রণজিৎ কুমার মিত্র-র আলোচনায় অর্ণব সেন ও ব্রজ গোপাল ঘোষ-এর বই 'জলপাই- ডুয়ার্সের জলছবি'
রণজিৎ কুমার মিত্র-র আলোচনায় অর্ণব সেন ও ব্রজ গোপাল ঘোষ-এর বই 'জলপাই- ডুয়ার্সের জলছবি'
অর্ণব সেন ও ব্রজগোপাল ঘোষ প্রণীত 'জলপাই- ডুয়ার্সের জলছবি' বইটি ডুয়ার্স জীবন, সাহিত্য- সংস্কৃতির এক প্রামাণ্য দলিল। ডুয়ার্সের এই দুই প্রাজ্ঞজন স্বক্ষেত্রে বিশিষ্ট ও সুপরিচিত। একজনের মহাবিদ্যালয়, অপরজনের চা - বাগান। কাজের জায়গা আলাদা হলেও ডুয়ার্সের জীবন ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে দুজনে খুব কাছাকাছি। জলপাইগুড়ি ও ডুয়ার্সের প্রকৃতি- পরিবেশ -জাতি উপজাতি -জনজাতি- ভাষা ধর্ম জীবনচর্যার বৈচিত্র্য, চা বাগানের জীবন সংগ্রাম নিয়ে দুজনের অভিজ্ঞতার খন্ড চিত্র বা জলছবি এই বইটিতে রয়েছে এক মলাটের ভিতর। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই ডুয়ার্সের মানচিত্র নিয়ে ভুটান, কোচবিহারের রাজবর্গ আর ইংরেজদের মধ্যে অনেক টানাপোড়েন ছিল। ১৮৬৪- ৬৫ খ্রিস্টাব্দে ভুটান যুদ্ধের শেষে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাদের দখল করা ভুটান দুয়ারের পূর্ব দুয়ার আর পশ্চিম দুয়ার নামে দুটি জেলা গঠন করে। ১৮৬৫ তে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভুক্ত পশ্চিমদুয়ারকে তিনটি মহকুমায় বিভক্ত করা হয়। তিস্তা ও তোরসা নদীর মধ্যবর্তী এলাকা নিয়ে গঠিত এই মহকুমার সদর দপ্তর করা হয় ময়নাগুড়িতে। দ্বিতীয়টি বক্সা মহকুমা, আলিপুরদুয়ারকে সদর দপ্তর করে বক্সা মহকুমা এলাকা ছিল তোরসা নদী থেকে সংকোশ নদী পর্যন্ত। তৃতীয় মহকুমা ছিল ডালিম কোট যা ১৮৬৭ তে দার্জিলিং জেলার সাথে যুক্ত হয়ে যায়। এই সময়ে ইংরেজ শাসকরা সদ্য অধিকার করা পশ্চিম দুয়ার অঞ্চলকে সেই সময়ে রংপুর জেলার সাথে জলপাইগুড়ি নামক মহকুমাটির সঙ্গে যুক্ত করে দেয়। ১৮৬৯ সালে ওই ব্রিটিশদের হাতেই জলপাইগুড়ি জেলার প্রশাসনিক জন্ম হয়। আলিপুরদুয়ার তখন হয়ে যায় মহকুমা। এইসব ইতিহাস এখন অনেকটাই ধূসর হয়ে এসেছে, আলিপুরদুয়ার এখন স্বতন্ত্র জেলা। এই পশ্চিম দুয়ার অংশ দীর্ঘকাল জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে ছিল। তবে ইংরেজ শাসকের কাছে জলপাইগুড়ি জেলার চেয়ে ডুয়ার্সের পরিচিতি ছিল বেশি। এই জলপাইগুড়ি ও ডুয়ার্সের বিভিন্ন প্রসঙ্গকে দুই লেখক অর্ণব সেন ও ব্রজ গোপাল ঘোষ নিজস্ব অভিজ্ঞতার রং দিয়ে বইটিতে জলছবি এঁকেছেন। বইটির প্রথম পর্বে অধ্যাপক অর্ণব সেন লিখেছেন
১: গদ্যপদ্যের জলছবিতে জলপাই-ডুয়ার্স।
২: স্বপ্নের রেলগাড়ি ও বক্সা জয়ন্তী।
৩: উত্তরের বৃষ্টি এলো, বৃষ্টি প্রেম আর গদ্যপদ্য ।
৪: চা- সংস্কৃতির ডালপালা।
৫ : সাহেব গৌরবের চা- বাগান।
৬: উপনিবেশ পর্বে উন্নয়ন ভাবনা।
২: দ্বিতীয় পর্ব ব্রজগোপাল ঘোষের অংশে রয়েছে
১: চা - বাগানে সংস্কৃতি চর্চার একদিক।
২: জেলা পরিবহন :অতীত - বর্তমান।
৩: জলপাই -ডুয়ার্সের বিস্মৃতপ্রায় ফুটবল খেলা।
৪: জলপাই ডুয়ার্সের চা বাগানের দুর্গা পূজা।
৫: সবুজ সোনার দেশে: শেকড়ের খোঁজে।
অর্ণব সেন ও ব্রজ গোপাল ঘোষ দুজনেই ডুয়ার্সের বিশেষ পরিচিত ব্যক্তিত্ব। তবুও স্মরণ করা যেতে পারে 'সহজউঠোন' অর্ণব সেনকে নিয়ে একটি বিশেষ সংখ্যা করেছিল। আর এই সহজ উঠোনের পাতাতেই ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত, সুকান্ত নাহা 'চা-ডুবুরী' উপন্যাসে ব্রজ গোপাল ঘোষের জীবন ও কর্মকে স্মরণীয় করে রেখেছেন।
এই বইটি উপহার পেয়েছিলাম আমার অভিভাবক- অধ্যাপক অর্ণব সেনের কাছ থেকে। যাঁর অপরিমেয় স্নেহ, অনুপ্রেরণা আর প্রশ্রয় এখনো পাই লেখালেখির জন্য। অর্ণব সেন ও ব্রজগোপাল ঘোষের যুগলবন্দী 'জলপাই ডুয়ার্সের জলছবি' বইটি সাধারণ পাঠক ও গবেষক সকলের কাছেই ইতিমধ্যেই পরম সমাদর পেয়েছে। ভবিষ্যতের পাঠকদের জন্য ও এই বইটি দুই লেখকের একটি স্মরণীয় উপহার এবং বইটি জলপাই- ডুয়ার্স চর্চার একটি 'আকর গ্রন্থ' হিসেবে বিবেচিত হয়।
জলপাই- ডুয়ার্সের জলছবি: অর্ণব সেন ও ব্রজ গোপাল ঘোষ
আলিপুরদুয়ার, মন চাষা: একটি সমবায় প্রকল্প, ২০০৪
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴