রবীন্দ্রসঙ্গীত হয়, রবীন্দ্রনৃত্য নয়?/দেবদত্তা লাহিড়ী
রবীন্দ্রসঙ্গীত হয়, রবীন্দ্রনৃত্য নয়?
একথা নিশ্চিৎ করে বলা যায় যে আজ সাধারণ বাঙালী পরিবারের মেয়েটি যে নৃত্য চর্চাই করুক না কেন তার ঐতিহাসিক সূচনায় গুরুত্ব পূর্ণ ভুমিকা ছিল সমাজ সংস্কারক রবীন্দ্রনাথ। গড়পরতা বাঙালী শিশু কন্যা অথবা মেয়েটি তার নৃত্য জীবনের শুভারম্ভ অথবা এককালীন ক্ষণকালীন পরিবেশনাতে রবীন্দ্রনৃত্যকেই বেছে নেয়। এও ঠিক যে যতখানি মাতামাতি গবেষণা রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে হয় তার এক কণাও রবীন্দ্রনৃত্য নিয়ে হয়নি। ফলতঃ ফাঁক রয়েছে বিস্তর। এর ই মাঝে উঠে আসছে এক মূল প্রশ্ন- আদৌ রবীন্দ্রনৃত্য বলা যায় কিনা। রবীন্দ্রনৃত্য বলে কোন স্বতন্ত্র ধারা রয়েছে কিনা। একখানি প্রচলিত মত হল রবীন্দ্রনাথ নিজেই কোনো বাধা কোনোদিন মানেননি। বিশ্ব নাচের ছন্দে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। তাই রবীন্দ্র নৃত্যে বাধ্যবাধকতামূলক ভাবে নির্দিষ্ট কোনো ভঙ্গী ধরে রাখার বিষয়টি নেই। যিনি যেমনটি পারেন গানের ভাবার্থ ধরে রেখে নৃত্য নির্মাণ করতেই পারেন। এবারে আসি সেই পীঠস্থান এর কথায় যেখানে কবির মতাদর্শে ধীরে ধীরে প্রস্ফুটিত হয়েছিলো এই শিল্পকলা। দীর্ঘদিন ধরে সযত্নে লালিত হয়ে এসেছে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি সেখানে রবীন্দ্রনৃত্য বলে সম্পূর্ণ একটি পৃথক পাঠক্রম চালু হয়। মতাদর্শগত বিভেদ উঠে আসছে এই বিষয় সামনে রেখে।। এই প্রসঙ্গে আমার কয়েক টি বিনম্র জিজ্ঞাসা। যারা প্রশ্ন তুলছেন তারা একটু কষ্ট করে বুঝিয়ে দিন যদি রবীন্দ্র সঙ্গীত এর ভাব প্রকাশ টুকু রবীন্দ্র নৃত্যে যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয় বা রবীন্দ্রসংগীত সহযোগে নৃত্যে যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয় তবে যখন নৃত্য নির্মাণ হল বা পরিবেশনা হল তখন সঙ্গীত ও নৃত্যের ভাবপ্রকাশ যথাযথ হল কিনা তার নিশ্চয়তা কোথায়। কেই বা নিশ্চিত করবেন যে প্রকাশভঙ্গী যথাযথ। অর্থাৎ রবীন্দ্র সঙ্গীত এর ভাবার্থ প্রকাশ সঠিক উপায়ে নির্ধারণ করতে প্রয়োজন পড়াশোনা ও বোধগম্যতা। তাহলে রবীন্দ্র নৃত্য আলাদা ভাবে পড়াশোনার বাধা কোথায়। হয়ত বাধা কোথাও নেই কারো নিজস্ব ভাবনায় একটি নৃত্য পরিবেশনের। সেক্ষেত্রে যিনি এই নৃত্যকে রূপদান করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তার সৌন্দর্য বোধ অগ্রাহ্য করে এই পরিকল্পনা করা আদৌ কি সম্ভব? এবং একই ভাবে স্বেচ্ছাচারিতা, মাত্রা ছাড়া বিকট উল্লাস রবীন্দ্রসঙ্গীত ও তথা নৃত্যের সাম্যতা বিঘ্নিত করে কুশ্রীতাকে প্রকট করছে সে উদাহরণ কি ভুরি ভুরি নয়? আবার ধরা যাক কোনো একটি সঙ্গীতকে নৃত্যে রূপায়ণ করতে একটি মাত্র আঙ্গিক যথেষ্ট নাও হতে পারে সেক্ষেত্রে কয়েকটি বিশেষ ভঙ্গী জেনে রাখাতে লাভ বই ক্ষতি কিছু আছে কি? উপরোক্ত সবকয়টি বিষয় অগ্রাহ্য করেও যদি ভাবা যায় যে রবীন্দ্রনাথ পরীক্ষা নিরীক্ষা বিষয় টিকেই আপন করে নিয়েছিলেন এবং এই পরীক্ষা নিরীক্ষাই পথ তাহলেও বলা যায় কোথায় থামবো জানতে গেলে কোথায় শুরু করব হিসেবে রবীন্দ্র নৃত্য আলাদা ভাবে চর্চা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে কার্যকরী হবার দাবী রাখে। এমন পরিস্থিতি তে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্র নৃত্যের পাঠক্রম পরিকল্পনা যথাযথ বলে মনে করা যেতেই পারে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴