যীশু, তোমাকেই বলি.../মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস
যীশু, তোমাকেই বলি...
মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস
"তুমি আমাদের পিতা, পিতা বলে যেন জানি,
তোমায় নত হয়ে যেন মানি,
তুমি কোরোনা কোরোনা রোষ"
মলিনতা ঝেড়ে ফেলে হেঁটে যেতে পারি না কেন! স্বচ্ছ আরো পবিত্র, পাহাড় থেকে ঝরে পড়া ঝর্ণা হয়ে পাহাড়ি নদীর মতো নুড়ি পাথরকে গড়িয়ে নিয়ে চলতে পারছি না, অবশ হয়ে আসছে শরীর, শিরায় শিরায় টান। অজস্র শব্দবন্ধ, কতগুলো জীবন্ত সত্তা, মাটির অসংখ্য উৎপাত সরিয়ে সরিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। তোমার ক্রুশবিদ্ধ ক্ষতস্থান আমার যন্ত্রণার। সেই বালকবেলার ব্যথা। অনুভব। উপলব্ধি করি পৃথিবীর যত দুর্বিষহ অসম্মান যন্ত্রণায় বিদ্ধ হই না কেন, তুমিই শিখিয়েছ 'ক্ষমা'। পথচলার প্রতি ধুলোর ছাপে আঙুল চিহ্ন পড়ে। অপরাধী থেকে সন্ত চিনে নিতে নিতে রাত্রি অবসান হয়। পাখিরা ডেকে ওঠে। ক্ষুব্ধ ভয়াবহ হয়ে ওঠে আমার যাপন কথা।
নারী সত্তা বলে কতখানি অভিনয়ের খোলস ঢেকে দেবে বলো চলতি পথের বিপর্যয় বিপর্যাসগুলো সরিয়ে দিতে!... সে যে চলে গেল...কন্যা সম সেই মেয়ে...প্রতিবাদী কলম আঁচড় পৃষ্ঠা করিয়েছে বার বার, যন্ত্রণা উপশমের গান গাইতে পারিনি। অক্ষর বুকের ভিতর ওঠানামা করেছে, কেবল ব্যথা দেখেছি, নিয়ত দেখি শৈশব থেকে। মায়ের যন্ত্রণা যে ঘোচাতে পারেনি কোনদিন, সে রুখে দাঁড়াবে কি করে! মা র মুখ যখনই মনে পড়ে অপরাধীর মতো লুকিয়ে ফেলি নিজেকে। যৌথ বাড়ির সুন্দরী চাকুরিরতা কোনও কন্যার কষ্টগুলো দমচাপা নিভু নিভু উনুনের আগুন হয়ে থাকে নিয়ত, আমাকে ছোট থেকে শেখানো হ'ত, 'তুই এবাড়ির' 'তোর মা নয়'। তুই উদার পিতৃমুখী, এবাড়ির আভিজাত্য, রক্ত বহন করিস। ফলত: মার কষ্টগুলো নিয়ে কোন বোধ তৈরি হতে দেরি হল ঈশ্বর!শাসন তর্জন তাঁর বড় হয়ে ওঠে, অদ্ভুত আকাশের মতো মন তার উদার হাসির ভোরের কলতান চোখে পড়েনি। তুমি সব জানো। ক্ষমা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছ তুচ্ছ উপেক্ষিত সঙ্কুচিত পৃথিবীর মানুষের প্রতি। যত অন্যায় অপরাধ, অপরাধীকে উন্মুক্ত করে নিজস্ব কায়দায় বাড়তে দেওয়ার শিক্ষাকে তুমি ক্ষমা করেছ? মনে মনে কতবার তোমাকে ডেকেছি, এখনো ডাকি অহরহ। করুণাঘন সে চোখদুটো কখন আমার সমস্ত ঈশ্বরের চোখে একাকার হয়ে যায়।.. গোয়া থেকে ভাইজাক...সর্বত্র তোমার করুণাময় যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখ, কখন সমস্ত ব্যথা ভুলিয়ে দিয়ে উদার ভালোবাসার পবিত্র মুখ হয়ে যায়। তোমার রক্তধারা তখন পবিত্র গঙ্গা।
বুদ্ধদেবের অর্ধনিমীলিত চোখ আমি তোমার করুণা দৃষ্টিতে মিলিয়ে নিই। তুলে রাখি আমারই ভ্রমর কৌটোয় যত্ন করে।
ঘুম নেই। ঘুম থাকে না আজকাল। বড় ভয়ঙ্কর দিন এগিয়ে আসছে সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জনের মতো।ধ্বংসের বাদ্য বেজেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের, সে রেশ কিভাবে গড়িয়ে গড়িয়ে অন্ত:সলিলা ফল্গুর মতো মাটিকে উত্তপ্ত করছে। আমি আমরা অপরাধ করছি বার বার। ভালোবাসার ছলনা করছি। ভালো চৌখশ শব্দের আলাপ চলেছে রাত্রিদিন। সকালের ভৈরব থেকে দুপুরের বৃন্দাবণীসারং হয়ে সন্ধের পূরবী রাগিনীতে হাওয়া হয়ে এসে পড়ে পাখিরা। রাত গভীর গভীরতর। এ নির্জনেই তো একরাশ অন্যায় অপরাধ তোমার পায়ে নামিয়ে দেওয়া যায়। আমায় ক্ষম হে ক্ষম।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴