়োজন। সিঙ্কোনা গাছের ছাল থেকে ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিষেধক কুইনাইন আবিষ্কার করে বিজ্ঞানী রোনাল্ড রস চিকিৎসা জগতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসে। তারপর থেকে পর্যটন মানচিত্রে মংপু নতুন কিছু নয়। কিন্তু উজ্জ্বলতার দিক থেকে তা অনেকখানি নিষ্প্রভ। কারণ মংপুর পাহাড় জঙ্গলের অবস্থান উন্মোচনের কথা কেউ কোনদিন ভাবেনি।  শিলিগুড়ি থেকে সেভক, কালিঝোরা, রম্ভি হয়ে ৫১ কিলোমিটার এবং দার্জিলিং থেকে ৩৩ কিমি দূরের ৩৭০০ ফিট উচ্চতার মংপুর দিকে চলেছে আমাদের যন্ত্রদানব। গাড়িভাড়া করে যেতে ঘন্টা দুই সময় লাগে। তিস্তা ৩ নম্বর প্রজেক্ট পেরোলেই রম্ভি বাজার। ওখান থেকে রাস্তা উঠে গিয়েছে ১৪ কিমি দূরে মংপুতে যার আসল নাম মংপো। দার্জিলিং থেকে মংপু পর্যন্ত বাঁকানো যে রাস্তাটা চলেছে, সেই রাস্তা বরাবর যেতে যেতেই চা বাগানগুলির নিখাদ সৌন্দর্য দু'চোখ ভরে উপভোগ করা যায়। আবার তিস্তার পাড় ধরে রম্ভিবাজার হয়ে মংপু গেলে সবুজ তিস্তার জল, নীল পাহাড় ঘেরা চা-বাগানের স্নিগ্ধতা মনকে করবে শান্ত।

প্রতিদিনের ব্যস্ততার দৌড়ে যে প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের একাত্ম ব্যক্তিগত সম্পর্কটুকু গড়ে উঠতে পারে না সেই সম্পর্ক যেন একটু একটু করে গড়ে উঠতে থাকে এই পথ চলার বাঁকে বাঁকে। চা-বাগানের সৌন্দর্যতেই শুধুমাত্র নয়, মুগ্ধ হতে হয় পাহাড়ি অর্কিড আর নাম-না জানা পাহাড়ি ফুলের রঙিন সৌন্দর্যে। কালিম্পং যাওয়ার পথে 'সাড়ে ছ-মাইল' গ্রাম থেকে ক্রমশ নিচের দিকে নামতে নামতে সতেরো কিলোমিটার দক্ষিণে হল মংপু। রম্ভি থেকে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছলাম মংপুতে। হিমালয়ের পাদদেশের পাহাড়ের ওপরের শহর মংপু বর্তমানে কালিম্পং জেলার অন্তর্ভুক্ত। অপূর্ব নৈসর্গিক শোভায় ভরপুর। চোখ জুড়িয়ে যায়। অদূরে সিকিম-চীন সীমান্ত নাথুলা পাস। রবীন্দ্রনাথের প্রকৃতিপ্রেমের নিদর্শন মংপুতে পাওয়া যায়। এই শহরের শোভা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাই তিনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ডাকে বারবার ছুটে গিয়েছিলেন মংপুতে। সেখানে থেকেছেন। এখন তো রবীন্দ্রভবন পর্যন্ত গাড়ি চলে যায়। কিন্তু আগে সেই সুবিধা ছিল না। কবি যখন আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন মৈত্রেয়ী দেবীর কাছ থেকে তখন এত সহজে পৌঁছনো যেত না মংপু। শিলিগুড়ি থেকে তাঁকে পৌঁছতে হত রম্ভি। তারপর মংপু আসার জন্য ভরসা করতে হত ঘোড়ার গাড়ি বা পালকি বা নিজের পায়ের ওপরেই। রবীন্দ্রনাথ যখন কলকাতা থেকে মংপু যেতেন প্রথম দিকে ওই সতেরো কিলোমিটার রাস্তা পাকা ছিল না। শিলিগুড়ি থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে রম্ভিবাজার পর্যন্ত গাড়িতে আসা যেত। তারপর রম্ভি থেকে ৯ কিলোমিটার পথ পালকিতে মংপুতে পাড়ি দিতেন কবিগুরু। এখনও রম্ভি হয়েই সবাই যায় আর রম্ভি থেকে দেখতে পাওয়া যায় মংপু পাহাড়। কবি কখনও সড়ক যোগে রম্ভি পর্যন্ত আসতেন। কখনও টয় ট্রেনে গেলিখোলা পর্যন্ত। পাহাড়ের মজা হল পাহাড় একেবারে পালটে যায় না।  আজ যেখানে ওক, দেবদারু, পাইনের পাহাড়ি জঙ্গল সেখানে দুম করে আকাশছোঁয়া ফ্ল্যাটবাড়ি গজিয়ে উঠবে না। তাই মংপুর রাস্তা পালটে গেলেও একেবারে বদলে যায়নি। তাই রবীন্দ্রনাথ যে পথ দিয়ে পৌঁছেছিলেন একাধিকবার মংপুতে মৈত্রেয়ী দেবীর বাড়ি পাকদন্ডী পেরিয়ে, লম্বা লম্বা সবুজ গাছের ফাঁকে উঁকি দেওয়া রোদ্দুরের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে খেলতে, আমরাও এলাম মংপু সেই একই রাস্তাতে।



আগেও মংপু এসেছি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের ক্যাম্পে। তখন অনুভূতি ছিল অন্য। ডিসেম্বরের হিমশীতল মংপুর পাহাড়ের উপরে তাঁবু খাটিয়ে ছিলাম আমরা কয়েকজন। মনে আছে তাঁবুর বাইরে শুকনো কাঠকুটো জড়ো করে আগুন জ্বালিয়েছিলাম একটু উত্তাপের খোঁজে। সন্ধ্যা নামতেই ঠান্ডা থেকে বাঁচতে পাহাড়গুলো অন্ধকারের টুপি পড়ে তৈরি হয়ে নিচ্ছিল আর দূরের দার্জিলিঙ পাহাড়ে জ্বলে উঠছিল একটা দুটো করে আলো। আস্তে আস্তে গোটা পাহাড়টাই ভরে উঠেছিল আলোয়। যেন দীপাবলির উৎসব। এবারে আমরা যেখানে আছি সেটা দার্জিলিঙ থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে ৩৭০০ মিটার উঁচুতে পাহাড়ের উপর মংপুর অর্কিড হাউস লাগোয়া গেস্ট হাউসে। দুপাশের পাহাড়ে সিঙ্কোনার বন। দিনের বেলাতেই যেন বনের ধার থেকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক কানে ভেসে আসে। বুনো সিঙ্কোনার ছাল থেকেই একদিন বিজ্ঞানী রোনাল্ড রস কুইনাইন তৈরি করে কালান্তক ম্যালেরিয়ার মোকাবিলা করেছিলেন। ব্রিটিশ আমল থেকে মংপুতে সিঙ্কোনার চাষ শুরু হয়। তৈরি হয় কারখানা। বসতি শুরু করে কারখানার লোকজনেরা। একসময় এই কারখানার দায়িত্বে এলেন ডঃ এম এম সেন। তাঁর স্ত্রী মৈত্রেয়ী দেবী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্যা। তাঁরই ব্যবস্থাপনায় হাওয়া বদল করতে মংপুতে আসেন রবীন্দ্রনাথ। শান্ত পাহাড়ের কোলে এই আবাসে কবি বারে বারেই চলে আসতেন। এখান থেকেই তিনি অসুস্থ হয়ে কলকাতায় ফিরে যান। সেই তাঁর শেষ যাওয়া। সিঙ্কোনা আর রবীন্দ্রনাথ – এই নাম দুটিই মংপুর পরিচিতি। এখানকার লোকের ভালবাসা, গর্ব এই পরিচয়ে। মংপুর এক অন্য পরিচিতি তখন থেকেই। পর্যটন মানচিত্রে মংপু নতুন নয়। কিন্তু উজ্জ্বলতার দিক থেকে তা অনেকখানি নিষ্প্রভ। কারণ মংপুর পাহাড়, জঙ্গলের অবগুন্ঠন উন্মোচনের কথা কেউ কোনওদিন ভাবেনি। তাই আমাদের কাজ হলো মংপুর প্রাকৃতিক রহস্যের দুয়ার খুলে দেওয়া। মংপু ভ্রমণের আদর্শ সময়টি অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই মাসগুলিতে তখন তাপমাত্রা মোটামুটি কম থাকে এবং সিঙ্কোনা গাছেও ফুল আসতে শুরু করে।

৩৭৫৯ ফুট উচ্চতায় মংপু এখন ছোট পাহাড়ি শহর, কবির সময় তা ছিল পাহাড়ি গণ্ডগ্রাম। এখন শহরের চেহারা নিয়েছে। কিন্তু আজও সে ফুলের রাজ্য, ফুলের দেশ। পাহাড়ি সৌন্দর্যে মোহিত না হলেও মংপুর ছোট্ট শহরটিতে রয়েছে একধরনের ঐতিহাসিক আভিজাত্য এবং ঐতিহ্য। তবে কবির প্রথম প্রবাসী স্থল দীর্ঘদিন ভগ্নস্তুপ থাকলেও এখন তার কিছুটা রূপ বদল হচ্ছে। সিঙ্কোনা চাষের জন্যই এর প্রথম খ্যাতি ছড়ায়। মংপুতে নেই কোন হোটেল ও ভালো লজ। পাহাড়ের সবুজ ঢালে সুন্দর শহর হলেও কখনও তকমা আঁটা হিল স্টেশনের মর্যাদা পায় নি মংপু। কোনদিন হয়তো পাবে না। তবু বাঙালির কাছে এই সিংকোনা শহর এক দেবস্থান।ব্রিটিশ আমলে  মংপুতে সিঙ্কোনার চাষ শুরু হয়। কারখানা তৈরি হয়। বসতি শুরু করে কারখানার লোকজনেরা। একসময় এই কারখানার দায়িত্বে এলেন ডঃ মনমোহন সেন এবং তাঁর স্ত্রী মৈত্রেয়ী দেবী। মংপুর এক অন্য পরিচিতি তখন থেকেই। মংপু গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত স্থান। কবির বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এক ঝলকে সেই দেশ দেখতে চললাম। স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে নিয়ে পাহাড়ে ঘুরতে বেরোলাম। দেখতে এলাম জল সরবরাহের অসাধারণ গোলাকার জলাধারটি। ছোট্ট নদী রম্ভিখোলা। নেপালি ভাষায় খোলা শব্দের অর্থ ছোট নদী। নদীর চলার পথের উপর একটা বহু পুরানো ভগ্নপ্রায় কাঠের সেতু। কোনকালে ইংরেজরা তৈরি করেছিল। কাঠের সেতুর নিচে ছোট জলপ্রপাত। তার ঠিক উপরে সিমেন্ট আর পাথর দিয়ে তৈরি বেশ বড় জলাধার। এখান থেকেই পাইপে করে জল নিয়ে যাওয়া হতো কুইনাইন কারখানায় আর মংপুর মানুষের জলের চাহিদা মেটাতে। সেতুর পর থেকে পাথরের রাস্তা কার্শিয়াং চলে গেছে। জানতে পারলাম ব্রিটিশ পিরিয়ডে দুজন মানুষের কাজ ছিল প্রতিদিন ঘোড়ায় চড়ে কার্শিয়াং খবরের কাগজ, চিঠিপত্র, পাঁউরুটি আর অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মংপুর সাহেবদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এদের ‘পেপারম্যান' বা ‘ব্রেডম্যান' বলা হতো। 

এবারে গন্তব্য রজ্জুভ্যালি ফরেস্ট। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে একটা পাথরের রাস্তা ধরে পাহাড়ের উপরে উঠতে শুরু করি। একসময় রাস্তা শেষ। একটা পায়ে চলা রাস্তা ধরে এগোতে থাকি। অনেকদিন এই রাস্তায় কেউ হেঁটেছে বলে মনে হলো না। একসময় এই রাস্তাও শেষ। আমার সঙ্গী দিগেল দাজু আর অনিল দাজু। এঁরা স্থানীয় মানুষ। এই পাহাড় জঙ্গলের প্রতিটি গাছ পাথর এঁদের নখদর্পণে। দিগেল দাজু জানাল বর্ষাকালে জোঁকের উৎপাত খুব বেশি। সাবধানে থাকতে হয় এবং সর্বসুরক্ষা রাখতে হয়। গাছের গায়ে বুনো শুয়োরের দাঁতের দাগ, চিতা বাঘের বিষ্ঠা। মনের মধ্যে একটু রোমাঞ্চ সৃষ্টি হলেও আমার সঙ্গী দাজুরা কিন্তু অকুতোভয়। সর্বক্ষণের সঙ্গী কুকরি হাতে তাঁরা চিতাবাঘের সঙ্গে লড়াই করতেও রাজি। একটা শুকনো নদীখাত পেরোতে হবে। খুবই সংকীর্ণ একটা জায়গা। একটা পা কোনওমতে রেখে লাফ দিয়ে পার হতে গিয়ে পা হড়কে গেল। বুঝতে পারলাম বয়স বাড়ছে। আর বেশি কায়দাকানুন দেখানো যাবে না। একটা গাছের ডাল ধরে টাল সামলে নিলাম। কিন্তু ডালের কাঁটায় ক্ষতবিক্ষত হলো হাত। আকাশের ঘন মেঘ বনের ভিতরটা অন্ধকার করে তুলেছে। লাঞ্চ সারতে হবে দ্রুত। কারণ মংপুর ‘সিম্বিডিয়াম অর্কিড পার্ক’ যাব। এটি একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। প্রায় দেড়শোরও বেশি অর্কিড রয়েছে এখানে। বিভিন্ন প্রজাতির এই অর্কিডের উপস্থিতি নিঃসন্দেহে চিত্তাকর্ষক। দ্রুত ফেরার পথ ধরি। শর্টকার্ট করার জন্য অন্য পথ ধরে এগোই। চলতে চলতে নানান রকমের পাখির ডাক  শুনলাম। খাড়াই ঢাল বেয়ে ২০০ মিটার নামার পর পুরানো রাস্তায় গেস্টহাউসে ফিরলাম। ঘণ্টা চারেকের যাত্রাতে প্রকৃতির সঙ্গে যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাতে সমস্ত যন্ত্রণা, ভয় গৌণ হয়ে যায়। মংপু থেকে যাওয়া যেতে পারে ৬ কিমি দূরের রিয়াং নদীর কাছে যোগীঘাটেও। মংপুতে থাকার ব্যবস্থা এখনও সেই পরিমাণে উন্নত বা পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু এখানকার স্থানীয়েরা অত্যন্ত ভাল এবং আন্তরিক। তাঁরা এক-দুইদিনের থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। তবে অনেক কিছুই অদেখা রয়ে গেল। বারে বারে আসতে হবে মংপুতে।



মংপু বাজার পেরিয়ে একটু এগোলেই সিম্পোডিয়াম অর্কিড পার্ক। এখানে অনেক রকমের ফুল আর অর্কিড দেখতে পাওয়া যায়। আর পিছনের দিকে পাইন আর সিঙ্কোনা গাছের জঙ্গল। টিকিট কেটে পর্যটকরা ঘুরে নিতে পারে এই সিম্পোডিয়াম। একটা গোটা বেলা এই সিম্পোডিয়ামে কাটাতে ভালোই লাগবে। ফুল অর্কিডের মায়ায় ছায়ায় মনের সব কলুষতা কেটে যাবে। আমরাও প্রবেশ করলাম। শুনলাম মংপুর অদূরে পেশক রোডের ওপর সার্নেল বাংলো একসময়ে অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ কেন্দ্র হলেও বর্তমানে তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত। সার্নেল বাংলো  থেকে স্থানীয় গাইডের সাহায্যে হিমালয়ের গহন  অরণ্যের ভেতর দিয়ে হাঁটা পথে যাওয়া যায় চটকপুর অবধি। অসামান্য প্রাকৃতিক দৃশ্যের এরকম জায়গা পূর্ব হিমালয়ের এই অঞ্চলে আর দ্বিতীয়টি মেলে না। মংপুর কাছের সিকসিম গ্রামটিও অনবদ্য প্রকৃতির নিবিড় পাঠের জন্য। এলাম মংপুর ডাইছেন শেরপা চোয়েলিং মনাস্ট্রি বা পিস প্যাগোডাটিতে। অনবদ্য পিস প্যাগোডাটিতে প্রকৃতির সরল স্নিগ্ধ রূপের সঙ্গে মিশে গিয়েছে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের অন্তর্লীন বাণী। তাঁদের স্তবস্তোত্রমালা। মন্ত্রোচ্চারণের প্রতিধ্বনি যেন পাহাড়ে পাহাড়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে উপলব্ধি করা যায়। স্নিগ্ধ এই রূপের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করতে ‘ডিনচেন শেরাপ ছোয়েলিং গোম্পা’ও অতুলনীয়। শান্তি চক, মঠটির শান্তিপূর্ণ প্রাঙ্গণও অন্তরাত্মাকে পরিতৃপ্ত করতে বাধ্য। কর্মবহুল জীবনেরও যে একটা বিপরীত অভিমুখ রয়েছে তা সহজেই অনুভব করা যায়। সঙ্গে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মৃদু, শান্ত, সৌম্য দৃষ্টিভঙ্গি ভ্রমণ পথের বাড়তি পাওয়া। জীবনের যাবতীয় গ্লানি সাময়িকভাবে নিবৃত্তি পেতে পারে এই সূত্রে। মংপুতে বাঙালি, নেপালি, তিব্বতি এবং ক্যাথলিক সম্প্রদায় অর্থাৎ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বাস করেন। কাজেই ধর্ম এবং জাতিগত সংস্কৃতি সমন্বয়ের পাশাপাশি খাদ্যাভাসেও রয়েছে পর্যাপ্ত বৈচিত্র। সুস্বাদু স্টিম্পড ডাম্পলিংস বা চলতি বাংলায় মোমো থেকে সর্বাধিক সুগন্ধযুক্ত তিব্বতি নুডল স্যুপ বা থুকপা এখানে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবারের মধ্যে পড়ে। 

পাহাড়ঘেরা, নিরবিচ্ছিন্ন সৌন্দর্যের আভরণে ভরপুর মংপুর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল এর অবিচ্ছিন্ন শান্ত-শীতল-নীরব পরিবেশ। নীরবতায় ভরপুর এই শহরটি জুড়ে কেউ যেন চায়ের বাগিচা, জলছবির মতো ক্যালাইডোস্কোপ অর্কিড এবং সিঙ্কোনা গাছের এক অপরূপ প্যাচওয়ার্ক করে রেখে গেছে। মাথার উপরে ঘন নীল আকাশ, তার মধ্যে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলা। প্রকৃতি যেন এক্ষেত্রেও তাঁর অকৃপণ সৌন্দর্যের ছোঁয়াটুকু ছড়িয়ে দিয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে প্রথম মংপুতেই সিঙ্কোনা গাছের চাষ-আবাদ শুরু হয়। এই সিঙ্কোনা কুইনাইন নামক বহুমূল্য ওষুধ প্রস্তুত করতে ঠিক কতখানি কার্যকরী তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। মংপুর প্রথম কুইনাইন কারখানাটি তৈরি হয় ১৮৬৪ সালে। কৃত্রিম কুইনাইন আসার আগে এই শহরের মানুষদের অনেকেই সিঙ্কোনা বাগানের উপরে নির্ভরশীল ছিলেন। কৃত্রিম কুইনাইন আসার আগে মূলত সিংকোনা প্রসেসিংয়ের কারখানাতে সিঙ্কোনা গাছের ছাল থেকেই প্রয়োজনীয় রাসায়নিক উপাদান বের করে নিয়ে ওষুধ প্রস্তুত করা হত। এখন এখানে কুইনাইন তৈরি হয় না। কারখানাও বন্ধ। সিন্থেটিক কুইনাইন আবিষ্কার হওয়ার ফলে সিঙ্কোনা-জাত কুইনাইনের আর তেমন চাহিদা নেই। ফলে কারখানাটির দীর্ণদশা।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri