রবি ঠাকুরকে খোলা চিঠি/মঞ্জুশ্রী ভাদুড়ী
রবি ঠাকুরকে খোলা চিঠি
মঞ্জুশ্রী ভাদুড়ী
---------------------------------
প্রণম্য কবি,
সেকালের বঙ্গভূমি তোমাকে পেয়ে ধন্য হয়েছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই। একালটাতেও আমরা তোমার ভাবরসসমুদ্রেই মজে আছি। হ্যাঁ, নিয়মকানুনের কড়াকড়ি নেই বলে সকলেই তোমার সঙ্গীত নিজের নিজের ভাবে গাইছে, তাতে সুরের বিচ্যুতি খানিক ঘটছে হয়তো কখনও, তুমি থাকলে হয়তো বকুনিও দিতে কিছুটা, কিন্তু ভালোবাসার কোনও খামতি নেই তাতে, এ কথা তোমাকে প্রত্যয়ের সঙ্গে বলতে পারি ।
যে কোনও অনুষ্ঠান, সভা-সমিতি সবকিছু আমরা তোমার সঙ্গীত দিয়েই শুরু করি। মনে হয় তোমার গান গাইলে এ সভার আয়োজন পবিত্র হয়ে উঠবে। তোমার গান যে কোনও শুভকাজ শুরু করবার আগে পুজোর মতো।
সাধারণত সভা শুরুর আগে আমরা প্রায় সকলেই সমবেতভাবে আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে এই গানটি গেয়ে থাকি। যতবারই গাই না কেন, যতবারই শুনি না কেন, গানটি সর্বদা একইরকমভাবে হৃদয়কে স্পর্শ করে যায়। এক অপরূপ আলোকে হৃদয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, যার প্রভায় অন্তরের অন্তস্তল পর্যন্ত বিশুদ্ধ ও পবিত্র হয়ে যায়। সুরের রেশ ও সঙ্গীতের ভাবগাম্ভীর্যে আপনা থেকেই মুদে আসে আঁখিপক্ষ্ম। বহুশ্রুত এই গানখানি এখন আমাদের কাছে একটি মন্ত্রের মতো, যা দিয়ে পরিবেশকে সুস্থিত করে, চিত্তশুদ্ধি ঘটিয়ে আমরা মূল অনুষ্ঠানে প্রবেশ করি। সত্যিই তো, দহনের মধ্যে দিয়েই আমরা পবিত্র হয়ে উঠি। বিষাদের অনুভব না হলে আনন্দকে বুঝবো কী করে? বিরহ না এলে মিলনের মহিমা বোঝা দুষ্কর হয়ে পড়বে। প্রিয়জনের মৃত্যু আমাদের যে শোকের সাগরে নিমজ্জিত করে তার দ্বারা ব্যক্তিগত শোক বা দহন থেকে আমাদের চেতনা উন্নীত হয় শাশ্বত বোধে।
এই পূজা পর্যায়ের গানটি যে বয়সে তুমি লিখেছিলে, তখন তুমি শোকের মহাসমুদ্র অতিক্রম করে, বহু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে প্রণম্য এক ঋষি। তাই এই সঙ্গীতের ভাব, সুর ও বাণী মানুষকে স্তব্ধ করে, নিবিষ্ট করে, শান্ত করে। ঈশ্বর তাঁর মানবসন্তানদের মঙ্গলের জন্যে যুগে যুগে প্রতিনিধি পাঠান, তাই তো তুমি এসেছিলে! তোমার বহু বহু গানই আমাদের সারা দিনের ক্লান্তি অপনোদনের, চিত্তকে শুদ্ধ করার ঈশ্বরীয় উপাদান। তোমার সঙ্গীত আমাদের আত্মবিকাশের ধ্যানমার্গ।
প্রণাম হে কবিগুরু। আমাদের চেতনায় অম্লান হয়ে থাক তোমার সুর ও সঙ্গীত।
ইতি
তোমার কাছে চিরঋণী এক বঙ্গকন্যে
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴