রঙিন কোলাজের ছেঁড়া টুকরো/পার্থ সারথি চক্রবর্তী
রঙিন কোলাজের ছেঁড়া টুকরো
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
বসন্তোৎসব নিয়ে কী লিখব! ভাবতে গিয়ে যেন সব গুলিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি যা এককথায়, ঠগ বাছতে গা উজাড়। বসন্ত কালে আকাশ নীল হয়ে থাকে, বাতাস ফুরফুরে হয়। গাছের পাতা ঝরে পড়ে। সেই সঙ্গে ঝরে কিছু পুরনো স্মৃতি। তবে এগিয়ে যাবার পথ প্রশস্ত হয় বিছিয়ে রাখা ঝরা পাতার শব্দে। পাতা ঝরে পড়ার শব্দে ধ্বনিত হয় হৃদয়ের ভেঙেচুড়ে যাবার, দুমড়ে মুচড়ে যাবার প্রক্রিয়া। জন্মজ যে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা যাই, তা আসলে পুরোটাই একটা পথ। দীর্ঘ একটা পথ। আর বসন্ত বা শরত বা তৎসংক্রান্ত বিষয়াদি সেই পথের কয়েকটা বিরতি। সেই বিরতি আবার কখনো কখনো সেখান থেকে কয়েকটা উপপথ বা বাইলেনের জন্ম দেয়। যদিও কোন কোনটা আবার ঘুরে এসে সে পথেই মিলে যায়। কোনটা আবার হারিয়ে যায় নিরুদ্দেশের খোঁজে। রঙ বেরঙের ছবির কোলাজে এই মুহূর্তগুলো ধরা থাকে। বসন্ত রঙ নিয়ে আসে প্রকৃতির। প্রকৃতির মাধ্যমে। শিমুল পলাশ। মহুয়া। আর আমরা মানুষেরা বাড়তি চাকচিক্য আনি বিভিন্ন রঙ মেখে আর মাখিয়ে। অথবা রঙ ছিটিয়ে। রঙ উড়িয়ে। বাঙালীর জীবনে ভোট কিন্তু একটা রঙিন উৎসব ছিল একদা। পাশাপাশি দুই বা তিনদলের সহাবস্থান। যার যার ভোট তার তার ইচ্ছা বা অভিপ্রায়। কিন্তু সেই পছন্দের অমিল কখনো প্রকাশ্যে হানাহানির চেহারা নিত না। ব্যতিক্রম অবশ্য সবকালেই এক আধটা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে সেই উৎসবও রঙিন হয়ে উঠছে। তবে তা একটাই রঙে। আর হারিয়ে যাচ্ছে মনের রঙ। সব বাহারি রঙ। আর এবার বসন্তের পরপর ভোট। রঙের ছটার অপেক্ষায় সবাই ছিল। তবে এমন রঙের অপেক্ষা কারোরই ছিল না। যে রঙ আজকাল দেখা যায়, তা হল রক্তের লোহিতকণিকার রঙ। ফলে বাসন্তী রঙ হারিয়ে যেতে বসেছে জীবন থেকে। জীবনের পথে ওই হারিয়ে যাওয়া উপপথগুলোর মতো। তাই বাঙ্গালী জীবনে বসন্তের রঙ সত্যিই ফিকে। ভোটের বিপ্রতীপ বলে কথা। আর স্বপ্নের কোলাজও যেন ছিঁড়ে যায়, স্বজনহারানো মানুষের কাতর হাহাকারে। আর রঙ চুরি থুড়ি ছিনতাই করে নিয়ে যায় ভোট ব্যবসায়ীরা। আর আমরা অসহায় আত্মসমর্পণ করি ইচ্ছায় বা বাধ্যতায়। একত্রিত হই না , কারণ হতে চাই না। বিভেদের বীজ পুষে রাখি মনের গহ্বরে। যা ধীরে ধীরে জন্ম দিচ্ছে এক মহীরুহের। তার অবশ্যম্ভাবী ফল নিয়ে ভাবি না, ভাবতেও চাই না। দিনশেষে কেবল পড়ে থাকে আল্পনার ছেঁড়া ছেঁড়া টুকরো।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴