রবীন্দ্রনাথ : অন্তরে বাহিরে/সুকান্ত সরকার
রবীন্দ্রনাথ : অন্তরে বাহিরে
সুকান্ত সরকার
সেই ছোট্টবেলা। তখন পড়াশোনা শুরু হয়নি। অবশ্য একটু দেরিতেই আমাকে স্কুলে পাঠায়। বাড়িতে একটা কলের গান মানে ওই গ্রামোফোন রেকর্ড ছিল। ওতে নানা রেকর্ড বাজত। আমার বাবা একটি দোকানের কর্মচারী। সেই দোকানে একদিকে সাইকেল, আরেক দিকে ঔষধ এর তার সাথেই গ্রামোফোন রেকর্ড বিক্রি হত।
সেই দোকানের কথা উল্লেখ করেছেন দেবব্রত বিশ্বাস তাঁর আত্মজীবনীতে — রমণী সাহার দোকান। গান শুনতাম অনেক কিন্তু চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘আমার পরান যাহা চায়’ আর সাগর সেনের কণ্ঠে ’আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান‘ গানদুটি এখনো স্মৃতিতে ভাস্বর।
স্কুল জীবনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্মৃতি বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। সেখানে সোনার তরী পাঠ করছে এক বা দু’জন ছাত্র আর ব্ল্যাক বোর্ডের রঙিন চক দিকে কবিতার তালে তালে তার চিত্র রূপ ফুটিয়ে তুলছে আরেকজন ছাত্র।
‘ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই ছোট সে তরী
আমার সোনার ধানে গিয়েছে ভরি ‘...
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম আর শিহরণ লাগত!
দিদির তখন কলেজ আর আমার ক্লাস ফাইভ। দিদির বাংলা বইয়ের মধ্যে পেয়ে গেলাম ‘কঙ্কাল‘ গল্পটি। একে একে যজ্ঞেশরের গুপ্তধন-এর গল্প আর কত কি!
মনে আছে বলাই গল্পটি পড়ে কেঁদেছিলাম।
একইভাবে খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন-এর সিনেমা দেখে মন খুব খারাপ হয়ে যায়! তখনও কৈশোর কাটেনি।
আমাদের এক মাষ্টারমশাই ছিলেন ভূপেন্দ্র নাথ কুণ্ড। তিনি তাঁর কলেজ জীবনের স্যারদের কথা বলতেন। একজন রবীন্দ্রনাথ পড়াতে এসে বলতেন, কি পড়াব? রবীন্দ্রনাথ? অপূর্ব অপূর্ব!
আজ এই মধ্য পঞ্চাশে এসে বুঝি ওই মাস্টারমশাই কতটা উপলব্ধি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথকে।
যেমন করে রবীন্দ্রনাথকে আত্মস্থ করেছেন শঙ্খ ঘোষ, শম্ভু মিত্র, প্রমথ নাথ বিশী প্রমুখ।
রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেণী বলেছিলেন, ‘আপনার পদধূলি চাই। কিন্তু আমি উঠে দাঁড়িয়ে প্রণাম জানাতে অপারগ। আপনার শ্রীচরণ আমার মাথার কাছে এগিয়ে দিন।’ কতটা ভালবাসলে এমন নিবেদন করা যায়।
ঋত্বিক কুমার ঘটক রবীন্দ্রনাথকে তাঁর সিনেমায় অত্যন্ত মুন্সিয়ানার সাথে প্রয়োগ করেছেন। সবাই বলবেন ‘মেঘে ঢাকা তারা'র কথা। ‘ঘাসে ঘাসে পা ফেলেছি বনের পথে যেতে ‘ অথবা ’যে রাতে মোর দুয়া গুলি ভাঙল ঝড়ে ‘...।
কিন্তু আমি একেবারে চমকে উঠেছিলাম ‘যুক্তি তক্কো গপ্পো ‘ সিনেমায় ‘কেন চেয়ে আছ গো মা’ গানটিতে। রোমকূপে শিহরণ লেগে গেসল। শাওলি মিত্রের ওই চোখের জনই ঐ গানটি রচিত হল কিনা, এখনো দ্বিধা মনে।
পরিশেষে, দিনেশ দাশ-এর কথাতেই শেষ করি, ‘তোমার পায়ের পাতা সবখানে
কোনখানে রাখব প্রণাম।’...
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴