রবীন্দ্রনাথ ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ/সাগরিকা কর্মকার
রবীন্দ্রনাথ ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ
সাগরিকা কর্মকার
রবিবাবু, তোমার প্রতি আমার একটা নিবিড় ভালোবাসা জন্মেছিল সেই ছোট্টবেলায় মায়ের কাছে শোনা কবিতাটির মধ্যে দিয়ে - "আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা / আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা /আমার নাম'তো জানে গাঁয়ের পাঁচজনে /আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।" প্রতিটা শব্দ মন ছুঁতে থাকে, আর চোখের সামনে ভেসে ওঠে সহজ, সরল একটা গ্রামীণ চিত্রপট।
পঁচিশে বৈশাখ তোমার জন্মদিনে তোমাকে পায়েস রান্না করে দেওয়ার জন্যে মায়ের কাছে খুব বায়না করেছিলাম খুব মনে পড়ে ,তখন আমি হয়ত দ্বিতীয় শ্রেণীতে। দু-একবার হয়ত মা পায়েস রান্না করে নিবেদনও করেছিল। তোমাকে খুব কাছ থেকে জেনেছি , বুঝেছি মায়ের কাছ থেকেই। এরপর বড়ো হওয়ার সাথে সাথে বাংলা সাহিত্যের প্রতি একটা টান সৃষ্টি হয় , আর এই টান থেকেই বাংলা সাহিত্যে অনার্স নিয়ে কলেজে ভর্তি হই। খুব ইচ্ছে ছিল আরও কাছ থেকে তোমাকে অনুভব করব, তোমার সৃষ্টিকে ছুঁয়ে।
তোমাকে আর তোমার কবিমন'কে দুটি ভিন্ন রূপে ভালোবাসতে শুরু করি। তোমার মাঝে ঈশ্বর দর্শন আর তোমার সৃষ্টির মাঝে আমার সব ভালোলাগা। যতটুকু জেনেছি তোমাকে বইয়ের পাতা থেকে আর বুঝেছি অনুভবে তুমি ছিলে আনন্দের কবি, উল্লাসের নয়। তোমার কাব্যের প্রতিটা পর্বে সময়ের সাথে সাথে তোমার মনের পরিবর্তন ঘটেছে । প্রথম পর্বের কবিতাগুলিতে তোমার অস্ফুট ভাবাবেগ, অস্থির ও অধীর। ধীরে ধীরে তোমার কবিভাবনা সুস্থিত আদর্শের পথে ধাবিত হয়, নিখিল জীবনস্রোত তোমার কবি ভাবনাকে টেনেছিল। জগৎ সীমাবদ্ধ - সেই সীমাবদ্ধ জগতের খাঁচায় বন্দি না থেকে বেরিয়ে পড়েছিলে বৃহৎ জগতের আনন্দরস উপলব্ধির বাসনা নিয়ে। জীবন দেবতার মুখোমুখি হয়ে সত্যকে কঠিন, আর এই কঠিনকেই ভালোবেসেছিলে "আমৃত্যৃ দুঃখের তপস্যা এ জীবন...."
'কঠিনেরে ভালোবাসিলাম, সে কখনও করে না বঞ্চনা।' তোমার ভাবনায় একাত্ম হল আমার মন-প্রাণ।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴