সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
08-June,2025 - Sunday ✍️ By- দেবব্রত সান্যাল 72

রং নম্বর/দেবব্রত সান্যাল

রং নম্বর
দেবব্রত সান্যাল

ভর দুপুরেও যে টিভিতে একইরকম সিরিয়াল চলে সেটা বিনয়ের জানা ছিল না। আসলে সোম থেকে শুক্রের দুপুর তো অফিসেই কাটে। আর শনি- রবিবার, সাপ্তাহিক ছুটির দিন আসলে হাজারো সাংসারিক কাজে ছোটাছুটির দিন। প্রায়শই এই দুটো দিন সব সেরে স্নান করতে করতেই দুপুর গড়িয়ে যায়। টিভি দেখার ফুরসত কোথায়! আজ বিকেলের ট্রেনে কোলকাতা যাওয়ার কথা বলে বৃহস্পতি ও শুক্র, এই দু'দিনের ছুটি নিয়েছে। আজ ওদিকের জন্য রওনা দেওয়া, আর বিশেষ কাজ সেরে রবিবার রাতের ফিরতি ট্রেনে এদিকে রওনা দিয়ে সোমবার সকালে পৌঁছেই সোজা অফিস।

টিভির সিরিয়ালে দেখাচ্ছে যে সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে অবহেলা করে নায়ক ছেলেটি এক অফিস কলিগ মহিলার প্রতি অনুরক্ত। বিনয় টিভি দেখে না, মানে যা দেখায় সেগুলো দেখার রুচি এযাবৎকাল হয়নি। এদিকে মা এবং ওর স্ত্রী, দু'জনেরই টিভি সিরিয়ালে গভীর আসক্তি। আর এনাদের দয়ায় বিভিন্ন সিরিয়ালের টুকরোটাকরা যতটা ছিটকে নজরে আসে তাতে মনে হয় যে কমবেশী বর্তমানের সব সিরিয়ালের মূল চালিকাশক্তিই হল চক্রান্ত, পারিবারিক রাজনীতি এবং বিকৃত সব সম্পর্ক। কোথায় হারিয়ে গেল 'চিরকুমার সভা', 'মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি'র মতো নির্মল আনন্দ দেওয়া সেইসব সিরিয়াল! 

অন্য সময় হলে বিনয় এই সিরিয়াল নিয়ে নিশ্চিত মায়ের বা মিসেসের পেছনে লাগতো কিন্তু আজ মনে হচ্ছে যে টিভিতে যেন সাক্ষাৎ বিনয়ের গতিবিধিরই দৃশ্যায়ন চলছে! বুঝতে পারছে যে তলিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ওই আহ্বান অস্বীকার করার উপায় কি! এতদিনের ছাইচাপা আগুনের পালে আচমকাই জোর হাওয়া লেগেছে। বিলক্ষণ জানে যে সাড়া দিলে ঘি আর আগুন দু'জনারই সমূহ বিনাশ, দগ্ধে শেষ হবে উভয়েই, কিন্তু এই আকর্ষণ অমোঘ। ওই টিভি সিরিয়াল যারা তৈরী করেন তারা কি কোনদিনও জানতে পারবেন যে বাস্তব জীবনে মোবাইলের একটিমাত্র কলের প্রতিক্রিয়ায় জল কতদূর গড়াতে পারে? জানতে পারলে জটিলতা তৈরীর পন্থা হিসেবে এটারও ব্যবহার হত বিলক্ষণ! কিন্তু বাস্তব জীবনে যে সেটা প্রতি মূহুর্তে, আরও দ্রুত ঘি আর আগুনকে পরস্পরের কাছে টানছে!

ঘটনার শুরু মাস তিনেক আগে কলেজের ডিপার্টমেন্টাল বন্ধুদের গ্রুপে রুদ্র ওকে এড করার পর। দেখা গেল ইতিমধ্যেই গ্রুপে পঁচিশজন সদস্য/ সদস্যা। তাদের মধ্যে এখনও যাদের সাথে যোগাযোগ আছে এমন ক্লাসমেট জনা ষোলো, প্রোফাইলের নাম বা ছবি দেখে উদ্ধার করা গেল ছয়জনকে কিন্তু দু'জনার শুধুই নম্বর আছে যাদের ঠাওর করা যাচ্ছে না। নেহাৎ ঔৎসুক্য বসে বিনয় ওই দু'জনাকেই ফোন করবে বলে মনস্থ করল। প্রথমজন অনিল, অনিল শর্মা, এখন আমেদাবাদে কোন একটা কোম্পানীতে ম্যানেজার পদে আছে। আর দ্বিতীয় নম্বরে ফোন করেই পুরানো, প্রায় ভুলে যাওয়া আঘাত আবারও জেগে উঠল! ওটা পায়েলের নম্বর! 

কলেজের প্রথমদিন থেকেই সুন্দরী পায়েলের অনেক অনুরাগী কিন্তু মেয়েটি সম্ভবত ইতিমধ্যেই এই মুগ্ধতা, অনুরাগের মাঝেও স্বাভাবিক থাকতে শিখে গিয়েছিল। একটু চাপা স্বভাব কিন্তু নম্র এবং সবার সাথে মিলেমিশেই থাকতো। আর সেসময় দিলখোলা, সারল্যে ভরপুর বিনয় পড়াশোনার পাশাপাশি মেতে ছিল খেলাধূলা নিয়েই। সময়ে সময়ে অনেকের মুখে পায়েলের রূপের, গুণের প্রশংসা শুনেছে, হালকা ভাবে নিজেও তাতে যোগ দিয়েছে কিন্তু কোন আকর্ষণ বোধ তাতে ছিল না। 

গোলমাল বাঁধল সেকেন্ড ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা শেষে পিকনিকে গিয়ে। মনোজই প্রথম জানালো- 'কি রে, তুই খেয়াল করিস নি, পায়েল সবসময় তোর দিকে নজর রাখছে!'

'আমি তো কলেজে, ক্লাসেও দেখেছি যে প্রায় সময়ই আড়চোখে ও তোর দিকে তাকিয়ে থাকে।'- রূপঙ্কর সঙ্গত দেয়। 

বিনয়ের অস্বস্তি শুরু হল। সবসময় কারও নজরে, নেকনজরে, অনুরাগের নজরে থাকাও এখন কাজের কথা নয়। এবং এবার নিজে নজর রাখতে গিয়ে দেখা গেল রূপ- মনোজের কথা সত্য! পিকনিকের মধ্যেই অন্তত দু'বার পায়েলের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল এবং দ্বিতীয়বার চোখাচোখি হতেই ও পলকের তরে এমন ভাবে হেসে মুখ নামিয়ে নিল যে তাতে অদ্ভুত কিছু একটা ছিল। কিন্তু কলেজে এলিজিবল, অনুরাগী এত ছেলে থাকতে এই অধমই কেন?

সম্ভবত বিনয়ের সহজসরল ব্যবহার, দিলখোলা হাসি এবং অমলিন আচরণ পায়েলকে ওর দিকে আকৃষ্ট করেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি সহজ মানুষকেও জটিল হতে বাধ্য করে। ওই পিকনিকের পর আর বিনয় পায়েলের সামনে সহজ ভাবে থাকতে পারেনি, সহজ ভাবে মিশতে পারেনি। যার বিধবা মা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকতা করে সংসার চালান, বড়োলোকের সুন্দরী দুলালী কেন, যেকোনো কারও প্রণয়ে আবদ্ধ হওয়াই তার কাছে বিলাসিতা। পড়াশোনা শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হওয়াই তার প্রথম প্রেম, এই মুহূর্তের একমাত্র অগ্রাধিকার। 

পায়েলকে আঘাত দেওয়ার কোন অভিপ্রায় বিনয়ের ছিল না বরং ওই দিনের পর থেকে কলেজের বাকী দিনগুলোতে অত্যন্ত সচেতন ভাবে, সংবেদনশীল ভাবে একান্ত প্রয়োজনে ও পায়েলের সাথে কথাবার্তা বলত। কিন্তু ওই যে, কলেজের সবুজ পরিবেশ! অবধারিতভাবে, নিজের অজান্তেই গুণমুগ্ধের প্রতি অনুচ্চারিত দূর্বলতা জন্ম নেয়।

কলেজে ভালো রেজাল্ট করে ইউনিভার্সিটিতে যাওয়া এবং দু'বছর বাদে ফিরে এসে আর পায়েলের খোঁজ পাওয়া যায়নি। কলেজ শেষে ম্যানেজমেন্ট পড়তে নাকি কোলকাতা গিয়েছিল, আর তারপরের খবর ছেলে বন্ধুরা কেউ জানে না। সহপাঠী মেয়েদের কাউকে আর কিছু জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে হয়নি। আচ্ছা, ওই সাময়িক বাধ্যবাধকতা, তার মনের ভাব কি ও সামান্যও বুঝতে পারেনি! সব উদাসীনতা কি সত্যিই উদাসীনতা! একটু অপেক্ষা করা যেত না!

সেই পায়েলের সাথে প্রায় পনেরো বছর বাদে আবার ফোনালাপ! ওর গলার স্বর শোনার পর অনেক কষ্ট করে উত্তর দিল- 'আমি বিনয়। কলেজের গ্রুপে অজানা নম্বর দেখে কে জানার জন্য ফোন করেছিলাম।' আবার উভয় প্রান্তে খানিক নৈ:শব্দ। তারপর জানা গেল স্বামী, সন্তান সহ ও এখন ওড়িশার জাজপুরে থাকে। তারও পরে, কথা শেষ করার আগে বিনয় বলেছিল- 'নম্বরটা সেভ করে রাখিস, কথা হবে।'

তারপর তিস্তা, গঙ্গা, বালাসোর, মহানদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। দু'জনার হাজারো, লাখো কথা হয়েছে এবং বিনয় আগুনের প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করেছে। সময়ের চাকা এখন উল্টো ঘুরছে, সেদিনের উদাসীন বিনয় তুমুল আবেগে ওকে রাজী করিয়েছে কোলকাতায় আসতে, একাই আসতে। ওর সাথে দেখা হবে ভাবতেই রোমাঞ্চ কিন্তু কোথাও যেন কি একটা বাঁধছে। নিজেকে ঠিক ওই সিরিয়ালের লোকটার মতোই মনে হচ্ছে কেন!

পেছন থেকে মেয়ে এসে জড়িয়ে ধরল- 'বাবা!' সব পরিস্কার হয়ে গেল। পায়েলকে একটা মেসেজ করা দরকার, শেষ মেসেজ। ফোনে, কথায় মনের ভাবনা ঠিকঠাক প্রকাশ করা যায় না। 

'আসিস না। যে বিনয় তোকে মুগ্ধ করেছিল তার স্খলন নিশ্চিত তোর ভালো লাগবে না। অন্যদিকে অনুচ্চারিত ভাবে হলেও যাকে ভালো লেগেছিল, তাকে পঙ্কিলতায় টেনে আনার হঠাৎ দুর্মতি আমার কেন হয়েছিল সেটা আমাকেও অবাক করছে! আর নিজে থেকে যাকে ঘরে এনেছি, যাকে পৃথিবীতে এনেছি তাদের ঠকানো তো পাপ। কি ভয়ংকর বল, তোকেও প্রায় একই পথে টেনে আনছিলাম! অকপট প্রাণখোলা হাসিই তোর ভালো লেগেছিল, ওই হাসি আর সারল্যই না হয় তোর স্মৃতিতে থেকে যাক। সব চাওয়া-পাওয়াও তো আর সবসময় পরিণতি পায় না। অসুস্থ নি:সঙ্গতা বা গ্লানিময় বিনিদ্র রজনীর থেকে অমন অপ্রাপ্তি শতগুণে শ্রেয়।'

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri